প্রকাশিত: ২৯/০২/২০২০ ৯:৩১ এএম

রাসেল চৌধুরী,মানবজমিন::
কক্সবাজারে ইয়াবাসহ জেলা ছাত্রলীগ নেতা ও নারীসহ স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা গ্রেপ্তারের ঘটনা এখন টক অব দ্য টাউন। স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা কাজী রাসেল এক মন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে আর ছাত্রলীগ নেতা ফয়সাল আবদুল্লাহ জেলা ছাত্রলীগ সভাপতির ঘনিষ্ঠজন পরিচয় দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কক্সবাজারের অপরাধ জগৎ নিয়ন্ত্রণ করে আসছিল। অপকর্মের প্রত্যেকটি শাখায় রয়েছে তাদের বিচরণ। চাঁদাবাজি, দখল, নারী, মাদক, জিম্মি করে টাকা আদায় ছিল তাদের নিত্যদিনের কর্ম। তাদের হুকুম মেনে চলাই ছিল যেন অঘোষিত আইন। কেউ তাদের হুকুম না মানলে নেমে আসে নির্যাতনের স্টিম রোলার। দুজনেরই রয়েছে টর্চার সেল। সরকারের দুই মেয়াদে দলীয় পদ-পদবিকে ব্যবহার করে দিনদিন বিস্তৃত হতে থাকে তাদের অপরাধের সম্রাজ্য।

তারা এতোই বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলেন যে, দিনে দুপুরে প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে যে কারো রক্ত ঝরানো তাদের জন্য মামুলি ব্যাপার ছিল। ক’দিন আগেও যারা ছিলেন অসীম ক্ষমতাধর, অপরাধ জগতের নিয়ন্ত্রক, তাদের এমন পরিণতিতে হঠাৎ করে পাল্টে গেছে দৃশ্যপট। যাদের ভয়ে তটস্থ থাকতো ব্যবসায়ী, সাধারণ মানুষ, তারাই আজ উল্লসিত, আনন্দিত।
কক্সবাজার শহর ও হোটেল-মোটেল জোনের মূর্তিমান আতঙ্ক স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা কাজী রাসেল ও জেলা ছাত্রলীগ নেতা ফয়সাল আবদুল্লাহ এখন কারাগারে। অপরাধ জগতের উঠতি দুই কিং গ্রেপ্তার হওয়ায় ভুক্তভোগীরা খুশি হলেও তাদের মধ্যে রয়ে গেছে আতঙ্কের ছাপ। আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে আবারো নির্যাতন চালাবে তাদের ওপর এ ভয়ে মুখ খুলছে না কেউ। কাজী রাসেলের আটকের পরপরই সৈকত পাড়ার শোরগোল কমেছে। আলোচিত কটেজগুলোতে পতিতা কারবার প্রায় বন্ধ রয়েছে। ফলে এলাকাটিতে আগের মতো পতিতা এবং খদ্দেরদের আনাগোনাও নেই। কাজী রাসেলের অপরাধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গী শাহীন, এরশাদ, আতাউল্লাহ, মাসুদ, দেলোয়ার, রুবেল এবং বর্মাইয়্যা জমিরও গা ঢাকা দিয়েছে। গত দুদিন কেউ তাদের সৈকত এলাকায় দেখেননি। যে বাগানবাড়ি থেকে কাজী রাসেলকে আটক করে পুলিশ, সেটিও এক বছর আগে জোর করে দখল করা। পাহাড়ের কোল ঘেঁষে দখল করা জায়গাটি সৈকত পাড়ার একদম দক্ষিণে। ফলে এলাকার বাসিন্দা ছাড়া সেখানে সাধারণ মানুষের যাতায়াত প্রায় নেই। সেখানেই জায়গা দখল করে একটি সেমিপাকা ঘর নির্মাণ করে সৈকত পাড়ার অঘোষিত কিং কাজী রাসেল। এরপর থেকে সেই ঘরটি কাজী রাসেলের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের স্থান হিসেবে পরিচিতি পায়। পুলিশের হাতে আটকের এক মাস আগে থেকেই ঘরটিতে নিয়মিত বসতো জলসার আসর। মাদক আর পতিতা ছিল জলসার প্রধান আকর্ষণ। আটককৃত নারী মীমও এক মাস ধরে রাসেলের সঙ্গিনী হিসেবে সেই ঘরে নিয়মিত রাত কাটাতো। আর ঘরটি পাহারাদারের দায়িত্ব পালন করে স্থানীয় লায়লা প্রকাশ লালুনি নামে এক নারী। পতিতা ভাড়া দেয়া রাসেলের আয়ের অন্যতম উৎস। তবে, পতিতা ব্যবসাকে কেন্দ্র করে ইয়াবা বিক্রি করেও সে বিপুল পরিমাণ অর্থ আয় করে। সৈকত এলাকায় তার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে প্রায় অর্ধশত কটেজ। যে কটেজগুলোতে পতিতাবৃত্তি এবং ইয়াবা কারবার চালায়। ভরা মৌসুমে শুধু একটি কটেজ থেকেই তার দৈনিক আয় ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। পাশাপাশি সৈকতের প্লট এবং ফ্ল্যাট দখল থেকেও বিপুল পরিমাণ অর্থ আসে তার ভাণ্ডারে। উল্লিখিত আয় ছাড়াও দেশের গুরুত্বপূর্ণ এবং রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে হোটেল-মোটেলে চাঁদাবাজিও তার আয়ের একটি উৎস। সাধারণ মানুষ, হোটেল, গেস্ট হাউজ এবং কটেজ ব্যবসায়ীদের কাছে কাজী রাসেল একটি আতঙ্কের নাম। এই অপরাধীরও রয়েছে একদল ভক্ত। সৈকত পাড়ার উঠতি বয়সের বিপথগামী যুবকরা তাকে খুব সমীহ করে চলে। কিছু চাওয়ার আগেই রাসেল তাদের মনোভাব বুঝতে পারে। দুই হাত মেলে টাকা দিতে কার্পণ্য করে না। ফলে কাজী রাসেল তাদের খুব পছন্দের। একইভাবে জেলা ছাত্রলীগ সদস্য ফয়সাল আবদুল্লাহ ছিল সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীদের কাছে মূর্তিমান আতঙ্ক। চাঁদাবাজি, দখলবাজি, লুণ্ঠন, মাদক কারবারসহ এমন কোনো অপকর্ম নেই, যার সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা নেই। সর্বশেষ গত সোমবার রাতে অভিযান চালিয়ে লুণ্ঠিত বিপুল পরিমাণ ইয়াবাসহ ফয়সাল আবদুল্লাহ ও অপর দুই জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা জানায়, ফয়সালের সহযোগিতায় লুণ্ঠিত ইয়াবাগুলো বিকিকিনির চেষ্টা করা হচ্ছিল এবং অপর পলাতক আসামি মিজানের যোগসাজশে মিয়ানমার থেকে অবৈধ পথে ইয়াবাগুলো কক্সবাজারে আনে। কক্সবাজার শহরের বিভিন্ন এলাকায় অপকর্ম চালাতেন ফয়সাল। এ ছাড়াও জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ইশতিয়াক আহমদ জয়ের বিশ্বস্ত কাছের জন পরিচয় দিয়ে ফয়সাল প্রশাসনসহ সবখানে দাপট চালাতেন। বিভিন্ন সময় অত্যাধুনিক অস্ত্র, ওয়াকিটকি এবং বিদেশি কুকুরসহ তার বেশ কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। যা নিয়ে ট্রল হলেও কেউ মুখ খোলার সাহস পায়নি।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. ইকবাল হোসাইন বলেন, অপরাধ করে কেউ পার পাবে না। আজ হোক, কাল হোক সবাইকে কৃতকর্মের ফল ভোগ করতে হবে। তিনি জানান, ইতিমধ্যে শহরের উঠতি সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে। যে যত প্রভাবশালীই হোক না কেন, কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। যা ইতিমধ্যে প্রমাণ করেছে পুলিশ।

পাঠকের মতামত

কারাগার থেকে বের হয়ে আবারো রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অপরাধ ও ইয়াবা নিয়ন্ত্রণে নবী হোসেন গ্রুপ

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আলোচিত নবী হোসেন কারাগার থেকে বের হয়ে ফের বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তার বাহিনীর ...

শিবিরের প্যানেলে জায়গা পেয়ে যা বললেন সর্ব মিত্র চাকমা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে অন্তর্ভুক্তিমূলক প্যানেল ঘোষণা করেছে ইসলামী ছাত্রশিবির। ...