প্রকাশিত: ১৬/০৬/২০১৭ ১০:১৮ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ৪:২৫ পিএম

উখিয়া নিউজ ডেস্ক::
বঙ্গোপসাগরের কক্সবাজার উপকূলের ২০ কিলোমিটারের পর থেকে সাগরে বাংলাদেশ বেতার কেন্দ্রের ফ্রিকোয়েন্সি (তরঙ্গ) নেই। এতে অনেক সময় গভীর সমুদ্রে থাকা জেলেদের কাছে দুর্যোগের সতর্কবার্তা পৌঁছায় না। ফলে ঘূর্ণিঝড়, নিম্নচাপসহ নানা দুর্যোগের কবলে পড়ে ট্রলারডুবির (যন্ত্রচালিত নৌকা) ঘটনায় জেলেদের হতাহতের ঘটনা ঘটছে।

গত রোববার ও সোমবার দুদিনে কক্সবাজার ও টেকনাফে চারটি ট্রলার ডুবে ১৮ জন জেলে নিখোঁজ আছেন। এর আগে গত ৩০ মেঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র কবলে পড়ে চারটি ট্রলারডুবির ঘটনায় এখনো ৯১ জন জেলে নিখোঁজ রয়েছেন। ঘূর্ণিঝড়ের পর উপকূলে ভেসে আসে চার জেলের মরদেহ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সঠিক সময়ে জেলেদের কাছে দুর্যোগের বার্তা পৌঁছানো গেলে দুর্ঘটনার সংখ্যা কমানো যেত।

কক্সবাজার ট্রলার মালিক, জেলে ও স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপকূল থেকে বেশি দূর বেতারের ফ্রিকোয়েন্সি না থাকায় অনেক ট্রলারেই রেডিও রাখা হচ্ছে না। রেডিও না থাকায় অনেক সময় উপকূলের কাছাকাছি থাকা নৌকা-গুলোর জেলেরাও দুর্যোগের বার্তা পাচ্ছেন না। গত রোববার রাতে নিম্নচাপ ও ঝোড়ো হাওয়ার মধ্যে দিয়ে সমুদ্র থেকে ফেরার সময় তীরের এক কিলোমিটার আগে ১৪ জন জেলেকে নিয়ে ডুবে যায় মায়ের দোয়া নামের একটি মাছ ধরা ট্রলার। ওই দুর্ঘটনায় উদ্ধার পাওয়া মাহবুবুল হক নামের একজন জেলে জানান, তাঁরা সাগরে নিম্নচাপের কথা জানতেন না।

কক্সবাজার বেতার কেন্দ্র সূত্র জানায়, বর্তমানে এ কেন্দ্রে দুটি ট্রান্সমিটার আছে। একটি ১০ কিলোওয়াটের ‘এফএম’ ট্রান্সমিটার ও আরেকটি ১০ কিলোওয়াটের ‘এএম’ ট্রান্সমিটার। এফএম ট্রান্সমিটারের ফ্রিকোয়েন্সি এএম ট্রান্সমিটারের তুলনায় কম থাকে। কক্সবাজারের এএম ট্রান্সমিটারটির ফ্রিকোয়েন্সি ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত যাওয়ার কথা। গভীর সমুদ্রে থাকা জেলেদের কাছে বেতারের অনুষ্ঠান ও বার্তা এএম ট্রান্সমিটারের মাধ্যমেই পৌঁছানোর কথা। কিন্তু ট্রান্সমিটারটি নড়বড়ে হওয়ায় এটি আড়াই কিলোওয়াটের বেশি চলে না। ফলে সমুদ্রে ২০ কিলোমিটার পরে এই ফ্রিকোয়েন্সি পাওয়া যাচ্ছে না। এএম ট্রান্সমিটারে প্রচারিত অনুষ্ঠান শুধু রেডিওতেই শোনা যায়।

২৪ বছর ধরে কক্সবাজারের গভীর সমুদ্রে মাছ ধরছেন আবদুল হামিদ (৫৫) নামের এক জেলে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সাত-আট বছর আগেও ৪০-৫০ কিলোমিটার দূরে সমুদ্রে রেডিওতে দুর্যোগের সংকেত বাজত। সেই সংকেত পেয়ে জেলেরা গভীর সাগর থেকে কূলে ফিরে আসতেন। এখন অল্প দূরত্বেই সংকেত পাওয়া যায় না। বেশির ভাগ ট্রলারেও এখন রেডিও থাকে না।

কুতুবদিয়া উপজেলার উত্তর ধুরুং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহরিয়ার চৌধুরী বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোরার কবলে পড়ে এই ইউনিয়নে দুটি ট্রলারডুবির ঘটনায় এখনো ১৫ জন জেলে নিখোঁজ রয়েছে। চারটি ট্রলারের ৩০ জন জেলেকে কয়েক দিন আগে নৌবাহিনীর সদস্যরা উদ্ধার করেছেন। ট্রলারগুলোতে রেডিও ছিল না।

কক্সবাজার ফিশিং বোট মালিক সমিতির সভাপতি মুজিবুর রহমান বলেন, জেলায় মাছ ধরার ট্রলার আছে ছোট-বড় প্রায় ৬ হাজার। কিন্তু ৯৫ শতাংশ ট্রলারে রেডিও নেই। মুঠোফোনেও বেতারের দুর্যোগবার্তা শোনা যায় না। এ কারণে ট্রলারডুবি ও জেলেদের প্রাণহানির ঘটনা বাড়ছে। ২০১৬ সালেও ছয়-সাতটি ট্রলারডুবির ঘটনায় শতাধিক জেলের মৃত্যু হয়েছিল।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, দুর্যোগের সময় গভীর সমুদ্রে থাকা জেলেদের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে বাংলাদেশ বেতার। কিন্তু কক্সবাজার বেতার কেন্দ্রের বর্তমান ফ্রিকোয়েন্সি মাত্র ১০ কিলোওয়াট। এটি টেকনাফ উপজেলার স্থলভাগেই পৌঁছে না। অথচ টেকনাফের দক্ষিণে আরও ৫০-৬০ কিলোমিটার দূরের সমুদ্রেও জেলেরা মাছ ধরেন। কিন্তু বেতারের ওই পর্যন্ত ফ্রিকোয়েন্সি না থাকার কারণে জেলেরা দুর্যোগের বার্তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

জেলা প্রশাসক জানান, কক্সবাজার বেতার কেন্দ্রের ফ্রিকোয়েন্সি ন্যূনতম ১০০ কিলোওয়াট বাড়ানোর জন্য তিনি গত ৪ জুন মন্ত্রী পরিষদ সচিব বরাবরে ফ্যাক্সবার্তা পাঠিয়েছেন।

কক্সবাজার বেতার কেন্দ্রের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, এএম ট্রান্সমিটারের ফ্রিকোয়েন্সি বাড়ানো গেলে গভীর সমুদ্রে থাকা জেলেরা উপকৃত হবেন। সুত্র:: প্রথম আলো

পাঠকের মতামত