প্রকাশিত: ২৯/০৮/২০১৯ ৮:৪৯ পিএম , আপডেট: ২৯/০৮/২০১৯ ৮:৫১ পিএম

নিউজ ডেস্ক :
রোহিঙ্গাদের জন্য ‘ধারাল অস্ত্র’ তৈরির অভিযোগ ওঠায় মুক্তি কক্সবাজার নামে একটি এনজিওর ছয়টি প্রকল্প সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি কক্সবাজারে শরণার্থী শিবিরে রোহিঙ্গাদের সমাবেশে তাদের হাতে ধারাল অস্ত্র দেখার পর আলোচনার মধ্যে এই পদক্ষেপ নিয়েছে এনজিও বিষয়ক ব্যুরো।

ব্যুরোর মহাপরিচালক কে এম আবদুস সালাম বৃহস্পতিবার বলেন, “কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের মধ্যে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য মুক্তির ছয়টি প্রকল্প সাময়িক স্থগিত করে তাদের কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়েছে।”

এনজিও ব্যুরোর উপপরিচালক এবং ব্যুরোর রোহিঙ্গা বিষয়ক সেলের ফোকাল পয়েন্ট আব্দুল্লাহ আল খায়রুম বলেন, রোহিঙ্গাদের নিয়ে মুক্তি কক্সবাজারের যে ছয়টি প্রকল্প চলছিল, সেগুলোর কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।

কী কারণে এই সিদ্ধান্ত- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এনজিও ব্যুরোর অনুমোদিত যেসব সামগ্রী বিতরণ করার কথা, তা না মেনে তারা আইটেম তৈরি ও বিতরণ করছে, যা আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।”

রোহিঙ্গা সঙ্কটের দ্বিতীয় বছর র্পূর্তিতে গত সপ্তাহে শরণার্থী শিবিরে বিশাল সমাবেশ করে মিয়ানমারের এই নাগরিকরা।

ওই সময়ে কক্সবাজারের উখিয়ার কোটবাজার এলাকায় একটি কামারের দোকান থেকে লোহার তৈরি ধারাল প্রায় সাড়ে ছয়শ’ সরঞ্জাম জব্দ করা হয়।

স্থানীয়রা অভিযোগ তোলে, রোহিঙ্গা শিবিরে বিতরণের জন্য তৈরি করা হচ্ছিল এসব ‘ধারাল অস্ত্র’।

তবে মুক্তি কক্সবাজারের কর্মকর্তারা দাবি করেন, ওগুলো কৃষি কাজে ব্যবহারের ‘নিড়ানি’ এবং সেগুলো রোহিঙ্গাদের মধ্যে বিতরণের জন্য তৈরি করা হয়নি।

মিয়ানমার থেকে বিতাড়নের দুই বছর পূর্তিতে কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে রোহিঙ্গাদের সমাবেশ

মিয়ানমার থেকে বিতাড়নের দুই বছর পূর্তিতে কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে রোহিঙ্গাদের সমাবেশ

আব্দুল্লাহ আল খায়রুম বলেন, “এগুলো নিড়ানি বা যা-ই বলুক, এটা এনজিও ব্যুরোর অনুমোদিত ছিল না। সেজন্য স্থগিত করা হয়েছে তাদের কার্যক্রম।”

দুই বছর গড়ালেও এখনও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মিয়ানমার ফেরাতে সফলতা না আসার পেছনে নানা ষড়যন্ত্রের কথা সরকারের কর্তা-ব্যক্তিরা বলে আসছেন।

শরণার্থী শিবিরে কর্মরত কিছু এনজিও রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরতে নিরুৎসাহিত করছে বলেও অভিযোগ তুলেছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

এর পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে এনজিও ব্যুরোর মহাপরিচালক সালাম বলেছিলেন, তারা মাঠের তথ্যের অপেক্ষায় আছেন, তা পেলে পদক্ষেপ নেবেন।

তার একদিনের মধ্যে বুধবার মুক্তি কক্সবাজারের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন এনজিও ব্যুরোর আদেশ এল।

এনজিও ব্যুরোর অ্যাসাইনমেন্ট অফিসার সিরাজুল ইসলাম খান স্বাক্ষরিত পত্রে বলা হয়, “রোহিঙ্গাদের মাঝে বিতরণের জন্য এনজিও ব্যুরোর অনুমোদনহীন মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হাতিয়ার (৬০০০টি নিড়ানি) তৈরির কারণে মুক্তি কক্সবাজারের চলমান প্রকল্পের সব কার্যক্রম স্থগিত করা হয়।”

মুক্তি কক্সবাজারের যে ৬টি প্রকল্প স্থগিত হয়েছে, সেগুলো হচ্ছে-নন ফরমাল এডুকেশন প্রোগ্রাম ফর দ্য চিলড্রেন অব ফোর্সিবলি ডিসপ্লেসড মিয়ানমার ন্যাশনাল; স্ট্রেংদেনিং রেজিলেন্স অ্যান্ড ফুড সিকিউরিটি অব ফোর্সিবলি ডিসপ্লেসড মিয়ানমার ন্যাশনাল অ্যান্ড লস্ট কমিউনিটি ইন টেকনাফ; ইম্প্রুভ অব ওয়াটার, স্যানিটেশন, হাইজিন ফর দ্য ফোর্সিবলি ডিসপ্লেসড মিয়ানমার ন্যাশনাল অ্যান্ড লস্ট কমিউনিটি ইন কক্সবাজার; এনহেন্সিং লার্নিং আউটকামস ফর ফোর্সিবলি ডিসপ্লেসড মিয়ানমার ন্যাশনাল ইন উখিয়া; ইম্প্রুভ ডব্লিউএএসএইচ থ্রু ফেসাল স্লাজ ম্যানেজমেন্ট এ্যান্ড বাথিং কিউবিকল ফর দ্য ডিসপ্লেস পার্সনস ফ্রম মিয়ানমার ইন কক্সবাজার এবং প্রটেকশন ইনিশিয়েটিভ ফর দ্য আন একাম্প্যানিড অর অরফান চিলড্রেন ইন কক্সবাজার।

মুক্তি কক্সবাজারের প্রধান নির্বাহী বিমল চন্দ্র দে সরকার জানান, তাদের ৩০টি প্রকল্প চলমান, তার মধ্যে ছয়টির কার্যক্রম স্থগিত করতে বলা হয়েছে।

“ছয়টির বিষয়ে আমরা চিঠি পেয়েছি। আপাতত ছয়টির কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।”

অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে তিনি বলেন, “প্রকৃত পক্ষে আমরা কৃষি উপকরণ হিসেবে নিড়ানি প্রস্তুতের অর্ডার দিয়েছিলাম। যাকে দেওয়া হয়েছিল কাজ, সে সেগুলো কোথায় বানাতে দিয়েছে, জানি না। এখন বলেছে, উখিয়ায় এসব তৈরি করেছে। এসব নিড়ানি আমরা এখনও রিসিভ করিনি, বিতরণও করা হয়নি।”

বিমল দে বলেন, এক বছরের জন্য ছয়টি প্রকল্পে ৩ কোটি ৪০ টাকার কাজ করার কথা। ২ লাখ টাকায় এসব নিড়ানি তৈরি করা হচ্ছিল।

তার বক্তব্য অনুযায়ী, টেকনাফের হ্নীলায় তাদের একটি কৃষিভিত্তিক প্রকল্প চালু রয়েছে। ওই প্রকল্পের অধীনে স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে কৃষির উন্নয়নে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণ শেষে তাদের সার, বীজ, স্প্রে মেশিন এবং নিড়ানিসহ বিভিন্ন কৃষি উপকরণ বিতরণ করা হয়।

“তদন্ত করলেই প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে। তদন্ত হলে জানা যাবে, কৃষি উপকরণের জন্যই এসব করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ হাতিয়ার বা অনুমোদনহীন কিছু বিতরণের প্রশ্নই উঠে না।”

মুক্তি কক্সবাজারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে নিড়ানি তৈরির বিষয়টি ভিন্নভাবে প্রচার করা হয়েছে বলে দাবি করেন বিমল দে।

“আসলে আমাদের কাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বা বানোয়াট কিছু করা হয়েছে।”

দুই বছরে ৬ এনজিওর কার্যক্রম স্থগিত

রোহিঙ্গা সঙ্কট শুরুর পর নানা অভিযোগে এ পর্যন্ত ছয়টি এনজিওর কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।

এগুলো হল ইসলামিক রিলিফ, ইসলামিক এইড, মুসলিম এইড, স্মল কাইন্ডনেস বাংলাদেশ, বাংলাদেশ চাষী কল্যাণ সমিতি ও নমিজান আস্থাবি ফাউন্ডেশন।

২০১৭ সালের অগাস্টে মিয়ানমারের রাখাইরে সেনা অভিযান শুরুর পর নির্যাতনের মুখে প্রাণ বাঁচাতে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশ সীমান্তে ছুটতে থাকে। দুই বছরে এই সংখ্যা ৭ লাখ ছাড়িয়েছে।

তাদের আশ্রয় দেওয়া হয় কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ার বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে; সেখানে আগে আসা আরও চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা রয়েছে।

রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে দেশি-বিদেশি নানা এনজিও কাজ করে আসছে।-বিডিনিউজ

পাঠকের মতামত

পাহাড় থেকে সেনা ও বাঙালি প্রত্যাহার করতে হবে, জাতিসংঘে সন্তু লারমার নাতনি

নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সদরদফতরে অনুষ্ঠিত আদিবাসী ইস্যু-বিষয়ক স্থায়ী ফোরামের (UNPFII) ২৪তম অধিবেশনে পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী ...

উখিয়ায় মা’হাদুত তাকওয়া মহিলা হিফজ মাদ্রাসা’র যাত্রা শুরু

উখিয়া উপজেলাধীন হলদিয়া পালং ইউনিয়নের পশ্চিম হলদিয়া জামবাগান অবস্থিত নারীদের জন্য বিশুদ্ধ কোরআন সুন্নাহর জ্ঞান ...

কুতুপালং বাজারের সাদ্দাম ও আরাফাতের নেতৃত্বে সীমান্ত দিয়ে মায়ানমারে পাচার হচ্ছে নিত্যপণ্য

মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে কক্সবাজার ও বান্দরবানের সীমান্ত দিয়ে নিত্যপণ্যের সঙ্গে পাচার হয়ে যাচ্ছে ইউরিয়া সার ...

উখিয়ায় ইউএনএইচসিআর’র স্থাপনায় তালা ঝুলালো বন বিভাগ

কক্সবাজারের উখিয়ার থাইংখালী বিট এলাকায় জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের একটি স্থাপনার বিরুদ্ধে উচ্ছেদ নোটিশ ...