প্রকাশিত: ০৮/০৪/২০১৭ ১০:১৬ পিএম

এডভোকেট মোহাম্মদ শাহজাহান::

এক-ছেলেধরাঃ
বছর ত্রিশেক আগে, এই অধম যখন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, ‘ছেলেধরা’ শব্দটির প্রচলন তেমন ছিলো না তখন।তবে এক সময় সবিস্ময়ে লক্ষ্য করলাম, শব্দটি সমাজে বেশ পরিচিত হয়ে উঠেছে।বাস্তবতার নিরিখে।শিশু হারানোর বা হারিয়ে যাবার কতিপয় দুঃখজনক অঘটনের প্রেক্ষিতে।
মফস্বল শহরে আর বন-বাদাড়ে স্বদেশী আর বেনিয়ার জবান শিখিয়ে পার করেছি সোনালী যৌবন।শিশুদের সঙ্গে কাজ-কারবার।তাই ‘ছেলেধরা’ শব্দটি একটা সময়ে ভয়ঙ্কর অর্থে সামনে এসে দাঁড়ালো।কোন এক কাক-ডাকা বিহানবেলা শোনা গেলো, ‘ছেলেধরা’ এখন বাড়ির পাশেই।প্রতিবেশীর এক শিশু সন্তানকে নাকি ‘ছেলেধরা’র কবল থেকে উদ্ধার করে দুর্বৃত্তকে যথারীতি উত্তম মধ্যম দেয়া হয়েছে আচ্ছাসে।
অধমের জ্যোষ্ঠ সন্তানটি গুটিগুটি পায়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাওয়া শুরু করলো। বিদ্যার্থে।একদিন শিশু-সন্তানের ভয়ার্ত কন্ঠে ‘ছেলেধরা’র গুজবের কথা শুনে বুকটা ছ্যাৎ করে উঠলো যেনা।অভয় দিলাম আত্মজাকে।
ধান ভানতে গিয়ে শীবের গীত দীর্ঘতর না করে মূল প্রসঙ্গে যাওয়া যাক এবারে।

দুই-ছেলেধরার ছদ্মবেশে রিকশাওয়ালা, নাকি রিকশাওয়ালার ছদ্মবেশে ছেলেধরাঃ
বছর পনেরো আগের কথা।একদিন কক্সবাজারের উখিয়া স্টেশনে পত্রিকার দোকান থেকে জেলার নামকরা পত্রিকার একটি কপি কিনে হাতে তুলে নিতেই চোখ ছানাবড়া অধমের। পত্রিকার প্রধান শিরোনামে লেখা, ‘শহরে ছেলেধরার ছদ্মবেশে রিকশাওয়ালা—’। সাথে থাকা বন্ধুর দৃষ্টি আকর্ষণ করলাম।বন্ধু কতকটা মুখর হলো শিরোনামটির সমালোচনায়।সমালোচনা সে করতেই পারে।কিন্তু গোল বাধলো অন্য জায়গায়।কোত্থেকে যেনো সহসা অকূস্থলে শুভ আবির্ভাব ঘটলো এক ভদ্রলোকের।উদিত হয়েই বন্ধুর সঙ্গে ম্যারাথন বাহাসে লিপ্ত হলেন এই ভদ্রলোক।ভদ্রলোকের দাবী, তিনি খ্যাতনামা একজন সাংবাদিক এবং তিনি নিজেই ওই পত্রিকার এক সিনিয়র রিপোর্টার;তিনি নিশ্চিত, ওই শিরোনামই সঠিক এবং অধম ও অধমের বন্ধু নরাধম বলেই সমালোচনা করছি।আত্মপক্ষ সমর্থনের ব্যর্থ প্রয়াসের পরে অগত্যা প্রস্থানেই মুক্তি পেয়ে স্বস্তির নিশ্বাস নেয়া গেলো।

তিন-দুলাভাই বনাম শালা-শালীঃ
ভগ্নিপতি আর শ্যালক-শ্যালিকার মিথুস্ক্রিয়া খাঁটি মধুর ন্যায় সুমিস্ট না হলেও অন্ততঃ টক-মিস্টি তো হবে।কিন্তু, সবার কি আর কপালে সুখ সয়?নানা দুঃখজনক অনুসঙ্গে এঁরাও খবরের শিরোনাম হন কালেভদ্রে।স্থানীয় পত্রিকার সেরকমই একটি শিরোনাম-‘ দুলাভাইয়ের হাতে মার খেলো শালা—’।এই ধরণের শিরোনাম দেখে অধমের এক পড়ুয়া বন্ধুর গোস্বা দেখে কে।বন্ধুর দাবী, পত্রিকায় কখনোই ‘দুলাভাই’, ‘শালা’, ‘শালী’ ইত্যকার শব্দ ব্যবহার করা যাবে না;বরং ‘ভগ্নিপতি’ ‘শ্যালক’ ‘শ্যালিকা’ ব্যবহার করতে হবে।বন্ধু বড় বেরসিক; দেশটা এখন স্বাধীন-এ কথা অনেক করে বুঝাবার চেষ্টা করেও কোন ফলোদয় হলো না।

চার-ছাত্রী ও বন্দুকঃ
অধমের এককালের এক ছাত্রী স্থানীয় কাগজ আর কাগজওয়ালাদের উপর বেশ চটে আছে।স্বামী তার একজন ডাক্তার। সফদার ডাক্তার নন, রীতিমত বড় পাস দেয়া ডাক্তার; হুকুমতের নুকরি তার।ছাত্রীর অনুক্ত দাবী, প্রাণাধিক স্বামী তার করিৎকর্মা, নীতিবান আর সময়নিষ্ঠ, ঈমানদার বান্দা। কিন্তু দুঃখের বিষয়, স্থানীয় পাপারাজ্জিরা পিছু নিয়েছে স্বামীর ও স্বামীর সহকর্মীদের ; দেদারসে নাকি বানিয়ে চলেছে ভিত্তিহীন, মিথ্যা নিউজ স্টোরি। গোস্বার তোড়ে ছাত্রী এখনও ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে চলেছে এ বিষয়ে-রীতিমতো কাগজওয়ালাদের বিরুদ্ধে আড়মোড়া ভেঙ্গে জেগে উঠার ডাক ছাত্রীর। ওর মানসিক অবস্থা আঁচ করে অধমের জীবন থেকে একটা উদাহরণ দিয়ে স্বান্তনা দেবার চেষ্টা করলাম।অধম তখন বিদ্যালয় পড়ুয়া।একদিন খুবই ছোটখাট কী নিয়ে যেনো অধমের দুই আত্মীয় পরিবারের মধ্যে খানিকটা কথা কাটাকাটি হলো।ওমা, এর ক’দিন পরেই স্থানীয় এক পত্রিকায় সংবাদ বেরুলো, অধমসহ অধমের কতিপয় আত্মীয় নাকি প্রতিপক্ষকে দিন-দুপুরে বন্দুক নিয়ে তাড়া করেছি!আরও মজার বিষয় হলো, পরে এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদককে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেন, নিউজটা যে আপনাদের ব্যাপারেই, তা বুঝতে পারিনি তো; আপনারা তো সেরকম মানুষ নন!

পাঁচ-হলুদের মানহানিঃ
গিন্নিদের কাছে অতি গুরুত্বপূর্ণ অন্যতম কিচেন আইটেম হলো হলুদ।প্রতিবেশী কলুদের হলুদের ক্ষেতের নান্দনিকতায় কতোবার যে বিমুগ্ধ হয়েছি অধম, তার ইয়ত্তা নেই।সব্জি হিসেবে হলুদ-বৃক্ষের তো তুলনাই হয় না।তাছাড়া, ‘হলুদ’ মাহফিল ছাড়া ইদানিং শাদী-মোবারকের মতো শরয়ী অনুষ্ঠান হবার যো নেই।তো, এত্তো গুণ যে হলুদের, সেই হলুদের নামই বা কেনো যে জড়ালো ‘হলুদ সাংবাদিকতা’ শীর্ষক নেতিবাচক, মানহানিকর শব্দগুচ্ছের সাথে, অধমের আদৌ জানা নেই তা। হায়রে, হলুদ!

ছয়-শুভ বুদ্ধির হোক উদয়ঃ
কম করে হলেও দুই দশক ধরে লিখছি। ছিটেফোঁটা। যা লিখি, তা কোন লেখা হয়ে উঠে কিনা আদৌ, জানি না।সে বিচারের গুরুভার তো বিদগ্ধ সব পাঠক-পাঠিকারই।লেখালেখির সূত্রে গণমাধ্যম আর এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অসংখ্য সংবাদকর্মীর সঙ্গে সখ্য অধমের।সম্পর্কটা প্রায়শই বন্ধুত্বের গন্ডি বেরিয়ে পারস্পরিক শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় গড়িয়েছে।ফলে সংবাদ মাধ্যমের এই মানুষগুলোর প্রতি গভীর আস্থা অধমের। তবুও কেনো জানি, শঙ্কিত আর হতাশ হই ইদানিং।শুভ বুদ্ধির উদয় হোক সর্বত্র।।

মোহাম্মদ শাহজাহানঃ এডভোকেট, জেলা ও দায়রা জজ আদালত, বান্দরবান পার্বত্য জেলা।

পাঠকের মতামত

নতুন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকানোই যখন বড় চ্যালেঞ্জ!

মিয়ানমারের তিনটি প্রধান এথনিক রেজিস্ট্যান্ট গ্রুপ—তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ), মিয়ানমার ন্যাশনাল এলায়েন্স (এমএমডিএ) এবং ...

একটি ফুল—

একটি ফুল, একটি ফুলের জন্যে কতো নিষ্পাপ গাছ প্রাণ হারালো, এই বর্বর শুকোনের দল বারংবার ...