নিউজ ডেস্ক:
বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে আগামী ২২ ও ২৩ নভেম্বর মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোতে সমঝোতা বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল যোগ দিবে।
প্রতিনিধি দলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা থাকবেন।
এশিয়া-ইউরোপ মিটিংয়ে (আসেম) যোগ দিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ১৯ নভেম্বর নেপিডো যাবেন। ২০ ও ২১ নভেম্বর আসেম শেষে মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এই বৈঠকেই সমঝোতার মাধ্যমে প্রত্যাবাসন চুক্তি চূড়ান্ত করার চেষ্টা করা হবে। এছাড়া চুক্তি বাস্তবায়নে দুই দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হবে।
মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পার্মানেন্ট সেক্রেটারি ইউ কিইয়াও জেয়া জানিয়েছেন, চারটি শর্তে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে নেপিডো নীতিগতভাবে সম্মত রয়েছে। শর্তগুলো হলো, মিয়ানমারে দীর্ঘদিন বসবাসের প্রমাণপত্র দেখাতে হবে, পরিবারের কেউ রাখাইন রাজ্যে রয়েছেন এমন প্রমাণ দেখাতে হবে, বাংলাদেশে জন্ম নেয়া শিশুর বাবা-মা উভয়কেই মিয়ানমারের স্থায়ী বাসিন্দা হিসাবে প্রমাণ দিতে হবে এবং রাখাইনে স্বেচ্ছায় ফিরে আসার ইচ্ছা ব্যক্ত করতে হবে।
এছাড়া মিয়ানমার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশের সাথে ১৯৯২ সালের যৌথ ঘোষণা অনুযায়ী নতুন চুক্তি করতে চায়। এই চুক্তির আওতায় কেবলমাত্র ২০১৬ সালের অক্টোবরের পরে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গারাই মিয়ানমার ফিরতে পারবেন। এছাড়া প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় মিয়ানমার তৃতীয় কোনো পক্ষ, অর্থাৎ জাতিসঙ্ঘের কোনো সংস্থার অন্তর্ভুক্তিতে আগ্রহী নয়।
তবে বাংলাদেশ ১৯৯২ সালের যৌথ ঘোষণা অনুযায়ী নয়, বরং এর আলোকে প্রত্যাবাসন চুক্তি করতে চায়। কেননা ১৯৯২ এবং ২০১৭ সালের পরিস্থিতি এক নয়। বিশেষ করে গত ২৫ আগস্টের পর বাংলাদেশে আসা ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গাদের অনেকেই কোনো কাগজপত্র সাথে করে আনার সুযোগ পাননি। নৃশংস হামলা তীব্রতা ও আগুন দিয়ে গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়ায় তারা শুধু প্রাণ নিয়ে পালিয়ে আসতে পেরেছেন। তাই চুক্তির ক্ষেত্রে নতুন পরিস্থিতিকে বিবেচনায় নিতে হবে। এছাড়া প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতার জন্য উদ্বাস্তু বিষয়ক জাতিসঙ্ঘ হাইকমিশন (ইউএনএইচসিআর) এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) অন্তর্ভুক্তি চায় বাংলাদেশ।
এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, বারবার অবস্থান পরিবর্তন করায় মিয়ানমারের প্রতিশ্রুতির ওপর আস্থা রাখা কঠিন। ১৯৯২ সালের পর বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের বড় অংশকে মিয়ানমার ফিরিয়ে নিয়েছিল ঠিকই, কিন্তু বেশ কিছু রোহিঙ্গাকে যাচাই-বাছাইয়ের পর ক্লিয়ারেন্স দিয়েও আর ফেরত নেয়নি। ২০০৫ সালের পর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয় মিয়ানমার। এ কারণে ২০১৬ সালের অক্টোবরের আগে বাংলাদেশে নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত তিন লাখের বেশি রোহিঙ্গার ভাগ্যে কি ঘটবে – তা অনিশ্চিত। নতুন প্রত্যাবাসন চুক্তিতে এসব দিক বিবেচনায় নেয়া হবে।
পাঠকের মতামত