
মেজর (অব.) সিনহা হত্যা মামলায় গতকাল সোমবার আরও তিনজনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা সম্পন্ন হয়েছে। তারা হলেন স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী আবদুল হামিদ, ফিরোজ মাহমুদ ও শওকত আলী। আদালতে তারা হত্যাকাণ্ডের মর্মস্পর্শী বর্ণনা দিয়েছেন বলে বিচারকাজের সঙ্গে জড়িত একাধিক আইনজীবী জানিয়েছেন।
সূত্র জানায়, আরেক সাক্ষী সার্জেন্ট মো. আয়ুব আলী আদালতে উপস্থিত থাকলেও সময় স্বল্পতার কারণে তার সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়নি। মঙ্গলবার তার সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে। সোমবার সকালে আবদুল হামিদের সাক্ষ্য গ্রহণের মধ্য দিয়ে সিনহা হত্যা মামলার তৃতীয় দফায় বিচারকাজ শুরু হয়।
হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে আবদুল হামিদ আদালতে বলেন, পরপর কয়েকটি গুলির আওয়াজ শুনে তিনি ঘটনাস্থলে যান। গিয়ে দেখেন পরিদর্শক লিয়াকত মোবাইলে কাউকে ফোন করেন। এ সময় তিনি দু’জনকে হ্যান্ডকাফ লাগান। নন্দদুলাল গুলিবিদ্ধ সিনহাকে হ্যান্ডকাপ লাগান। অন্য একজনকে হ্যান্ডকাফ লাগাতে আসামি শাহজাহান আলীকে নির্দেশ দেন লিয়াকত। এ সময় শাহজাহান আলী বলেন, হ্যান্ডকাপ নেই। তখন এপিবিএনের এক সদস্য দৌড়ে বাজারে গিয়ে রশি নিয়ে আসেন। নন্দদুলাল, রাজিব ও আবদুল্লাহ মিলে লম্বা চুলওয়ালা লোকটিকে (সিপাত) শক্ত করে বাঁধেন।
আবদুল হামিদ আরও বলেন, ‘লিয়াকত ফোন করে বলেন, টার্গেট ফেলে দিয়েছি। আবার অন্য একজনকে ফোন করে বলেন, স্যার একজনকে ডাউন করেছি, আরেকজনকে ধরে ফেলেছি। লিয়াকত গুলিবিদ্ধ লোকটির কাছে গিয়ে লাথি মারেন। লোকটি পানি চায়। তখন লিয়াকত বলেন, তোকে গুলি করেছি কি পানি খাওয়ানোর জন্য।’ আবদুল হামিদ বলেন, ‘কিছু সময় পর দক্ষিণ দিক থেকে একটি নোহা ও পুলিশের আরেকটি পিকআপ গাড়ি নিয়ে ওসি প্রদীপ স্যার আসেন। তিনি গাড়ি থেকে নেমে ঘটনাস্থলে গিয়ে লিয়াকত ও নন্দদুলালের সঙ্গে কথা বলেন। প্রদীপ স্যার সেনাবাহিনীর পোশাক পরা লোকটির (মেজর সিনহা) কাছে গিয়ে বলেন, অনেক চেষ্টার পর কু…র বাচ্চাকে শেষ করতে পেরেছি।’
হামিদ জানান, মানুষটি (সিনহা) তখনও জীবিত ছিল। ওসি প্রদীপ স্যার গুলি খাওয়া লোকটির বাম পাশে কয়েকটি লাথি মারেন এবং পা দিয়ে গলার ওপর চেপে ধরেন। কিছুক্ষণ পর লোকটির নড়াচড়া বন্ধ হয়ে যায়।
হামিদ বলেন, ‘এরপর ওসি প্রদীপ স্যার প্রাইভেটকারের কাছে আসেন এবং লম্বা চুলওয়ালা লোকটিকে (সিনহার সঙ্গী) উদ্দেশ করে বলেন, তোরা কীসের ভিডিও করেছিস? ক্রসফায়ারের ভিডিও করেছ, এগুলো কোথায়? তোদেরকে কক্সবাজার ছেড়ে চলে যেতে বলছিলাম। যাও নাই বলে তোদের আজকে এই পরিণতি হয়েছে।’
হামিদ বলেন, ‘কিছুক্ষণ পর স্যারদের নির্দেশে গুলি খাওয়া লোকটিকে (সিনহা) লিটন, সাফানূর, ক্যাশিয়ার মামুন ও কামাল মিলে বস্তা ছুড়ে মারার মতো করে গাড়িতে ছুড়ে মারেন। এরপর গাড়িটি কক্সবাজারের দিকে রওনা দেয়। লম্বা চুলওয়ালা লোকটিকে (সিপাত) গাড়িতে করে পুলিশ ফাঁড়ির দিকে নিয়ে যায়। আমিসহ উপস্থিত মোহাম্মদ আলী, কামাল হোসেন, হাফেজ আমিনসহ বাজারের ও মসজিদের বহু লোকজন চাঁদের আলো, চেকপোস্টের লাইট ও গাড়ির লাইটে ঘটনা দেখেছি।’ আদালত সূত্র জানায়, আবদুল হামিদের দেওয়া সাক্ষ্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেন অপর দুই সাক্ষী ফিরোজ মাহমুদ ও শওকত আলী।
কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি ফরিদুল আলম বলেন, তৃতীয় দফা সাক্ষ্যগ্রহণ চলবে ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। আদালত সূত্র জানায়, মামলার আসামি সাবেক ওসি প্রদীপ, পরিদর্শক লিয়াকতসহ ১৫ আসামিকে এই দিনও যথারীতি কারাগার থেকে আদালতে আনা হয়।

পাঠকের মতামত