প্রকাশিত: ২৮/০৭/২০১৮ ৮:৫৫ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ১২:১০ এএম


আজিম নিহাদ,কক্সবাজার ::
খলিলুর কোন দাগী অপরাধী নয়। অপরাধ একটাই, তিনি বাংলাদেশি। বাংলাদেশি হওয়ার অপরাধে মৃত্যুর ঠিক আগ মূহুর্তেও চিকিৎসা মেলেনি তার। স্বজনেরা জানতেন, খলিলুরের সময় আর বেশি নেই। তাই তাকে বাঁচাতে ডাক্তারের পায়ে পড়ে নানা আকুতি মিনতি জানান, কিন্তু ডাক্তারের মন গলেনি। শেষ পর্যন্ত চিকিৎসা না পেয়ে পরপারে পাড়ি জমান খলিলুর।

ঘটনাটি বাংলাদেশের বাইরে কোথাও ঘটেনি। এমন নির্দয় ঘটনাটি ঘটেছে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার কুতুপালং এলাকায়। এটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।

খলিলুরের পুরো নাম খলিলুর রহমান (৪০)। তিনি কুতুপালং গ্রামের পূর্বপাড়ার মীর কাশেমের ছেলে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, শুক্রবার (২৭ জুলাই) রাত ৮ টায় বোনের বাড়িতে যাওয়ার সময় কুতুপালং বাজারের পাশে পূর্বপাড়া রাস্তায় হঠাৎ স্ট্রোক করে মাটিতে লুটে পড়েন তিনি। এরপর তাকে দ্রুত স্থানীয় কুতুপালং বাজার সংলগ্ন এমএসএফ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এসময় হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে দ্রুত চিকিৎসা না দিয়ে স্বজনদের উদ্দেশ্যে নানা প্রশ্ন জুড়ে দিয়ে বসেন। এক পর্যায়ে খলিলুর বাংলাদেশি নাগরিক হওয়ার বিষয়টি জানার পর সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা করতে অস্বীকৃতি জানান ওই চিকিৎসক। প্রায় আধঁঘণ্টা আকুতি মিনতি করার পরও খলিলুরকে চিকিৎসা সেবা দিতে রাজি হননি ওই চিকিৎসক। এক পর্যায়ে সবাইকে হাসপাতাল থেকে গলাধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হয়।

শেষ পর্যন্ত তাকে (খলিলুর) উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার জন্য এমএসএফ এর অ্যাম্বুলেন্সটি দেওয়ার অনুরোধ করে উপস্থিত খলিলুর রহমানের স্বজন ও স্থানীয়রা। কিন্তু “কোন বাংলাদেশি নাগরিককে এমএসএফ হাসপাতালে চিকিৎসা বা অন্যান্য সেবা দেওয়া হয় না” বলে জানিয়ে দেন কর্তব্যরত ওই চিকিৎসক।

পরে অটোরিক্সা (সিএনজি) যোগে উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পথে রাত ৯টার দিকে খলিলুর রহমান অটোরিক্সায় মৃত্যুর কুলে ঢলে পড়েন।

খলিলুর রহমানের ছোট ভাই জাফর আলম জানান, স্ট্রোক করার সঙ্গে সঙ্গে পার্শ্ববর্তী এমএসএফ (হল্যান্ড) হাসপাতালে নিয়ে যায়। ওই সময় এমএসএফ হাসপাতালে দায়িত্বরত ছিলেন জিয়া নামে এক ডাক্তার। তিনি (ডাক্তার জিয়া) আমাদের প্রথমে রোহিঙ্গা মনে করে জরুরি বিভাগে নিয়ে যান। পরে চিকিৎসাসেবা শুরু করার আগে জানতে চান, খলিলুর রোহিঙ্গা কিনা। উত্তরে খলিলুর বাংলাদেশি নাগরিক হওয়ার বিষয়টি জানার পর চিকিৎসা করতে রাজি হননি ওই চিকিৎসক। পরে অনেক আকুতি মিনতি করেও রাজি করাতে পারিনি। এক পর্যায়ে শ্বাস-প্রশ্বাস সংকটাপন্ন হয়ে পড়ায় অক্সিজেন দেওয়ার জন্য হাতে-পায়ে ধরে অনুরোধ করি। কিন্তু ওই নরপশু ডাক্তার অক্সিজেনটা পর্যন্ত দেয়নি।

তিনি আরও বলেন, এমএসএফ হাসপাতাল থেকে বের করে দেওয়ার সময় উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাদের (এমএসএফ) অ্যাম্বুলেন্সটি দিতে অনুরোধ করি। কিন্তু তাতেও রাজি হয়নি। পরে হাসপাতালে পৌছার আগেই মারা যান খলিলুর। শুধুমাত্র বাংলাদেশি হওয়ার অপরাধে তাঁর ভাই চিকিৎসা পায়নি। তাৎক্ষণিক চিকিৎসা না পাওয়ার কারণে চোখের সামনে ছটফট করে মরতে হয়েছে তাকে (খলিলুর)। এটা কোন ধরণের নির্মমতা?

জাফর আলম বলেন, “আমরা আমাদের ভাইয়ের প্রতি নির্মমতার বিচার চাই। ওই চিকিৎসক নামে কলঙ্ক জিয়ার ফাঁসি চাই।”

এদিকে খলিলুর রহমানের মৃত্যু নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস শেয়ার করেছেন ‘হেলাল উদ্দিন’ নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি। ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, “ কুতুপালং এমএসএফ হাসপাতালে ডাক্তারের অবহেলায় কুতুপালং গ্রামের পূর্ব পাড়ার মীর কাশেমের পুত্র খলিলুর রহমানের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার রাতে স্ট্রোক করেন খলিলুর রহমান(৪০)। তাৎক্ষনিক ভাবে তার স্বজনরা তাকে কুতুপালং এমএসএফ হাসপাতালে নিলে ডাক্তার জিয়া রোগীকে সময়মত চিকিৎসা না দিয়ে রোগীর স্বজনদের সাথে খারাপ আচরণ করে। এমনকি রোগীকে অক্সিজেন পর্যন্ত দেয়া হয়নি। ওই ডা. জিয়া রোহিঙ্গা নাকি বাংলাদেশী জিজ্ঞেস করেন। খলিলুর রহমানের স্বজন বাংলাদেশী বললে তখন কর্তব্যরত ডাক্তার চিকিৎসা না দিয়ে কক্সবাজার নিয়ে যেতে বলেন। রোগীর অবস্থার অবনতি হলে রোগীর স্বজন এমএসএফের অ্যাম্বুলেন্স চাইলে তাও দিতে অস্বীকৃতি জানান। পরে রোগীকে সিএনজিতে করে উখিয়া হাসপাতালে আনার সময় গাড়িতেই মারা যান খলিলুর রহমান। এই অকাল মৃত্যুর দায় নেবে কে? আর এমএসএফ হাসপাতাল কি এর দায় এড়াতে পারে?”

এই স্ট্যাটাসে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ফেসবুক ইউজারেরা। এসব প্রতিক্রিয়া থেকে কিছু পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো। তানভীর শাহরিয়ার নামে একজন মন্তব্য করেছেন, ‘ কতিপয় ডাক্তারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে কঠোর আন্দোলন দেওয়া হবে।”

রফিকুল ইসলাম রাইসুল লিখেছেন, “ এককাজ করেন ভাইয়া। আমাকে একটা রোহিঙ্গার সার্টিফিকেট দেন। উখিয়া টেকনাফে জন্মগ্রহণ করে আমরা পাপ করেছি।”

মাওলানা আমজাদ হোসাইন লিখেছেন, “যদি রোহিঙ্গাদের লোকাল বাংলাদেশিরা তাদের জায়গা-জমি সব উজাড় করে দিতে পারে, তাহলে এনজিও, ইউএনএইচসিআর বা অন্যান্য সংস্থা গুলো কেন বাংলাদেশিদের সেবা দিতে পারবে না? ”

এম সাহাব উদ্দিন লিখেছেন, “ এই খলিল ভাই খুব ভাল মানুষ ছিলেন এবং আমরা সোদিয়া আরব এক সাথে ছিলাম। আমি এর সঠিক বিচার দেখতে চাই।”

নসরুল কবির কায়েম নিহাদ লিখেছেন, “ রোহিঙ্গা হলে ঠিকই সেবা পেত, আজ বাংলাদেশী রা অবহেলিত।”

জিসু কক্স লিখেছেন, “এমন বিচার হোক, যাতে দ্বিতীয়বার আর না ঘটে।”

এমডি হারুন লিখেছেন, “খুবই জঘন্য ডাক্তার।”

এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে এমএসএফের মুখপাত্র সাজ্জাদ হোসেন উখিয়া নিউজ ডটকমকে এক মেইল বার্তা জানায়, “এমএসএফ বর্তমানে উল্লেখ্য ঘটনা সম্পর্কে বিশদভাবে জানার চেষ্টা করছে। পৃথিবীর যেখানেই এমএসএফ কাজ করে, শুধুমাত্র রোগীর প্রয়োজন অনুসারে এমএসএফ চিকিৎসা দেয়। এবং জাতি, ধর্ম, বর্ণ, রাজনৈতিক অবস্থান নির্বিশেষে এই চিকিৎসা দেয়া হয়। ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে এমএসএফ কক্সবাজারে ৯০০০ এর বেশি বাংলাদেশী মানুষকে চিকিৎসা সহায়তা দিয়েছে। জাতীয়তার উপর ভিত্তিকে করে এমএসএফ কখনোই কাউকে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত করে না।”

পাঠকের মতামত

আজ পহেলা বৈশাখ

আজ রোববার (১৪ এপ্রিল) পহেলা বৈশাখ-বাংলা নববর্ষ। বাংলা বর্ষপঞ্জিতে যুক্ত হলো নতুন বাংলা বর্ষ ১৪৩১ ...

বান্দরবানে যৌথ বাহিনীর অভিযান পরিচালিত এলাকায় ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা

বান্দরবানে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান পরিচালিত রুমা,রোয়াংছড়ি ও থানচি এলাকায় পর্যটকদের ভ্রমণ নিরুৎসাহিত করছে বান্দরবান জেলা প্রশাসন। ...

বাসের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কে দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহত

পটিয়ায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় দুই আরোহী নিহত হয়েছে। নিহতরা হলেন- বোয়ালখালী উপজেলার পশ্চিম গোমদন্ডী এলাকার মোঃ ...