প্রকাশিত: ১১/০৯/২০১৭ ৭:১৫ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ১:৪৩ পিএম

নিউজ ডেস্ক::
বার্মায় রোহিঙ্গা মুসলিম বিদ্রোহীদের ঘোষিত এক মাসের অস্ত্রবিরতি দেশটির সরকার প্রত্যাখ্যান করেছে।মিয়ানমারের ডি ফ্যাক্টো নেত্রী অং সান সুচির মুখপাত্র একটি টুইটবার্তায় বলেছেন, সরকার ‘সন্ত্রাসীদের’ সাথে কোনো মধ্যস্থতা করবে না।
রোববার থেকে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমান বিদ্রোহীরা একতরফা ভাবেই এক মাসের জন্য অস্ত্রবিরতির ঘোষণা দেয়।

এক বিবৃতিতে বিদ্রোহীরা বলছে, তারা রাখাইনে মানবিক সংকট বিবেচনায় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং তারা আশা করছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীও সেখানে অস্ত্রবিরতি করবে।
আরসা বা আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি শনিবার দেয়া এক বিবৃতির মাধ্যমে অস্ত্রবিরতির এই ঘোষণা দেয়।

গত পঁচিশে অগাস্ট পুলিশের উপর এই আরসার চালানো হামলার প্রতিক্রিয়াতেই রাখাইনে সেনা অভিযান শুরু হয়, যার কারণে প্রায় তিন লাখ রোহিঙ্গা মুসলমান প্রতিবেশী বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়।
শরণার্থীর স্রোত এখনো অব্যাহত আছে। বহু রোহিঙ্গা নিহত হচ্ছে। সীমান্তের দুপাড় জুড়েই তৈরি হয়েছে এক মানবিক পরিস্থিতি।

এরকম পরিস্থিতিতেই আরসা’র তরফ থেকে এলো একতরফা অস্ত্রবিরতির ঘোষণা।
তারা সাহায্যকারী সংস্থাগুলোতে রাখাইন এলাকায় তাদের কর্মকাণ্ড শুরু করবারও আহ্বান জানায়।
অবশ্য রাখাইনের সহিংসতা প্রসঙ্গে মিয়ানমারের সরকারের বক্তব্য তাদের ভাষায়, রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী এবং মুসলমান গ্রামবাসীরা নিজেরাই নিজেদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিচ্ছে এবং অমুসলিমদের উপর হামলা চালাচ্ছে।

এদের অনেকেই সহিংসতা থেকে বাঁচতে পালিয়ে যাচ্ছে।
কিন্তু বিবিসির একজন সংবাদদাতা গত বৃহস্পতিবার রাখাইনে গিয়ে দেখেছেন সেখানে একটি মুসলমান গ্রাম জ্বলছে, যেটিতে অগ্নিসংযোগ করেছে রাখাইনের একদল বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী।
এই ঘটনাটি রাখাইনে চলমান সহিংসতা সম্পর্কে মিয়ানমারের সরকারী বক্তব্যের সঙ্গে সুস্পষ্টভাবে সাংঘর্ষিক।

রোহিঙ্গা সংকট সামাল দিতে বাংলাদেশের পাশে বিশ্ব : পররাষ্ট্রমন্ত্রী
কূটনৈতিক প্রতিবেদক

আজ রোববার বিকেলে কূটনীতিকদের ব্রিফ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। আজ রোববার বিকেলে কূটনীতিকদের ব্রিফ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
রোহিঙ্গা সংকট সামাল দিতে সারাবিশ্ব বাংলাদেশের পাশে রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। তিনি জানিয়েছেন, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর হাতে ২৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত তিন হাজার রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে।

আজ রোববার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় রোহিঙ্গা পরিস্থিতির নিয়ে পশ্চিমা ও মুসলিম দেশগুলোর কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদের দেয়া ব্রিফিংয়ের পর সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি এসব বলেন।
বৈঠকের পর অধিকাংশ কূটনীতিক রাখাইন সংকট নিরসনে আনান কমিশনের প্রতিবেদনে দেয়া সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি দেশের প্রতিনিধিই একবাক্যে রোহিঙ্গাদের নিয়ে বাংলাদেশের নেয়া ভূমিকা সমর্থন করেছেন। এত বিরাট জনগোষ্ঠীকে আশ্রয়, চিকিৎসা ও খাদ্যের ব্যবস্থা করার জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করেছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা।
রোহিঙ্গা ইস্যুকে একটি ‘জাতীয় সমস্যা’ হিসেবে অভিহিত করে তিনি বলেন, প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা আগে থেকেই বাংলাদেশে ছিল। এরপর গত মাসের ঘটনার পর আরও তিন লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। সব দেশই রোহিঙ্গা হত্যাকে গ্রহণযোগ্য নয় বলে জানিয়েছে। তারা সবাই এ ইস্যুতে বাংলাদেশ সাহায্য করার ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন।
রোহিঙ্গারা যে মিয়ানমারেরই নাগরিক, ইতিহাস থেকে তার তথ্য-প্রমাণ তুলে ধরে মাহমুদ আলী বলেন, সমস্যা আমরা তৈরি করিনি। মিয়ানমার সমস্যা তৈরি করেছে। মিয়ানমারকেই তা সমাধান করতে হবে।

এ সমস্যা সমাধানে মিয়ানমারকে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতার আশ্বাসও দেন তিনি।
ব্রিফিংয়ের পর ভ্যাটিকানের রাষ্ট্রদূত জর্জ কোচেরি সাংবাদিকদের বলেন, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর হাতে ২৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত তিন হাজার রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী।
তিনি বলেন, ‘পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমাদের জানিয়েছেন, এই সহিংসতায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর হাতে তিন হাজারের মতো রোহিঙ্গা মারা গেছেন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গাদের সহায়তা দেয়ার জন্য চেষ্টা করছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জোয়েল রিফম্যান জানান, কফি আনানের নেতৃত্বে রাখাইন পরামর্শক কমিশনের প্রতিবেদনের সুপারিশগুলোর বাস্তবায়ন দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন সিনেটে রোহিঙ্গা বিষয়ে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার রাষ্ট্রদূত জুলিয়া নিব্লেটও আনান কমিশনের প্রতিবেদনের সুপারিশগুলোর বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে অস্ট্রেলিয়া অতীতেও বাংলাদেশকে সহায়তা দিয়েছে, ভবিষ্যতেও দেবে।

নরওয়ের রাষ্ট্রদূত মেরেতো লুনডেমোও একই ধরনের অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমরা উদ্বিগ্ন।’
মাহমুদ আলী বলেন, পশ্চিমা ও মুসলিম দেশগুলোর (ওআইসি) রাষ্ট্রদূতদের সাথে বৈঠক করেছি। তারা এক বাক্যে আমাদের সমর্থন করেছেন। তারা বলেছেন, বাংলাদেশের অনেক সমস্যা রয়েছে। তারপরেও এতো বড় জনগোষ্ঠীকে সরকার আশ্রয় দিয়েছে। সেজন্য আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশকে সহায়তা দেয়া হবে।
মিয়ানমারের সহিংসতার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘এখন এ সমস্যার নতুন একটি রূপ নিয়েছে। প্রতিশোধের মতো ব্যাপার। তাই বলে সবাইকে মেরে ফেলতে হবে! সব গ্রাম জ্বালিয়ে দিতে হবে!’
রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ কূটনৈতিকভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মিয়ানমারের সাথে আলোচনা অব্যাহত আছে। এছাড়া এশিয়ার অন্য দেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বহুপাক্ষিক ফোরামের সাথে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমারের একজন মন্ত্রী ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেছেন, বাংলাদেশে যারা এসেছে তাদের নাগরিকত্বের প্রমাণ থাকলে ফেরত নেয়া হবে। মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিচ্ছে, তাহলে প্রমাণ থাকবে কী করে? সেখানে তো গণহত্যা চলছে।
গণহত্যার বিচার চাওয়া হবে কি না জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিষয়টি বিবেচনায় নেয়ার আশ্বাস দিয়েছে।

পাঠকের মতামত