প্রকাশিত: ০৬/০৯/২০১৭ ৭:২১ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ২:০১ পিএম

উখিয়া নিউজ ডেস্ক::
বাংলাদেশে সম্প্রতি অনুপ্রবেশকৃত রোহিঙ্গাদের উখিয়ার বালুখালীতে অস্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থা করবে সরকার। এছাড়া উখিয়ার কুতুপালং নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত ক্যাম্প, বালুখালী অনিবন্ধিত ক্যাম্প, টেকনাফের নয়াপাড়া নিবন্ধিত ক্যাম্প, লেদা অনিবন্ধত ক্যাম্প এবং শ্যামলাপুর অনিবন্ধিত ক্যাম্পে লাগবে কাঁটা তারের বেড়া। রোহিঙ্গারা থাকার জায়গা ও খাবারের সন্ধানে বিচ্ছিন্নভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়তে পারে- এমন আশঙ্কায় কাঁটা তারের বেড়া নির্মাণ করা হবে। এসব ক্যাম্পের পাহারায় আনসার নিয়োগ করা হবে। যেকোনো জরুরি প্রয়োজনে পুলিশ, র‌্যাব ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা দেবে। এছাড়া ক্যাম্প স্থাপনের পর নতুন করে স্থানান্তরিতদের গতিবিধি ও আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের জন্য পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থাকবে। অন্যদিকে অনিবন্ধিত রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রেকি ফিঙ্গার প্রিন্ট নেয়া হবে। সরকারের উচ্চপর্যায়ে এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। মিয়ানমার শরণার্থীদের আবাসন, খাদ্যসহ নানা সুবিধা নিশ্চিত করার ফর্মুলা ঠিক করতে গতকাল মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের কক্ষে এক অনির্ধারিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শাহ কামাল, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব ইশতিয়াক আহমদ, ভূমি সচিব ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার, কক্সবাজারের ডিসি মো. আলী হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এ সভায় বলা হয়, অনুপ্রবেশকৃত রোহিঙ্গাদের স্থাপনা নির্মাণ করে দেবে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) এবং বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) খাদ্য সহায়তা দেবে। এছাড়া ভূমি মন্ত্রণালয় স্থান নির্ধারণের বিষয়ে তাদের মতামত তুলে ধরে। সভায় সিদ্ধান্ত হয় রোহিঙ্গাদের আবাসন, খাদ্যসহ সব বিষয়ে সার্বিক ব্যবস্থাপনায় থাকবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। সব বিষয় দেখভাল করতে কাল রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো পরিদর্শনে যাচ্ছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া এবং একই মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহ কামালসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এ বিষয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শাহ কামাল মানবজমিনকে বলেন, অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হচ্ছে। শরণার্থীদের জন্য যা কিছু করণীয় আছে তার সবই আমরা করছি। আশা করছি কোনো সমস্যা হবে না। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, অনানুষ্ঠানিক তথ্য অনুযায়ী নতুন করে ৯৮ হাজার পাঁচশ’ জন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে। এর মধ্যে কুতুপালং নিবন্ধিত ক্যাম্পে ৪৮ হাজার, কুতুপালং অনিবন্ধিত ক্যাম্পে ৩০ হাজার, বালুখালী অনিবন্ধিত ক্যাম্পে ১২ হাজার, টেকনাফের নয়াপাড়া নিবন্ধিত ক্যাম্পে তিন হাজার পাঁচশ’, লেদা অনিবন্ধত ক্যাম্পে চার হাজার এবং শ্যামলাপুর অনিবন্ধিত ক্যাম্পে এক হাজার জন রোহিঙ্গা শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছে। এর বাইরে নতুন করে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের স্থান সংকুলানের মতো কোনো জায়গা ক্যাম্পে বা আশপাশে নেই। এজন্য অনেকটা বাধ্য হয়ে অনুপ্রবেশকারী আশ্রয়প্রার্থীদের নিবন্ধিত শরণার্থী ক্যাম্পের কমিউনিটি সেন্টার, স্কুল ও মসজিদ এবং খেলার মাঠে আশ্রয় দিতে হয়েছে। কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ৩৮ হাজার ৪৫৫ জন নিবন্ধিত রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছে। যদিও বাস্তবে ৩৩ হাজার ৫৪২ জন বসবাস করছেন। তাদের থাকার জন্য নির্ধারিত জায়গায় সদ্য অনুপ্রবেশকৃত ৫৬ হাজার পাঁচশ’ জনের থাকার ব্যবস্থা করায় দুটি ক্যাম্পে অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। রোহিঙ্গারা তিন শিফট করে এসব ক্যাম্পে ঘুমাচ্ছেন। পানি, চিকিৎসাসহ নানা নাগরিক সুবিধা পেতে সমস্যার মুখে পড়ছেন তারা। এর আগে মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ কারনে ১৯৯১-৯২ সালে দুই লাখ ৫০ হাজার ৮৭৭ জন মিয়ানমার নাগরিক বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এর মধ্যে দুই লাখ ৩৬ হাজার ৫৯৯ জনকে প্রত্যাবাসন করা হয়। তবে ওই সময় মিয়ানমার সরকারের অনিহার কারণে ২০০৫ সালের পর থেকে আর কোনো প্রত্যাবাসন কার্যক্রম শেষ করা যায়নি। ৩১শে আগস্ট পর্যন্ত এক হিসাবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় বলেছে, বর্তমানে কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার নয়াপাড়া এবং উখিয়া উপজেলার কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্পে ৩৩ হাজার ৫৪২ জন নিবন্ধিত শরণার্থী বসবাস করছে।
তবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় মনে করছে, রোহিঙ্গা নিয়ে বর্তমান পরিস্থিতির আগেই বাংলাদেশে প্রায় ৩-৫ লাখ অবৈধ অনুপ্রবেশকারী মিয়ানমার নাগরিক অবস্থান করছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বেশি সংখ্যায় রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের কারণে কক্সবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় মাদকপাচারসহ বিভিন্ন সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া রাজনৈতিক সমস্যা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই আগামীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি আরও বাড়বে।

পাঠকের মতামত

শেখ মুজিবকে স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করে পোস্ট, এসিল্যান্ড প্রত্যাহার

শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সিরাজুম মুনিরা ...

আলোচিত স্কুলছাত্রী টেকনাফের তাসফিয়া হত্যা: এবার তদন্ত করবে পুলিশ

চট্টগ্রামের আলোচিত স্কুলছাত্রী তাসফিয়া আমিন হত্যা মামলায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদনের ...