

মাদক চোরাচালানে এক সময়ের আলোচিত এলাকা টেকনাফকে পেছনে ফেলে এখন শীর্ষস্থানে উঠে এসেছে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা। প্রতিনিয়ত সীমান্ত ঘেঁষা এই অঞ্চল দিয়ে প্রবেশ করছে ইয়াবার বিশাল চালান। এ অঞ্চলে মিয়ানমার থেকে ইয়াবা পাচারে গড়ে উঠেছে সংঘবদ্ধ চক্র।
সম্প্রতি ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু সীমান্তে ঘটে গেছে এক চাঞ্চল্যকর ইয়াবা লুটের ঘটনা। তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, স্থানীয় ৭ যুবকের সক্রিয় অংশগ্রহণে ১ লাখ ৮০ হাজার পিস ইয়াবার একটি চালান লুট হয়েছে।লুটে জড়িতরা হলেন—হেডম্যানপাড়ার রাইঅং তঞ্চঙ্গ্যার ছেলে টিএনও (২৫),অচিংদা তঞ্চঙ্গ্যার ছেলে অংকিও তঞ্চঙ্গ্যা (২৫),সাক্কাওয়ালার ছেলে মংলার (৩৫),বারিক্কার তঞ্চঙ্গ্যার ছেলে পুলাইয়া (২০),বাঁশবাগান পাড়ার জাহিদ আলম ওরফে বুমচি জাহেদের ছেলে রবি আলম (২৬),ঘোনা পাড়ার ওমর হামজার ছেলে আব্দুর রহমান (১৭) একই এলাকার আব্দুর রহিম ওরফে বাপ্পি (২৩)
২১ সেপ্টেম্বর রাত আনুমানিক ৮টার দিকে ঘুমধুম সীমান্তের ৩৫ নম্বর পিলারের ওপারে মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীকে হটিয়ে আরাকান আর্মি কর্তৃক দখলকৃত একটি চৌকি থেকে ২০ কার্ড, অর্থাৎ আনুমানিক ২ লাখ পিস ইয়াবা বুঝে নেয় স্থানীয় ওই যুবকরা। পরে চৌকির নিচে হেডম্যান পাড়ায় চালানটি নিয়ে আসে তারা।
এদের মধ্যে টিএনও নামের যুবক উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “সব কার্ড মালিকের কাছে বুঝিয়ে দিতে না পারলে বড় ক্ষতি হবে”। এরপর পরামর্শ করে ইয়াবাগুলো নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
ভাগবাটোয়ারা: তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, টিএনওসহ ৪ জন ৪ কার্ড (৪০ হাজার পিস), আর রবি আলম, আব্দুর রহিম বাপ্পি, আব্দুর রহমান ও এক যুবক নয়ন ১৫ কার্ড (১ লাখ ৫০ হাজার পিস) ভাগ করে নেয়। পরবর্তীতে বিজিবি তৎপরতা শুরু করলে তারা ঘোনা পাড়ার একটি বাঁশঝাড়ে ২ কার্ড (২০ হাজার পিস) ফেলে পালিয়ে যায়। বিজিবি ওই পরিমাণ ইয়াবা উদ্ধার করে।
বাকি ১৩ কার্ডের মধ্যে রবি আলম তার পরিবারের কাছে ২০ হাজার পিস জমা দিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আত্মগোপন করে। পরে কৌশলে সেগুলো ক্যাম্পে নিয়ে যায়। অপরদিকে, আব্দুর রহিম ও আব্দুর রহমান ৪টি কার্ড (৪০ হাজার পিস) মাটির নিচে পুতে রাখে এবং বাকি ৭টি কার্ড অন্যত্র লুকিয়ে রাখে।
এদিকে স্থানীয়দের মুখে শোনা যাচ্ছে, লুকিয়ে রাখা ৭টি কার্ড স্থানীয় দুই নারী—নুনাইয়ার স্ত্রী এবং নুর নাহার (৪৫), স্বামী আনু ফকির—তাদের আয়ত্তে নিয়ে নেয়।
মাদক বেচাকেনা ও আরাকান আর্মির সংশ্লিষ্টতা
সূত্র জানায়, তঞ্চঙ্গ্যা যুবকরা পরে ইয়াবাগুলো চ্যাংচিঅং এর ছেলে মুংসিও’র কাছে জমা দেয় এবং হোয়াইক্যং এর লম্বাগুনা এলাকায় পালিয়ে যায়। ২ দিন পর মুংসিও-ও এলাকা ছেড়ে পালায়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সে ফিরে এসে পালিয়ে থাকা তঞ্চঙ্গ্যা যুবকদের জন্য ২০ হাজার পিস ইয়াবা পাঠায় এবং বাকি চালান খুচরা ও পাইকারি হিসেবে বিক্রি করতে থাকে।
এমনকি রাতে আরাকান আর্মির সদস্যরা হেডম্যানপাড়ায় এসে ইয়াবার সন্ধান করছে বলেও গুঞ্জন উঠেছে।
পরিবারের বক্তব্য ও পুলিশের অবস্থান
তুমব্রু ঘোনা পাড়ার জড়িত দুই যুবকের পিতা আমির হামজা জানান, “ঘটনার সময় আমি সাতক্ষীরায় ছিলাম। ফিরে এসে বিষয়টি জানতে পারি। আমার বড় ছেলে এসবের সাথে জড়িত না, ছোট ছেলে আছে। তার সাথে একবার কথা হয়, সে জানায় মাটির নিচে ৪ কার্ড রেখেছে, কিন্তু কোথায় রেখেছে তা বলেনি”।
ঘুমধুম তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ জাফর ইকবাল জানান, “খবরটি শুনেছি, বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নাইক্ষ্যংছড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ মাসরুরুল হক বলেন, “এ বিষয়ে এখনো আমাদের কাছে কোনো ধরনের তথ্য আসেনি। তথ্য পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
স্থানীয়দের উদ্বেগ: স্থানীয় সচেতন মহল বলছে, এইভাবে সীমান্তবর্তী এলাকায় ইয়াবা বাণিজ্য চলতে থাকলে যুব সমাজ ধ্বংসের পথে যাবে। তারা প্রশাসনের প্রতি দ্রুত ও কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।

পাঠকের মতামত