
নিউজ ডেস্ক::
মিয়ানমার থেকে আগত রোহিঙ্গাদের জন্য এ পর্যন্ত প্রায় ৪৪ হাজার ৬৬১টি অস্থায়ী শেড নির্মাণ করা হয়েছে। এসব শেডে এখন পর্যন্ত প্রায় ২ লাখ ৭০ হাজার রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।
মুখ্য সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সভাকক্ষে শুক্রবার মিয়ানমার থেকে আগত রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা প্রদান সংক্রান্ত এক সভায় এ কথা জানানো হয়।
ইউএনএইচসিআর ও আইওএম আরো ৪০ হাজার অস্থায়ী শেড নির্মাণ করে দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
সভায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব,সচিব,বিজিবির মহাপরিচালক,কোস্টগার্ডের মহাপরিচালক,সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রতিনিধি এবং বিভিন্ন দপ্তর সংস্থার প্রধান ও প্রতিনিধি ছাড়াও আইওএম এবং ইউএনএইচসিআর-এর প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন।
আরআরআরসি, জেলা প্রশাসক কক্সবাজার, পুলিশ সুপার, সিভিল সার্জন, বিজিবির প্রতিনিধি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সভার সঙ্গে যুক্ত হন।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা প্রদান সংক্রান্ত সভায় গৃহীত ২২টি সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয়।
সভায় জানানো হয়,রোহিঙ্গাদের অস্থায়ী শেড নির্মাণের জন্য নির্ধারিত দুই হাজার একর জায়গায় প্রায় ১৮ কিলোমিটার পরিধির বেষ্টনী তৈরি করতে এলজিইডি কার্যক্রম গ্রহণ করেছে।
ত্রাণ সামগ্রী সংরক্ষণের জন্য উখিয়ার ডিগ্রি কলেজের মাঠে এক লাখ বর্গফুট জায়গা নির্ধারণ করে তিনটি অস্থায়ী গুদাম নির্মাণ করা হয়েছে। ছয়টি নির্মাণাধীন রয়েছে এবং অবশিষ্ট ওয়ারহাউজগুলো নির্মাণের জন্য স্থান নির্ধারণের কাজ চলছে বলে জানানো হয়।
বাংলাদেশ বিমান বাহিনী চট্টগ্রাম বিমান বন্দরে এবং নৌবাহিনী চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে বিদেশ থেকে আগত ত্রাণ সামগ্রী খালাস এবং গ্রহণের কাজ করছে। এএফডি বিদেশী ত্রাণ সামগ্রী গ্রহণ ও পরিবহণের কাজটি সমন্বয় করছে। এ কাজে স্থানীয় প্রশাসনও সহযোগিতা করছে।
সভায় আরো জানানো হয়,প্রশাসনিক সুবিধার্থে নতুন আশ্রয়স্থলকে সাময়িকভাবে ১শ’ একর আয়তন বিশিষ্ট ২০টি ব্লকে ভাগ করা হয়েছে।
ত্রাণ গ্রহণ ও বিতরণের বিষয়ে জেলাপ্রশাসন প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। ত্রাণ সামগ্রী গ্রহণ ও বিতরণ কাজে সেনাবাহিনীর সদস্যরা নিয়োজিত আছেন।
আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য এই মুহূর্তে প্রয়োজনীয় ও অপরিহার্য ত্রাণ সামগ্রীর তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। এই তালিকা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। জেলা প্রশাসন ত্রাণ গ্রহণ, বিতরণ ও মজুদের দৈনন্দিন হিসাব সংরক্ষণ করছে।
রোহিঙ্গাদের জন্য ইতোমধ্যে তিন হাজার ৫১৭ টি সেনেটারি ল্যাট্রিন ও দুই হাজার ৪৬টি নলকুপ স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া রাস্তার পাশে প্রতিটি এক হাজার লিটার ধারণ ক্ষমতার আটটি ওয়াটার রিজার্ভার,১৪টি মোবাইল ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপনসহ প্রতিটি তিন হাজার লিটার ধারণ ক্ষমতার ছয়টি মোবাইল ওয়াটার কেরিয়ারের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে বলেও জানানো হয়।
বিদ্যুৎ বিভাগ অতিদ্রুত রোহিঙ্গাদের অস্থায়ী আবাসস্থলে এবং যে সব স্থানে রোহিঙ্গারা অস্থায়ীভাবে অবস্থান করছে, সে সব স্থানে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সংযোগের লক্ষ্যে ১৭ কিলোমিটার বিদ্যুৎ লাইন নির্মাণের কার্যক্রম শুরু করেছে। ইতোমধ্যেই ৬০ টি খুঁটি স্থাপন করা হয়েছে। বেসরকারি সংস্থা (সোলারিক) থেকে সোলার প্যানেল স্থাপনের প্রস্তাব পাওয়া গেছে।
বিচ্ছিন্নভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের অস্থায়ী শেডে নিয়ে যাওয়ার কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে উল্লেখ করে সভায় জানানো হয়। ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, মেম্বার ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জন্মনিবন্ধন সনদ ইস্যু করার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ২০টি বুথের মাধ্যমে এ পর্যন্ত ২৩ হাজার ৫৯২ জনের রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে।
ক্যাম্প এলাকায় পরিবার পকিল্পনা বিভাগের ছয়টি টিম কাজ করছে এবং ২৩২ জনকে জন্মনিরোধক সামগ্রী সরবরাহ করা হয়েছে,গর্ভবতী মা ও নবজাতকদের সার্বিক সহযোগিতার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ৩৬টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। এ পর্যন্ত ৩৪৫ জন প্রসূতি ও ৫২ হাজার ৪৬৩ জন রোগীকে বিভিন্ন সেবা দেওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত এক লাখ ৫ হাজার ৮৪৮ জন শিশুকে এমআর ভ্যাক্সিন, ৫৬ হাজার ৬৭২ জনকে ওপিভি ও ৫৮ হাজার ১০ জনকে ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানো হয়েছে বলে সভায় জানানো হয়।
বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়িতে অবস্থান নেয়া রোহিঙ্গাদের উখিয়া ক্যাম্পে স্থানান্তরের জন্য তাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে এবং এ পর্যন্ত দুই হাজার ৯২ জন রোহিঙ্গা এতিম শিশু তালিকাভুক্ত হয়েছে।
কক্সবাজারের ঝিলংজায় খাদ্য বিভাগের পাঁচটি এলএসডি গুদাম চট্টগ্রাম থেকে আসা ত্রাণ সামগ্রী সংরক্ষণে ব্যবহৃত হচ্ছে। ত্রাণ বিতরণ ব্যবস্থা নির্বিঘ্ন করতে এলজিইডি ছয়টি স্বল্প দৈর্ঘের সংযোগ সড়ক নির্মাণ করছে। ইতোমধ্যে একটি নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে।
এ ছাড়াও সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে,দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়,রোহিঙ্গা আশ্রয়প্রার্থীদের মানবিক সহায়তা প্রদানে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে নিয়মিত সভা করে সার্বিক সমন্বয়ের কাজ করবে।
সংশ্লিষ্ট এলাকার আইনশঙ্খলা ও নিরাপত্তারক্ষা এবং ত্রাণ কাজে সার্বিক শৃংখলা বজায় রাখার স্বার্থে এএফডি, বিজিবি, পুলিশ বিভাগ, আনসার সমন্বিতভাবে কার্যক্রম গ্রহণ করবে। ত্রাণ বিতরণ সংক্রান্ত প্রতিবেদন নিয়মিতভাবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে প্রেরণ করতে হবে। কক্সবাজারে সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়ে নিয়মিত সমন্বয় সভা করে ত্রাণ কার্যক্রমকে গতিশীল করবে। বিভাগীয় কমিশনার চট্টগ্রাম ও আরআরআরসি বান্দরবানে আশ্রয়গ্রহণকারী রোহিঙ্গাদেরকে কক্সবাজারে স্থানান্তরের বিষয়টি সমন্বয় করবেন। ত্রাণ বিতরণে জেলা প্রশাসক সার্বিক সহায়তা করবে। এ ক্ষেত্রে যাতে কোনো অনিয়ম না হয় সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় চাহিদা অনুযায়ী জনবল নিয়োগের ব্যবস্থা নিবে এবং ত্রাণ কার্যক্রমে যে কোনো জরুরি বিষয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নজরে আনতে হবে।
পাঠকের মতামত