প্রকাশিত: ১৬/০৯/২০২০ ৮:৩৩ পিএম

সেই ২০১৮ সাল থেকেই বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বহু রোহিঙ্গা গ্রাম জ্বালিয়ে ও বুলডোজারে গুঁড়িয়ে দেওয়ার আলামত উঠে এসেছিল। জাতিসংঘ কমিশন স্যাটেলাইটের ছবি এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের স্বাক্ষ্যের ভিত্তিতে বলছে, সম্প্রতি নতুন করে উত্তর রাখাইনে বিস্তৃর্ণ এলাকা পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। মানচিত্র থেকে মুছে ফেলা হচ্ছে রোহিঙ্গা গ্রামের নাম-চিহ্ন। এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে মিয়ানমার। তবে মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) এসব ঘটনার স্বাধীন তদন্ত দাবি করেছেন। মিশেল ব্যাচেলেটের অভিযোগের প্রসঙ্গে জানতে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের ফোনকলে সাড়া দেয়নি মিয়ানমারের সেনা মুখপাত্র।

রিগনভিত্তিক মার্কিন সংবাদ মাধ্যম ইউরো এশিয়া রিভিউ ২০১৮ সালের মার্চে জানায়, ২০১৭ সালে শেষ থেকে মিয়ানমার সরকার ভারী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে তখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৪৫৫টি গ্রামের সব অবকাঠামো ও ফসলের ক্ষেত ধ্বংস করে দেয়। একই বছর ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমার সেনাবাহিনী অর্ধশতাধিক গ্রাম বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে বলে দাবি করে মার্কিন মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস। বলা হচ্ছিল, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত সামরিক বাহিনীর নিধনযজ্ঞের আলামত ধ্বংস করতেই গ্রামগুলোতে বুলডোজার চালানো হয়েছে। একই বছরে এএফপির প্রতিবেদনে উঠে আসে রাখাইন বৌদ্ধদের জন্য ‘আদর্শ বৌদ্ধ গ্রাম’ নির্মাণের কথা। প্রতিবেদনে বলা হয়, বৌদ্ধদের অর্থায়নে এবং সেনা মদতে বেসরকারি প্রকল্প পরিচালনার মাধ্যমে রোহিঙ্গাশূন্য রাখাইন গড়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হচ্ছে। ওই প্রকল্পের উপদেষ্টাদের একজন রাখাইনের আইনপ্রণেতা উ হ্লা বলেন, সিআরআরের উদ্দেশ্য, রাজ্যের রাজধানী সিতউয়ে থেকে শুরু করে মংডু শহর পর্যন্ত প্রায় ১০০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের একটি রোহিঙ্গাশূন্য ‘বাফার জোন’ প্রতিষ্ঠা করা। রোহিঙ্গাদের অস্তিত্বের সব চিহ্ন মুছে ফেলার সেই প্রক্রিয়া এখনও চলমান।

জেনেভায় মানবাধিকার কমিশনের ৪৫তম অধিবেশনে ব্যাচেলেট বলেন, আগে যেখানে রোহিঙ্গা গ্রাম ছিলো সেই অঞ্চলগুলো পুনর্গঠন করছে মিয়ানমারের সরকারি প্রশাসকেরা। সরকারি মানচিত্র থেকে সরিয়ে ফেলা হচ্ছে গ্রামের নাম আর ওই ভূমি বদলে দেওয়ারও চেষ্টা করছে মিয়ানমার। মিশেল ব্যাচেলেট বলেন, ‘এগুলো অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে এবং আগের অবস্থা ফিরিয়ে দেওয়া উচিত।’

তবে তা অস্বীকার করছে মিয়ানমার সরকার। মিশেল ব্যাচেলেট বলেন, বেসামরিক নাগরিকদের গুম ও বিচারবর্হিভূত হত্যা, ব্যাপক বাস্তুচ্যুতি, বিনাবিচারে আটক, নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু এবং বেসামরিক জনগণের সম্পত্তি নষ্টের দিকে নজর ফেরানোর আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। বলেছেন, ‘এসব অভিযোগ স্বাধীন এবং মাঠ পর্যায়ের তদন্তের প্রয়োজনীয়তাকে সামনে এনেছে।’

প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে রোহিঙ্গারা রাখাইনে থাকলেও মিয়ানমার তাদের নাগরিক বলে স্বীকার করে না। উগ্র বৌদ্ধবাদকে ব্যবহার করে সেখানকার সেনাবাহিনী ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে স্থাপন করেছে সাম্প্রদায়িক অবিশ্বাসের চিহ্ন। ছড়িয়েছে বিদ্বেষ। ৮২-তে প্রণীত নাগরিকত্ব আইনে পরিচয়হীনতার কাল শুরু হয় রোহিঙ্গাদের। এরপর কখনও মলিন হয়ে যাওয়া কোনও নিবন্ধনপত্র, কখনও নীলচে সবুজ রঙের রশিদ, কখনও ভোটার স্বীকৃতির হোয়াইট কার্ড, কখনও আবার ‘ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ড’ কিংবা এনভিসি নামের রঙ-বেরঙের পরিচয়পত্র দেওয়া হয়েছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানুষকে। ধাপে ধাপে মলিন হয়েছে তাদের পরিচয়। ক্রমশ তাদের রূপান্তরিত করা হয়েছে রাষ্ট্রহীন বেনাগরিকে।

মিশেল ব্যাচেলেট জানান, আগামী নভেম্বরে মিয়ানমারের আসন্ন নির্বাচনে বেশিরভাগ রোহিঙ্গাই ভোট দিতে পারবেন না। একে হতাশাজনক উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বড় অংশকে বিরত রাখা হবে, যদিও আগে তাদের প্রার্থী হওয়া এবং ভোটাধিকার প্রয়োগের স্বীকৃত দেওয়ার পরও তা কার্যকরভাবে কেড়ে নেওয়া হয়।’

পাঠকের মতামত

মিয়ানমার জান্তা ঘনিষ্ঠদের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার

মিয়ানমারের সামরিক জান্তাঘনিষ্ঠ চার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন অর্থ ...

বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের ব্ল্যাকলিস্ট, তালিকায় এক ডজন দেশ

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের জন্য বিশ্বজুড়ে ভ্রমণ ও ভিসা পাওয়া আগের চেয়ে অনেক বেশি কঠিন ...

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে আসিয়ান

রাখাইন রাজ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টায় মিয়ানমারের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে আসিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। পাশাপাশি ...

ফিলিস্তিনপন্থি গ্রুপকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে ভোট দিয়েছেন টিউলিপ

যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে প্রো-প্যালেস্টাইন কর্মসূচির সংগঠন ‘প্যালেস্টাইন অ্যাকশন’কে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করে নিষিদ্ধ করার প্রস্তাবে ...