প্রকাশিত: ২৮/০৭/২০১৭ ৬:২২ পিএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ৪:০৪ পিএম

পাঠক বন্ধুরা, আজকের লেখাটি কিছুটা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ভিত্তিক বলে আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। তবে এই লেখায় সমাজ বাস্তবতার চিত্র থাকলেও থাকতে পারে।
মাস কয়েক আগের কথা।সাপ্তাহিক ছুটির দিনে গ্রামের চেম্বারে বসে আছি।তিন ভদ্রলোকের শুভাগমন হলো। তিনজনই স্থানীয় উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য। তাঁরা হাতে একটি দাওয়াতপত্র ধরিয়ে দিয়ে আবদার করলেন, ওই বিদ্যালয়ের জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানে যোগদান করতে হবে। সম্মত হলাম সানন্দে। যথারীতি বিদ্যালয়ে গিয়ে হাজির হলাম নির্ধারিত ক্ষণে। দেখলাম, তশরিফ এনেছেন অনেকেই। কিন্তু বিদ্যালয়ের সভাপতি মশায়কে দেখতে পেলাম না। অনুষ্ঠান শুরু হলো, শেষও হলো। অনুষ্ঠানের এক কর্তাকে এক ফাঁকে সভাপতি মশায় আসেননি কেন জিজ্ঞেস করলাম।কর্তা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে যা বললেন, তাতে তো অধমের ভিরমি খেয়ে পড়ার যোগাড়।সভাপতি মশায় নাকি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্যে একটা শর্ত দিয়েছিলেন। কিন্তু শর্তটি অন্যরা মানতে পারেননি বলে সভাপতি মশায় গোস্বা করে অনুষ্ঠানে আসেননি। আর শর্তটি হলো, আমি অধমসহ এলাকার দুজন উকিল এবং স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে কোনমতেই বিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেয়া যাবে না। শুনে সভাপতি বেচারার জন্যে অধমের দীলে খুব চোট লাগলো। আহা, বেচারা বিদ্যালয়ের সভাপতি; অথচ আমাদের মতো অধম উকিল আর চেয়ারম্যানের কারণে নিজ বিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানেই আসতে পারলেন না। আমি অধম আর চেয়ারম্যান সাহেব ওই বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। আর অন্য উকিল সাহেব একই বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক। এটা ঠিক, ওই বিদ্যালয়ে অধমের কোন অবদান নেই। তবে, চেয়ারম্যান সাহেব তো জনপ্রতিনিধি। আর অন্য উকিল সাহেব বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক থাকাকালীন সময়ে অনেক ত্যাগ, শ্রম আর বেইজ্জতির বিনিময়ে ওই বিদ্যালয়ের জন্যে ১৫ একরের অধিক জমি বন্দোবস্তি নিয়ে পরে পদত্যাগ করে উকালতি পেশায় থিতু হয়েছেন। তাই, অনুষ্ঠানের আয়োজকদের আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে সভাপতি মশায়ের দাবীমতে ওই বিদ্যালয়ে আমাকে আজীবন নিষিদ্ধ করার এবং চেয়ারম্যানসহ অন্য উকিল সাহেবকে সেই নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত রাখার অনুরোধ জানিয়ে নিজেকে ধিক্কার দিতে দিতে অধম প্রস্থান করলাম।
পরে এই ঘটনা নিয়ে অনেক ভেবেছি।প্রথমতঃ অধম যৎসামাণ্য লেখাপড়া করে দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করেছি এবং এজন্যে সরকার ভুলক্রমে অধমকে সর্বোচ্চ সম্মানেও ভূষিত করেছেন বটে। কিন্তু বুদ্ধিশুদ্ধি কম থাকার কারণে এই ঘটনার আগে বুঝতেই পারিনি যে, অধম একটা বিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকারও অযোগ্য।দ্বিতীয়তঃ অন্য ওই উকিল সাহেব এতো অবদানের পরেও বিদ্যালয়ের তরফে কিছু না পেলেও অন্যভাবে পুরষ্কৃত হয়েছেন। এলাকার অধমের মতো দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের পড়াশোনায় সহায়তা করেছিলেন বলে আজ তাঁর নিজের সন্তানরা শিক্ষাক্ষেত্রে অসামান্য সাফল্যের সাক্ষর রেখে চলেছে। ওই উকিল সাহেবের জ্যোষ্ঠ সন্তান বছর কয়েক আগে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে মাস খানেকের মধ্যেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ডক্টরেট ডিগ্রী অর্জনের জন্যে পাড়ি জমাচ্ছে।তৃতীয়তঃ অধমের এখন আর বুঝতে বাকি নেই যে, ইদানিংকালে কেউ কেউ চাইলেই ক্ষমতাসীন দলের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিকেও বিভিন্ন জায়গায়/অনুষ্ঠানে নিষিদ্ধ বা অবাঞ্চিত করতে পারেন!
পাঠক বন্ধুরা, আমি এখন আগের চেয়ে অনেক হুঁশিয়ার। এখন কেউ কোথাও যেতে বললেও চটজলদি রাজী হই না। আগে জেনে নিই, অধমকে সংশ্লিষ্ট স্থানে/অনুষ্ঠানে নিষিদ্ধ/অবাঞ্চিত ঘোষণা করা হয়েছে কিনা। এ রকম সতর্ক/হুশিয়ার হয়ে উঠার মওকা করে দেবার জন্যে পূর্বোক্ত সভাপতি মশায়ের প্রতি ঐকান্তিক মোবারকবাদ ও নিখাদ কৃতজ্ঞতা।
সবার মধ্যে শুভ-বুদ্ধির উদয় হোক।

মোহাম্মদ শাহজাহানঃ
এডভোকেট, জেলা ও দায়রা জজ আদালত, বান্দরবান ও কক্সবাজার।
মুঠোফোনঃ ০১৮২৭৬৫৬৮১৬

পাঠকের মতামত

নতুন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকানোই যখন বড় চ্যালেঞ্জ!

মিয়ানমারের তিনটি প্রধান এথনিক রেজিস্ট্যান্ট গ্রুপ—তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ), মিয়ানমার ন্যাশনাল এলায়েন্স (এমএমডিএ) এবং ...