প্রকাশিত: ১৫/০৮/২০১৭ ৮:০৫ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ৩:০৯ পিএম

উখিয়া নিউজ ডটকম::
আজ জাতীয় শোক দিবস। বাঙালি জাতির ইতিহাসে শোকাবহ দিন। স্বাধীনতার স্থপতি, মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪২তম শাহাদাত বার্ষিকী। ১৯৭৫ সালের এইদিনে খুব ভোরে সেনাবাহিনীর কিছুসংখ্যক বিপথগামী সদস্য ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরের বাসভবনে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে। বৃষ্টিঝরা শ্রাবণের রেশ মিলিয়ে যাওয়ার মুহূর্তে সেদিন বৃষ্টি নয় রক্ত ঝরেছিলো। বাংলার ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের মতো বিশাল তাঁর বুক থেকে রক্তগোলাপের মতো লাল রক্ত ঝরেছিলো ঘাতকের বুলেটে। বঙ্গবন্ধু সেদিন পতিত হয়েছিলেন কেবল তাঁর নশ্বর শরীর নিয়ে, কিন্তু তাঁর অবিনশ্বর চেতনা ও আদর্শ ছিলো মৃত্যুঞ্জয়ী। ঘাতকের সাধ্য ছিলো না ইতিহাসের সেই মহানায়কের অস্তিত্বকে বিনাশ করে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে তাঁরা বাংলাদেশকেই হত্যা করতে চেয়েছিলো, মুছে দিতে চেয়েছিলো এই দেশটিকে পৃথিবীর মানচিত্র থেকে। কিন্তু তিনি সেই মানুষ, যিনি বলেছিলেন, ‘ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়েও বলবো আমি বাঙালি, বাংলা আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা, বাংলা আমার নিঃশ্বাসে–প্রশ্বাসে।’ তাঁর সেই সাহস ছিলো, মানুষকে অনুপ্রাণিত করে তুলবার অনমনীয় ব্যক্তিত্বের জোর ছিলো। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হয়ে উঠবার আগেই তিনি এই নামটির সঙ্গে নিজের অস্তিত্ব এক করেছিলেন। তাঁকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাস রচিত হতে পারে না। এই অর্থে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ অভিন্ন। জাতি আজ গভীর শোক ও শ্রদ্ধায় স্মরণ করবে সকল শহীদকে। কাল থেকে কালান্তরে জ্বলবে শোকের আগুন।

জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে মাসব্যাপী কর্মসূচি পালন করছে আওয়ামী লীগ। আজ ১৫ই আগস্ট সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীর ধানমণ্ডিস্থ বঙ্গবন্ধু ভবন এবং বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ’ দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সংগঠনের সকল স্তরের কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিত ও কালো পতাকা উত্তোলন করা হবে। বাদ জোহর দেশের সকল মসজিদে দোয়া, মিলাদ মাহফিল এবং মন্দির, গীর্জা ও প্যাগোডায় প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে। চট্টগ্রামেও আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনসহ বিভিন্ন সংগঠন দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি পালন করবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী পালন উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সিটি মেয়র আ জ ম নাছিরউদ্দিন পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সংগঠন কেবল আওয়ামী লীগ নয়, সমাজের অন্যান্য মত–পথ থেকেও ’জাতীয় শোক দিবসে’র অনুষ্ঠানমালা পালিত হবে।

সেদিন পঁচাত্তরের পনেরই আগস্ট কালরাতে ঘাতকরা শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করেনি, তাদের হাতে একে একে প্রাণ হারিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর সন্তান শেখ কামাল, শেখ জামাল, শিশু শেখ রাসেলসহ পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজি জামাল। পৃথিবীর এই ঘৃণ্যতম ও জঘন্য হত্যাকান্ড থেকে রেহাই পাননি বঙ্গবন্ধুর সহোদর শেখ নাসের, ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, ভাগ্নে যুবনেতা শেখ ফজলুল হক মণি, তার সহধর্মিণী আরজু মণি ও কর্নেল জামিলসহ পরিবারের ১৬ জন সদস্য ও আত্মীয়–স্বজন। ভোর পাঁচটা ৪০ মিনিটে মুখ থুবড়ে বঙ্গবন্ধু লুটিয়ে পড়েন সিঁড়িতে। তখনো তাঁর ডান হাতে ধরা পাইপ। কয়েকটা গুলি তাঁর বুকের ডান দিকে এবং পেটে লেগেছিলো। ফলে যখন সূর্য ওঠার কথা, সেই সূর্য ওঠার সময় বঙ্গের গৌরব–রবি গেলো অস্তাচলে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ঘাতকদের মিশন তখনো শেষ হয়নি। মহিউদ্দিন, হুদা ও নূর বাড়ির বাইরে চলে যাওয়ার পর ল্যান্সার আর আর্টিলারির সেনাদের নিয়ে আসে আজিজ পাশা আর মুসলেউদ্দীন। পাশা তার সঙ্গীদের নিয়ে দোতলায় যায়। আগে থেকেই সেখানে ছিলো সুবেদার ওয়াহাব জোয়ারদার। তারা গিয়ে রাসেল, শেখ নাসের এবং বাড়ির এক ভৃত্যকে নিচে নিয়ে যায়। শোবার ঘরে গিয়ে বেগম মুজিব, শেখ জামাল এবং কামাল ও জামালের সদ্য বিবাহিত স্ত্রীদের স্টেনগানের গুলি দিয়ে হত্যা করে পাশা আর মুসলেম উদ্দীন। নিচে গিয়ে ঘাতকরা রাসেলকে প্রথমে বসিয়ে রেখেছিলো গেইটের পাশে পাহারাদারের চৌকিতে। রাসেল তখন মায়ের কাছে যাবে বলে কাঁদছিলো। পাশা একজন হাবিলদারকে তখন হুকুম দেয় রাসেলকে তার মায়ের কাছে নিয়ে যেতে। সেই হাবিলদার সত্যি সত্যিই তাকে মায়ের কাছে পাঠিয়েছিলো দোতলায় নিয়ে গিয়ে– একেবারে কাছ থেকে গুলি করে। বাংলাদেশ ও বাঙালির জাতির ইতিহাসে এ এক আজন্ম দগদগে ঘা! ব্যক্তিগত বিশ্বাসে তিনি ছিলেন একজন ধর্মানুরাগী; কিন্তু রাজনৈতিক বিশ্বাসে ছিলেন ধর্মনিরপেক্ষ। ধর্মে তার অটুট বিশ্বাস ছিল বলেই হয়তো বলতে পেরেছেন, ’আমি প্রথমে বাঙালি, তারপর মুসলমান। একটি আমার পরিচয়, অন্যটি আমার বিশ্বাস।’

সমাজবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. অনুপম সেন বলেছেন বঙ্গবন্ধু নবীন প্রাণের দূত। তিনি যখন টগবগে তরুণ তখন তাঁর মনে বাঙালির মুক্তির আকাঙ্খার বীজ বপিত হয়। সেই বীজ থেকে বেড়ে ওঠা মহীরুহটির নাম বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু অসত্য ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে জ্বলে উঠতেন এবং শেরে বাংলা এ কে এম ফজলুল হকের মত বড় বড় রাজনৈতিক নেতাদের মুখের উপর অকপটে সত্য কথাটি উচ্চারণ করতেন। তাঁর তারুণ্য ছিল সৃষ্টি মুখর এবং মানুষের মনের ভাষা পাঠ করতে অভ্যস্থ হয়ে উঠতেন। সুদীর্ঘ কারা জীবনেও তিনি সৃষ্টিশীল ছিলেন এবং জেলে বসেই রাজনীতির গতিধারা নিয়ন্ত্রণ করতেন। রাজনৈতিক নেতাুকর্মীদের আন্দোলনের দিক নির্দেশনা দিতেন। তাই তাঁর তারুণ্য ছিল স্বপ্ন ভরা। তাঁর স্বপ্নের ফসল এই বাংলাদেশ। আজকের তরুণরা বঙ্গবন্ধুকে জানতে ও বুঝতে পারলে তাদের স্বপ্নের ভেতর সম্ভবাবনাময় বাংলাদেশ জেগে উঠবে। বঙ্গবন্ধুকে দৈহিকভাবে হত্যা করা হলেও তার মৃত্যু নেই। তিনি চিরঞ্জীব। কেননা একটি জাতিরাষ্ট্রের স্বপ্নদ্রষ্টা এবং স্থপতি তিনিই। যতদিন এ রাষ্ট্র থাকবে, ততদিন অমর তিনি। সমগ্র জাতিকে তিনি বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রেরণায় প্রস্তুত করেছিলেন ঔপনিবেশিক শাসক–শোষক পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে। তাই চিরঞ্জীব তিনি এ জাতির চেতনায়। বঙ্গবন্ধু কেবল একজন ব্যক্তি নন, এক মহান আদর্শের নাম। যে আদর্শে উজ্জীবিত হয়েছিল গোটা দেশ। বাঙালি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র আর ধর্মনিরপেক্ষ দর্শনে দেশের সংবিধানও প্রণয়ন করেছিলেন স্বাধীনতার স্থপতি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব।

পাঠকের মতামত

রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে চীনের শক্তিশালী ভূমিকা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা

বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনে চীনের শক্তিশালী ভূমিকার আহ্বান জানিয়েছেন ...

বাংলাদেশ ও ড. ইউনূসকে শুভেচ্ছা ট্রাম্পের, সম্পর্ক জোরদারের বার্তা

স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশের জনগণ ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন যুত্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ...

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে রোহিঙ্গা সংকট সম্পর্কিত প্রস্তাব গৃহীত

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ মালয়েশিয়া ও ফিনল্যান্ডের পৃষ্ঠপোষকতায় মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি নিয়ে ...

৯০ দিনের মধ্যে বাণিজ্যিকভাবে স্টারলিংক চালুর নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

৯০ দিনের মধ্যে স্টারলিংকের স্যাটেলাইট ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে চালুর নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ...

জুলাই আন্দোলনে আহতদের পাশে থাকবে সেনাবাহিনী : সেনাপ্রধান

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত ছাত্র-ছাত্রীদের সম্মানে আয়োজিত ইফতার ও নৈশভোজ অনুষ্ঠানে কথা বলেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। ...