
রোহিঙ্গা সংকট সমাধান করতে মিয়ানমারকে জোর তাগিদ দিয়ে গতকাল (বৃহস্পতিবার) রাতে একটি প্রস্তাব গ্রহণ করেছে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ। পরিষদের সামাজিক, মানবিক ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক ফোরাম, থার্ড কমিটির ৪৭তম বৈঠকে আলোচনা শেষে সদস্য দেশগুলোর ভোটে প্রস্তাবটি গৃহীত হয়।
এতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন, নাগরিকত্ব প্রদান, অনতিবিলম্বে সামরিক অভিযান বন্ধ করাসহ মিয়ানমারের প্রতি ১৬টি সুনির্দিষ্ট আহ্বান জানানো হয়েছে।
ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) পক্ষে প্রস্তাবটি উত্থাপন করে মিশর। প্রস্তাবের পক্ষে ভোট পড়েছে ১৩৫টি। চীন, রাশিয়াসহ মোট ১০টি দেশ প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেয়। অন্যদিকে ভারত, নেপাল, ভুটানসহ মোট ২৬টি দেশ ভোট দেয়া থেকে বিরত থাকে।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে এমন প্রস্তাব পাসকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা। বিশ্লেষকদের মতে, সবাইকে মনে রাখতে হবে, রোহিঙ্গা সংকট একটি দীর্ঘমেয়াদী ও জটিল সমস্যা। এটি বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশের পক্ষে বিশ্ব জনমত ভীষণভাবে প্রয়োজন।
আর রাখাইনে গণহত্যাসহ যে ধরনের অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে, তার বিপক্ষে জনমত গড়তে বাংলাদেশ সক্ষম হয়েছে। এছাড়া, রোহিঙ্গা ইস্যুতে রাশিয়া ও চীনের বিপক্ষে যাওয়া এবং ভারতসহ প্রতিবেশীদের নীরব ভূমিকায় অবাক হওয়ার কিছু নেই। তাদের কাছে ভূ-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থই বড় ব্যাপার। মানবাধিকার বা গণতন্ত্র নিয়ে তাদের কোন মাথাব্যাথা নেই। তাই বাংলাদেশকে আরও একটু কৌশলী ভূমিকা নিতে হবে। আর রোহিঙ্গারা নিজেরাই এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়াসহ নানা উদ্যোগ নিতে পারে। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মিডিয়াকে আরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে।
এদিকে, মিয়ানমারের বিরুদ্ধে জাতিসংঘে ওআইসির প্রস্তাব পাস হওয়াকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কূটনৈতিক সফলতা বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশের নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান। তিনি বলেন, কোন সমস্যা দীর্ঘদিন স্থায়ী হতে পারে না, সমস্যা সমাধান হবেই। জাতিসংঘে এই রেজুলেশনের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী যে রাজনৈতিক দূরদর্শিতা, যে কূটনৈতিক তৎপরতা দেখিয়েছেন, তা সফল হয়েছে।
আজ (শুক্রবার) সকালে মাদারীপুরে আচমত আলী খান পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের নতুন ভবন উদ্বোধন শেষে নৌমন্ত্রী সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
তিনি আরও জানান, জাতিসংঘের ১৩৫টি দেশ এ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়। ১০টি দেশ বিপক্ষে এবং ২৬টি দেশ নীরব ছিল। এ থেকে বোঝা যায়, রোহিঙ্গাদের হত্যা, নির্যাতন বন্ধ করে নাগরিকত্ব দিয়ে ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রয়েছে।
উল্লেখ্য, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির সেনাবাহিনী ও উগ্র বৌদ্ধদের নির্যাতনের শিকার হয়ে গত ২৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ছয় লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। এখনও অব্যাহত রয়েছে অনুপ্রবেশ। এটিকে ‘জাতিগত নিধন’ বলে আখ্যায়িত করেছে জাতিসংঘ। এ সংকটে নীরব ভূমিকার জন্য বিশ্বজুড়ে সমালোচিত হন দেশটির নোবেলজয়ী নেত্রী অং সান সু চি।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে গত দুই মাসে রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রস্তাব আনার চেষ্টা চালানো হলেও চীন ও রাশিয়ার মতো ভেটো ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের কারণে তা সম্ভব হয়নি। গতকাল ওই দুটি দেশ প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিলেও ব্যাপক সমর্থন নিয়ে তা সাধারণ পরিষদের গৃহীত হয়। এরফলে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে প্রবল বৈশ্বিক চাপে পড়ল মিয়ানমার।
পাঠকের মতামত