প্রকাশিত: ২৮/০৭/২০১৮ ৯:৫৮ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ১২:১০ এএম

ডেস্ক রিপোর্ট::
রোহিঙ্গা নিপীড়ন প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতকে (আইসিসি) পুরোপুরি এড়িয়ে চলছে মিয়ানমার। রাখাইন রাজ্য থেকে রোহিঙ্গাদের গণবাস্তুচ্যুতির প্রেক্ষাপটে মিয়ানমারের ওপর আইসিসি বিচারিক ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে কি না সে বিষয়ে প্রকাশ্যে বা গোপনে অভিমত জানানোর সময়সীমা গতকাল শুক্রবার বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় শেষ হয়েছে।
খবর, কালেরকন্ঠ

কিন্তু ওই সময়ের মধ্যে মত জানানো তো দূরের কথা, এসংক্রান্ত আইসিসির চিঠিও গ্রহণ করেনি মিয়ানমার।
কূটনৈতিক সূত্রের দাবি, এখন করণীয় বিষয়ে আইসিসির এক নম্বর প্রি-ট্রায়াল চেম্বারই সিদ্ধান্ত নিতে পারে। ওই আদালতই গত ২১ জুন এক আদেশে মিয়ানমারের কাছ থেকে মতামত জানতে চেয়েছিল। বিচারিক এখতিয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আইসিসির জন্য কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার বাহিনীর গণহত্যা, জাতিগত নিধনযজ্ঞ, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও আন্তর্জাতিক অপরাধ চালানোর জোরালো অভিযোগ উঠেছে। সেই সঙ্গে বিচারের দাবিও জোরালো হচ্ছে।

বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের দ্রুত, নিরাপদ ও স্থায়ী প্রত্যাবাসনের বিষয়ে মিয়ানমারকে চাপ দিয়েছে ভারত। গত বুধবার লোকসভায় এক প্রশ্নের জবাবে ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জেনারেল (অব.) ড. ভি কে সিং এ কথা জানিয়েছেন। ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০১৬ সালের শেষের দিকে এবং ২০১৭ সালের মাঝামাঝি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহিংসতার পরিপ্রেক্ষিতে বাস্তুচ্যুত বিপুলসংখ্যক ব্যক্তির বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার ঘটনায় ভারত অত্যন্ত উদ্বিগ্ন।

জানা গেছে, আইসিসির নির্দেশনা অনুযায়ী এর রেজিস্টারের দপ্তর গত ২২ জুন আদালতের সিদ্ধান্ত ‘নোট ভারবাল’ (কূটনৈতিক চিঠি) আকারে বেলজিয়ামে মিয়ানমার দূতাবাসে পাঠিয়েছিল। কিন্তু ওই দূতাবাস সেই ‘নোট ভারবাল’ গ্রহণ না করায় তা হেগে আইসিসিতে ফিরে গেছে। এরপর ২৮ জুন আইসিসির রেজিস্টারের দপ্তর জাতিসংঘে মিয়ানমারের স্থায়ী মিশনে ‘নোট ভারবাল’ পাঠায়। সেই মিশনও সেটি গ্রহণ করেনি। এর পরপরই রেজিস্টারের দপ্তর বিষয়টি আইসিসিকে জানিয়েছে।

কূটনৈতিক সূত্রগুলোর মতে, আইসিসিতে বিচার এড়াতে আগে থেকেই তৎপর রয়েছে মিয়ানমার। ওই দেশটির কর্মকর্তারা বিভিন্ন সময় বলেছেন, নিরাপত্তা পরিষদে তাঁদের ‘ভেটো’ ক্ষমতাধর বন্ধুরাষ্ট্র চীন আছে। তাই নিরাপত্তা পরিষদ আইসিসিতে মিয়ানমারের বিচারের উদ্যোগ নিলে চীনকে দিয়ে তাঁরা তা ঠেকাতে পারবেন। অন্যদিকে আইসিসির এক প্রসিকিউটর স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে যে উদ্যোগ নিয়েছেন, মিয়ানমার সেটিকেও কার্যত প্রত্যাখ্যান করেছে।

কূটনৈতিক সূত্রে জানা যায়, আইসিসির প্রসিকিউটর ফেতু বেনসুদা রোহিঙ্গা ইস্যুতে রুলিং চেয়ে আবেদন জানানোর পরই মিয়ানমার বিভিন্ন ফোরামে স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, তারা ওই আদালতের বিচারিক এখতিয়ার মানবে না। মিয়ানমারের প্রেসিডেন্টের দপ্তরের গত মে মাসের এক বিজ্ঞপ্তিতেও বলা হয়েছে, আইসিসির সদস্য না হওয়া সত্ত্বেও ওই আদালতে মিয়ানমারের বিচারের উদ্যোগ নেওয়া হলে তা প্রত্যাখ্যান করা হবে।

ফের বিচারের তাগিদ বাংলাদেশের : রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়নকারীদের বিচারের দাবিতে বৈশ্বিক অঙ্গনে সরব রয়েছে বাংলাদেশ। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী গত বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে ধর্মীয় স্বাধীনতাবিষয়ক মন্ত্রিপর্যায়ের সম্মেলনেও রোহিঙ্গা নিপীড়নকারীদের বিচারের আওতায় আনার জোর তাগিদ দিয়েছেন। মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের ঠেলে দেওয়াকে সাম্প্রতিক সময়ের ভয়াবহতম ধর্মীয় ও জাতিগত নিধনযজ্ঞ হিসেবে অভিহিত করেন তিনি। ওই সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও।

‘কেউ গণহত্যা বলতে চায় না’ : আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা দিলেও তাদের ওপর সংঘটিত গণহত্যাকে কেউ ‘গণহত্যা’ বলছে না বলে অভিযোগ করেছেন রোহিঙ্গা মানবাধিকারকর্মী তুন খিন। গত বুধবার রাতে মার্কিন কংগ্রেসের টম ল্যান্টোস মানবাধিকার কমিশনে মিয়ানমার পরিস্থিতি নিয়ে শুনানিতে তিনি এ অভিযোগ করেন।

তুন খিন গতকাল এক টুইট বার্তায় জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী প্রতিনিধি নিকি হ্যালির সঙ্গে সাক্ষাতের ছবি প্রকাশ করে লিখেছেন, তিনি তাঁকে মিয়ানমারে চলমান গণহত্যা বিষয়ে অবহিত করেন এবং বিষয়টি আইসিসিতে তোলার আহ্বান জানান।

তুন খিন গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর জ্যাক রিডের সঙ্গে দেখা করেও রোহিঙ্গা গণহত্যার তথ্য তুলে ধরে এর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখার অনুরোধ জানান।

পাঠকের মতামত

পবিত্র ঈদুল ফিতর আজ

‘ঈদ এসেছে দুনিয়াতে শিরনি বেহেশতী/দুষমনে আজ গলায় গলায় পাতালো ভাই দোস্তি’- জাতীয় কবি কাজী নজরুল ...