প্রকাশিত: ০২/১০/২০১৭ ৯:৪৬ পিএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ১২:৪৬ পিএম

উখয়া নিউজ ডেস্ক::

দ্য আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) কমান্ডার ইন চিফ আতাউল্লাহ জানিয়েছেন, তারা এই মুহূর্তে রাখাইনে আগুন নিয়ে খেলা করছেন। এজন্য সরাসরি সংগঠনের কর্মী কিংবা কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা তাদের পক্ষে সব সময় সম্ভব হচ্ছে না। রোহিঙ্গা জাতির উদ্দেশে এক সংক্ষিপ্ত অডিও বার্তায় তিনি এসব কথা জানান। আতাউল্লাহর পক্ষ থেকে আরসা’র এক কমান্ডার পরিবর্তন ডটকমকে অডিও বার্তাটি পাঠিয়েছেন।

গত ২৫ আগস্টের পর থেকে রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযানের মুখে দলবল নিয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন আরসা প্রধান।

নিপীড়ক মিয়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রামের ক্ষেত্রে সরাসরি তার নেতৃত্ব না পেয়ে যেসব রোহিঙ্গাকর্মী হতাশ, তাদের উদ্দেশে আতাউল্লাহ এই বার্তা দেন।

তিনি বলেন, ‘তারা (আরসা কর্মী) জিজ্ঞাসা করে- আমরা তাওন (যোগ দেওয়ার) করার আগে আবু আম্মার জুননীর (আতাউল্লাহ’র সাংগঠনিক নাম) আওয়াজ পেতে হবে। আবু আম্মারকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। আমাদের সঙ্গে এক দেড় মিনিট কথা বলতে হবে।’

আরসা প্রধান বলেন, ‘আমি বলব- এটা খুবই ভুল কথা। আমাদের পরিস্থিতি এমন নয় যে, যেকোনো সময় যেকোনো জায়গা থেকে আপনাদের সঙ্গে কথা বলতে পারব। আমরা আসলে আগুন নিয়ে খেলছি। এমন সময় আপনাদের সঙ্গে আমি কিভাবে কথা বলব?’

এরপরই অডিও বার্তার মাধ্যমে তিনি আরসা’র সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করার জন্য দু’জন প্রতিনিধির নাম ঘোষণা করেন। তারা হলেন- সৌদি আরবের আবুল কালাম হায়দারি ও মওলানা নোমান।

অডিও বার্তায় আতাউল্লাহ বলেন, আরাকানে রোহিঙ্গা জাতির ওপর যে নির্যাতন চলছে, এর মধ্যে তাদের মুক্তির জন্য যারা এগিয়ে এসেছেন, তাদের জন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি।

একই সঙ্গে রোহিঙ্গা জাতির প্রতিও তিনি শুকরিয়া জ্ঞাপন করেন।

আতাউল্লাহ আরসা’র সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য প্রতিনিধির নাম ঘোষণা করে বলেন, ‘আরসার পক্ষ থেকে কিছু জিম্মাদার (প্রতিনিধি) নির্বাচিত করেছি। তাদের কাছে তাওন করে কিছু হাসিল করা যাবে।’

তিনি বলেন, ‘বিশ্বের যেকোনো দেশ থেকে এদের (আবুল কালাম হায়দারি ও মওলানা নোমান) সঙ্গে তাওন করা যাবে। আপনারা যেখান থেকেই এদের প্রতি তাওন করেন না কেন, তা নিশ্চিত করে বলতে পারি আমার পর্যন্ত পৌঁছে যাবে।’

আরসা প্রধান বলেন, ‘যদি আপনারা এটাকে গুরুত্ব দিয়ে থাকেন, আম্মারের (আতাউল্লাহ) সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে হবে না।’

এরপরই অডিও বার্তায় কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘যদি কোনো দিন সুযোগ হয়, স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে আপনাদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলব। আশা করছি, আপনারা আমার কথা বুঝতে পেরেছেন। ওয়াসসালামু আলাইকুম।’

উল্লেখ্য, গত ২৪ আগস্ট মধ্যরাতের পর রাখাইনের অন্তত ৩০টি পুলিশ চৌকি ও একটি সেনা ক্যাম্পে আরসা’র যোদ্ধারা প্রবেশের চেষ্টা করে।

পরে জঙ্গি দমনের নামে নতুন করে অভিযান শুরু করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। সেনা অভিযান শুরুর পর এখন পর্যন্ত জাতিসংঘ জানিয়েছে, ৫ লাখের বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এ অভিযানে ৫ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা নিহতের খবর দিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। যদিও মিয়ানমার সরকারের দাবি, নিহতের এ সংখ্যা ৪শ’।

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ওই অভিযানকে ‘জাতিগত নিধন’ হিসেবে বর্ণনা করেছে জাতিসংঘ।

১৯৮২ সালে মিয়ানমার সরকার জাতীয়তা বিষয়ক আইন পাস করে, যেখানে রোহিঙ্গাদের নাগরিক হিসেবে অস্বীকার করা হয়। এরপর থেকেই রাষ্ট্রহীন এই মুসলিম জনগোষ্ঠীকে বিড়াতনে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী কাজ শুরু করে, যা এখনও অব্যাহত রয়েছে।

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) মতে, ১৯৭০ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ১১ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, ভারত এবং গালফ ও এশিয়া প্যাসিফিক দেশগুলোতে শরণার্থী হয়েছেন।

ইউরোপিয়ান কমিশন এক রিপোর্টে বলেছে, ২০১৭ সালের শুরুর দিকেও রাখাইনে আনুমানিক ৮ লাখ রোহিঙ্গা মুসলিমের বসবাস ছিল। কিন্তু, গত ২৫ আগস্ট রাখাইনে মিয়ানমার সেনার অভিযানের পর থেকে সংঘাতে ৫ লাখের বেশি রোহিঙ্গা জীবন বাঁচাতে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন।

বাংলাদেশ সরকারের ধারণা, আর মাত্র ৩ লাখ রোহিঙ্গা মিয়ানমারে রয়েছে। ইতোমধ্যে প্রাণ বাঁচাতে ১৬ লাখের মতো রোহিঙ্গা প্রতিবেশী দেশগুলোতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন।

আর এসব তথ্যের ভিত্তিতে এটা স্পষ্ট, ১৯৭০ সাল থেকে ৮৪ শতাংশের (প্রায় ১৯ লাখ) কাছাকাছি রোহিঙ্গা মুসলিম মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত হয়েছেন। আর মাত্র ১৬ শতাংশ রোহিঙ্গা দেশটিতে রয়েছেন।

সুত্র: পরিবর্তন ডটকম

পাঠকের মতামত