প্রকাশিত: ১৪/১১/২০১৬ ৭:৩৭ এএম
এই মুহূর্তে মাঠের আন্দোলনের কর্মসূচির চেয়ে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন ও আগামী জাতীয় নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টির ওপরই বেশি জোর দিচ্ছে দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি। তাই সরকারের কঠোর অবস্থানের পরও বিএনপি আপাতত কোনো হটকারী রাজনৈতিক কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত হতে চাইছে না। ৭ নভেম্বর বিপ্লব ও সংহতি দিবস উদযাপন উপলক্ষে বিএনপি ওইদিন রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার ঘোষণা দেয়। কিন্তু সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপিকে সমাবেশ করার অনুমতি দেয়নি প্রশাসন। পরবর্তী সময়ে বিএনপি তাদের দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করার অনুমতি চায়। প্রথমে ৯ ও পরে ১৩ অক্টোবর সমাবেশ করার অনুমতি চায়। সর্বশেষ গতকালও বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দেয়নি ডিএমপি। সমাবেশকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট রাজনৈতিক পরিস্থিতির কড়া প্রতিক্রিয়া দেখায়নি বিএনপি। দলটি সমাবেশ করতে না দেয়ার প্রতিবাদে আজ সোমবার সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে।
সরকারের এমন কঠোর অবস্থানের সমালোচনা করে বিএনপি নেতারা বলছেন, বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে বারবার আবেদন করার পরও সরকার আমাদের রাজধানীতে একটি শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে অনুমতি দেয়নি। অসৎ উদ্দেশ্য সাধনে সরকার আমাদের সংঘাতের পথে ঢেলে দিতে চাইছে। কিন্তু বিএনপি সরকারের ফাঁদে পা দেবে না। বিএনপি নেতারা জানান. আমাদের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে একটি গ্রহণযোগ্য নতুন জাতীয় নির্বাচন আদায় করা। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে বিএনপি কাজ করছে। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন ও আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে একটি রূপরেখা চূড়ান্ত করছে। এ অবস্থায় বিএনপিকে কৌশলে সরকার সংঘাতের পথে নিতে চাইছে।    বিএনপির এক নীতি নির্ধারক মানবকণ্ঠকে বলেন, আমরা মনে করি সরকার অপকৌশলের আশ্রয় নিয়ে মানুষের দৃষ্টি সরিয়ে ফাঁকা মাঠে  তাদের পছন্দ মতো নির্বাচন কমিশন গঠনের পাঁয়তারা করছে। এ জন্যই একটি সমাবেশ নিয়ে সরকারের এত বাড়াবাড়ি। ওই নেতা বলেন, কিন্তু বিএনপি আপাতত সংঘাতের রাজনীতিতে যাবে না। বিএনপির এই মুহূর্তে প্রধান লক্ষ্য সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করা। কারণ বিএনপি মনে করে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন জরুরি। বিএনপি নেতারা জানান, তাদের ভবিষ্যৎ রাজনীতির সব কর্মকৌশল চূড়ান্ত করা হচ্ছে আগামী জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে। তাই গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের দিয়ে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনে বিএনপি ভূমিকা রাখতে চায়।
সম্প্রতি বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন ও আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের অবস্থান পরিষ্কার করতে একটি রূপরেখা প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নেন। ভবিষ্যৎ নির্বাচন কমিশন ও জাতীয় নির্বাচন কিভাবে হবে, নির্বাচনের পরিবেশ কেমন থাকবে, নির্বাচনকালীন সরকারসহ সার্বিক বিষয় তুলে ধরে একটি প্রস্তাবনা তৈরি করতে বিএনপি চেয়ারপার্সন দলের কয়েক সিনিয়র নেতাকে দায়িত্ব দেন। জানা গেছে, আগামী জাতীয় নির্বাচন ও নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে বিএনপির নতুন রূপরেখা চূড়ান্ত করতে নেতারা কাজ করছেন। রূপরেখা চূড়ান্ত করতে যারা কাজ করছেন তাদের মধ্যে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন রয়েছেন।
রূপরেখা চূড়ান্ত করছেন এমন এক নেতা মানবকণ্ঠকে বলেন, আগামী নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরেই আমরা আমাদের প্রস্তাবনা তৈরি করছি। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে খুব শিগগিরই তা চূড়ান্ত হয়ে যাবে। এরপর আমরা তা দলীয় চেয়ারপার্সনের কাছে জমা দেব। তিনি চূড়ান্তভাবে অনুমতি দিলেই তা জনগণের সামনে তুলে ধরা হবে।
বিএনপির নতুন প্রস্তাবনায় কী থাকছে তা নিয়েও বেশ কৌতূহল রয়েছে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে। বিএনপির এক নীতি নির্ধারক জানিয়েছেন, বিএনপির প্রস্তাবনায় শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়টিই গুরুত্ব পাবে। সব দলের কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন করতে স্থায়ীভাবে একটি আইনি কাঠামো প্রয়োজন, সে বিষয়েও পরামর্শ থাকবে বিএনপির রূপরেখায়। এমনকি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটিতে কারা থাকবেন। কোন ধরনের ব্যক্তিদের দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে সেটাও তুলে ধরা হবে রূপরেখায়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন মানবকণ্ঠকে বলেন, আমাদের প্রস্তাবনা প্রায় চূড়ান্ত। খুব শিগগিরই আমাদের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে আমাদের রূপরেখা সুবিধা মতো সময়ে জনগণের সামনে তুলে ধরবেন। বিএনপির এই নীতি নির্ধারক বলেন, আপাতত আমরা শুধুই নির্বাচন কমিশন গঠনে প্রস্তাব দেব। কারণ আমরা মনে করি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। আইনি কাঠামোর মধ্যে এনে কিভাবে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন করা যায় তা আমাদের রূপরেখায় তুলে ধরা হবে।
নতুন নির্বাচন কমিশন ও আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিএনপি বারবার আলোচনার প্রস্তাব দিলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আলোচনায় বসার খুব একটা আগ্রহ নেই। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পূর্বেও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া নির্বাচনকালীন সরকার গঠন নিয়ে প্রস্তাব তুলে ধরেছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ বিএনপি চেয়ারপার্সনের প্রস্তাবনা আমলে নেয়নি। এমন বাস্তবতায় ভবিষ্যৎ নির্বাচন ও নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে বিএনপির নতুন প্রস্তাবনা কতটা গুরুত্ব পাবে তা নিয়েও বিভিন্ন মহলে সংশয় রয়েছে। ফলাফল যাই হোক বিএনপি ভবিষ্যৎ নির্বাচন ও নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে তাদের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা তুলে ধরবে। তবে বিএনপি আপাতত শুধু নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়টি তুলে ধরেই তাদের প্রস্তাব পেশ করবে। সেখানে নির্বাচনকালীন সরকার ও আগামী নির্বাচনের বিষয়গুলো থাকবে না। নির্বাচন কমিশনের বিষয়ে বিএনপির প্রস্তাবে সরকারের কী অবস্থান তা দেখার পর আগামী নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে দলের ভাবনা তুলে ধরা হবে।

মানবকণ্ঠ

পাঠকের মতামত

মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির আশা বাংলাদেশ-গাম্বিয়ার

রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে করা মামলার দ্রুত নিষ্পত্তিতে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশ ও গাম্বিয়া। ...

কারামুক্ত হলেন মামুনুল হক

হেফাজতে ইসলামের সাবেক কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক কারামুক্ত হয়েছেন। শুক্রবার (৩ মে) সকাল ...

সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী উখিয়ায় হবে উন্মুক্ত কারাগার, শিগগির নির্মাণ শুরু

উন্নত দেশের ন্যায় বাংলাদেশে উন্মুক্ত কারাগার নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ...