প্রকাশিত: ১৪/০৪/২০১৯ ৭:১৯ এএম

নিজস্ব প্রতিবেদক::
কবিগুরু বৈশাখকে স্বাগত জানিয়ে বলেছিলেন, ‘মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা/ অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা’
আর, বিদ্রোহী কবি কালবৈশাখী ঝড় দেখে গেয়েছিলেন :
‘ তোরা সব জয়ধ্বনি কর,
তোরা সব জয়ধ্বনি কর
ওই নূতনের কেতন ওড়ে কালবোশেখির ঝড়!
তোরা সব জয়ধ্বনি কর।’
অজিত কুমার গুহের ‘নববর্ষের স্মৃতি’ প্রবন্ধে বৈশাখের
বর্ণনায় : ‘ চৈত্রের সংক্রান্তি আসার কয়েক দিন আগে থেকেই আমাদের ঢেঁকিঘরটা মুখর হয়ে উঠতো। নববর্ষের প্রথম দিন ছেলেমেয়েদের হাতে নাড়– মোয়া, ছানার মুড়কি ও সরভাজা দিতে হবে, তারই আয়োজন চলতে থাকতো। বাড়ি থেকে অনেক দূরে শহরের এক প্রান্তে আমাদের ছিল মস্ত একটা খামারবাড়ি। বসন্তেই তাতে ফুল ধরতো। আর এলোমেলো বাতাসে তারই গন্ধ বাড়িময় ঘুরে বেড়াতো। কোনো কোনো দিন কালবোশেখি আসত প্রলয় রূপ নিয়ে। সারাদিন দাবদাহে উত্তপ্ত মাটিকে ভিজিয়ে দিত। কচি কচি আমগুলো গাছ থেকে উঠানের চারদিকে ছড়িয়ে পড়তো আর ভেজা মাটি থেকে একটা সোঁদা গন্ধ নাকে এসে লাগতো। তারপর পুরনো বছরের জীর্ণ-ক্লান্তি রাত্রি কেটে গিয়ে নতুন বছরের সূর্যের অভ্যূদয় ঘটতো।’
আজ পহেলা বৈশাখ । বাংলা বর্ষ ১৪২৬ এর সূচনা। পহেলা বৈশাখ আমাদের এমনই এক উৎসব- যা ধর্ম, সমাজ, বয়স ও বৃত্তির সীমা পেরিয়ে সর্বত্র একাকার। এই উৎসবের মধ্যে মানুষ নিজেকে খুঁজে পায় বৃহত্তরের গ-িকে। বাঙালি জীবনে দীর্ঘকাল ধরে পহেলা বৈশাখের অনুষঙ্গ হচ্ছে ‘হালখাতা’। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে ফসলি কর পরিশোধের আনন্দ প্রকাশ করা এবং ব্যবসার হিসাব ও খাজনা ‘রাজকীয়’ খাতায় হালনাগাদ রাখা। এ উপলক্ষে রাজা-জমিদারকে প্রজারা তাদের সৃজনশীল পণ্য ও সূচিকর্ম উপহার দিত। রাজা-জমিদাররাও প্রজাদের কর রেয়াত ও ইনাম দিতেন।
রাজস্ব আদায়ের সুবিধার্থে সম্রাট আকবরের রাজত্বকালে একটি নতুন সৌর সনের উদ্ভাবন করা হয়। ফসলি সন হিসেবে এই বাংলা সন বাঙালি জীবনে আজও নিয়ে আসে প্রাণের স্পন্দন । মুগল আমলে চৈত্র মাসের শেষ দিন জমিদারের খাজনা আদায়ের শেষ দিন। দরিদ্র কৃষক খাজনা মওকুফ কামনায় তাদের সবচেয়ে জরাজীর্ণ পোশাক পরেই জমিদারের দরবারে হাজির হয়ে পায়ে ধরে খাজনা মওকুফ ভিক্ষা চাইতেন। বিশেষ করে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসলহানি হলে অভুক্ত কৃষকরা জীর্ণ শরীর প্রদর্শনের জন্য গায়ে কোনো কাপড়ই পরতেন না। ভূমিহীন বর্গা চাষীদের জন্য দিনটি ছিল আরো দুর্বিষহ। খাজনা আদায়ের নিপীড়ণ ও বিড়ম্বনা এবং সৃষ্ট তিক্ততা প্রশমনের উদ্দেশ্যে সম্রাট খাজনা আদায়ের পরের দিনটিকে অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তা দিয়ে উৎসবে পরিণত করেন। প্রচলিত অনেক উৎসবকে বাদ দিয়ে আকবর নতুন অনেকগুলো উৎসব চালু করেন। এরই মাঝে নববর্ষের উৎসবটি অন্যতম। চৈত্র মাসের শেষ দিনের মধ্যে খাজনা পরিশোধ এবং এ উপলক্ষে উৎসবের আয়োজন হতো। এতে থাকতো নাচ, গান, যাত্রাপালা, মেলা, গরু ও ঘোড়ার দৌড়, মোরগযুদ্ধ, ষাঁড়ের লড়াই, নৌকা বাইচ ইত্যাদির আয়োজন। বৈশাখের প্রথম দিনে যে উৎসবের ঘনঘটা, তা আসলে কৃষিজীবী বাঙালির যুগ-যুগান্তর ধরে বয়ে আসা জীবনচর্যার অন্যরকম অনুষঙ্গ হিসেবে স্পন্দিত হয়।
মধ্যযুগের বাংলায় দরিদ্র মানুষের জীবনে বৈশাখ আনন্দবার্তা নিয়ে আসত এমন নয়, প্রচ- গরম আর অভাবের মাঝে বেঁচে থাকা গ্রামবাংলার মানুষ তবু খুঁজত প্রাণে প্রাণে যোগ। মঙ্গলকাব্যের কবি মুকুন্দ রামের ‘কালকেতুর উপাখ্যানে’ ফুল্লরার বারমাসিতে এমন এক চিত্র প্রতিফলিত হয়েছে।

পাঠকের মতামত

মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির আশা বাংলাদেশ-গাম্বিয়ার

রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে করা মামলার দ্রুত নিষ্পত্তিতে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশ ও গাম্বিয়া। ...

কারামুক্ত হলেন মামুনুল হক

হেফাজতে ইসলামের সাবেক কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক কারামুক্ত হয়েছেন। শুক্রবার (৩ মে) সকাল ...

সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী উখিয়ায় হবে উন্মুক্ত কারাগার, শিগগির নির্মাণ শুরু

উন্নত দেশের ন্যায় বাংলাদেশে উন্মুক্ত কারাগার নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ...