![](https://www.ukhiyanews.com/wp-content/uploads/2017/09/177d2401fdc46b6aa349c9b9f974ac77-57897dcb5048f.jpg)
ঢাকা: রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশ ও মায়ানমারের মধ্য সর্বসম্মত ১০ দফা থেকে আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন সংক্রান্ত দফাটি মায়ানমার একতরফাভাবে বাদ দিয়েছে।
শুক্রবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এর আগে মায়ানমার সফর শেষ দেশে ফেরার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান জানান, রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার ব্যাপারে মায়ানমারকে যেসব প্রস্তাব দেয়া হয়েছে তাতে রাজি হয়েছে দেশটি।
এই সফরের ফলাফল নিয়ে তিনি আশ্বস্ত বলেও জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। আসাদুজ্জামান খান মায়ানমারের রাজধানী নেপিডোতে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লেফটেন্যান্ট জেনারেল কিয়াও সোয়ে ও দেশটির ডি ফ্যাক্টো নেত্রী অং সাং সুচির সাথে বৈঠক করে বুধবার সন্ধ্যেবেলা ঢাকায় ফেরেন।
কিন্তু মায়ানমার থেকে খবর আসছে যে দেশটির সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ইচ্ছুক থাকলেও এদের পরিচয় যাচাই বাছাই করবার সক্ষমতা না থাকায় তারা এই প্রক্রিয়া শুরু করতে সময় নেবে।
আর বাংলাদেশে যে পরিমাণ রোহিঙ্গা এসেছে বলে বলা হচ্ছে, সেই সংখ্যা নিয়েও তাদের সংশয় আছে। মায়ানমার থেকে প্রকাশিত একটি দৈনিক ইরাওয়াদির অনলাইন সংস্করণে খবর বেরিয়েছে, মায়ানমার-বাংলাদেশ বৈঠকে দুপক্ষ শরণার্থী প্রত্যাবাসনের বিষয়ে কোন চুক্তিতে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছে।
সংবাদপত্রটির সম্পাদক কিয়াও জোয়া মোয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, তিনি এই সফরটি নিয়ে মায়ানমারের বেশ কয়েকজন পদস্থ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছেন। তাদের বক্তব্য হচ্ছে, শরণার্থী প্রত্যাবাসন নিয়ে যতক্ষণ দুদেশের মধ্যে কোন চুক্তি না হচ্ছে, ততক্ষণ এই ইস্যুতে কোনও কাজই শুরু করা যাবে না।
তবে সবচাইতে বড় বাধা হচ্ছে অবকাঠামো এবং রোহিঙ্গাদের পরিচয় যাচাই বাছাইয়ে সক্ষমতার অভাব। দৈনিক ইরাওয়াদির সম্পাদক আরো বলেন, ‘আমি মনে করি, এই মানুষগুলোর পরিচয় কীভাবে নিশ্চিত করা হবে, সেটা নিয়ে কর্মকর্তাদের মধ্যে দুশ্চিন্তা আছে। কারন বাংলাদেশ অংশে লাখ লাখ মানুষ আছে।’
‘তারা যদি সবাই একযোগে আসতে চায়, আমি মনে করি একসাথে এদের পরিচয় নিশ্চিত করবার সক্ষমতা মায়ানমারের নেই। আমি মনে করি এ কারণেই প্রস্তুত হবার জন্য সময় নিচ্ছে মায়ানমারের সরকার,’ বলছিলেন কিয়াও জোয়া মো।
আনান কমিশনের সুপারিশসমূহ
জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে গঠিত রাখাইন রাজ্য উন্নয়নবিষয়ক পরামর্শক কমিশন তথা আনান কমিশন রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব প্রদান এবং মায়ানমার ও বাংলাদেশ মিলে যৌথ যাচাইপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের নিরাপদে প্রত্যাবাসনের সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব প্রশ্নে আনান কমিশনের সুপারিশে ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইন অনুযায়ী নাগরিকত্ব যাচাইপ্রক্রিয়া ত্বরান্বিতকরণ এবং এরই মধ্যে নাগরিক হিসেবে যাচাই হওয়া ব্যক্তিদের সব ধরনের অধিকার ও স্বাধীনতা দিতে বলা হয়েছে।
আনান কমিশন মায়ানমারের নাগরিকত্ব আইনটি আন্তর্জাতিক রীতিনীতি, নাগরিকত্ব ও জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পৃক্ত করার সুপারিশ করেছে। যারা মায়ানমারের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি পায়নি তাদের ওই দেশটিতে অবস্থানের বিষয়টি হালনাগাদ করে ওই সমাজের অংশ করে নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
জাতি-ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সবার অবাধ চলাচলের সুযোগ দিতে মায়ানমার সরকারকে আনান কমিশন সুপারিশ করেছে। রাখাইন রাজ্যে উন্নয়ন ও বিনিয়োগ থেকে স্থানীয় জনগোষ্ঠীগুলো উপকৃত হবে বলেও মনে করে আনান কমিশন।
মায়ানমারের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় সব গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের সদস্যদের সম্পৃক্ত করার কথা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুতদের শিবিরগুলো বন্ধ করে সমাজেই তাদের সম্পৃক্ত করার নীতি নেওয়ার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আন্তঃসম্প্রদায় সুসম্পর্ক সৃষ্টি এবং সমাজের সব সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে।
আনান কমিশনের প্রতিবেদনে বাংলাদেশ-মায়ানমার সুসম্পর্ক এবং অভিন্ন চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এ ছাড়া ওই কমিশন তার ৮৮ দফা সুপারিশ বাস্তবায়নে মায়ানমারে কাঠামো সৃষ্টি এবং মন্ত্রী পর্যায়ের কাউকে দায়িত্ব দেওয়ার কথা বলেছে।
পাঠকের মতামত