প্রকাশিত: ২৭/০৯/২০১৭ ৯:২৮ পিএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ১২:৫৯ পিএম
ফাইল ছবি

গিয়াস উদ্দিন ভুলু , টেকনাফ::
পাশ্ববর্তীদেশ মিয়ানমার রাখাইন রাজ্যের উৎপাদিত বিভিন্ন প্রকার মাদক দ্রব্য সীমান্ত অতিক্রম করে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে প্রবেশ করে আসছে। চিহ্নিত মাদক কারবারীরা তাদের এই অবৈধ ব্যবসা অব্যাহত রেখে রাতা-রাতি কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যাচ্ছে। আর এই মাদক দ্রব্য গুলো সেবন করে মেধা শুণ্য হয়ে যাচ্ছে এই দেশের যুব সমাজ। অপরদিকে মিয়ানমারের মাদক কারবারীরা তাদের মাদক বিক্রি করে বাংলাদেশ থেকে নিয়ে যাচ্ছে কোটি কোটি টাকা।

তথ্যঅনুন্ধানে জানা যায়, গত ২৫ আগষ্ট মিয়ানমার রাখাইন রাজ্যে সাম্প্রাদায়িক সহিংসতা শুরু হওয়ার পর। রাখাইন সেনাদের বর্বরতা ও নির্যাতনের শিকার হয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে প্রায় প্রায় ৮ লক্ষ রোহিঙ্গা। মানবিক দিক বিবেচনা করে এই অসহায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয় সরকার। অথচ এই রোহিঙ্গারাই মাদক পাচারসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ডে সক্রিয় ভাবে জড়িত। মিয়ানমারে সহিংস ঘটনার পর থেকে বেশ কয়েক দিন টেকনাফ উপজেলা সীমান্ত দিয়ে ইয়াবা পাচার অনেকটা কমে গিয়েছিল। কিন্তু সেই ধারাবাহিকতা বেশি দিন ধরে রাখতে পারেনি চিহ্নিত ইয়াবা পাচারকারীরা। ইয়াবা পাচারকারীরা বিভিন্ন কৌশলে তাদের সেই মাদক বানিজ্য অব্যাহত রেখেছে। টেকনাফ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে গোপন তথ্য নিয়ে জানা যায়, গত কয়েক দিনের ভিতর প্রায় ৫০ লক্ষ ইয়াবা সীমান্ত অতিক্রম করে এই উপজেলায় প্রবেশ করেছে। ইয়াবা পাচারের সাথে সক্রিয় ভাবে জড়িত মিয়ানমার থেকে নতুন আসা রোহিঙ্গারা। এদিকে টেকনাফ ২ বিজিবি সীমান্ত প্রহরীর সদস্যরা উপকুলীয় বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৫-৬ দিনের ব্যবধানে প্রায় ১০ লক্ষ ইয়াবা উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। এই ইয়াবা গুলোর সাথে জড়িত থাকার অপরাধে আটক হয় বেশ কয়েকজন পাচারকারী। এদের মধ্যে বেশির ভাগ রোহিঙ্গা। সেই ধারাবাহিকতা নিয়ে ২৭ সেপ্টেম্বর কক্সবাজার-৭ এর সদস্যরা গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শাহপরীরদ্বীপের পশ্চিম দিকে গভীর সমুদ্রে অভিযান চালিয়ে একটি ফিশিং ট্রলার থেকে ৮ লক্ষ ইয়াবাসহ ৪ জন পাচারকারীকে আটক করতে সক্ষম হয়। এদের মধ্যে তিন জন মিয়ানমারের রোহিঙ্গা অন্যজন বাংলাদেশী। তারা হচ্ছে মংন্ডু হাস্যুরাতা এলাকার আবুল বশরের পুত্র হাফিজুল্লাহ (২৪), নারীরবিল এলাকার মৃত হোসেনের পুত্র বদি আলম (৪৫) বুসিদং কিতারবিল এলাকার মৃত নজু মিয়ার পুত্র মো: জমিল (২৪), টেকনাফ সদর ইউনিয়নের ধুমপারাংবিল এলাকার মৃত সোবাহান হাওলাদার পুত্র মো: আলী (৪৫)। উদ্ধারকৃত ইয়াবার মুল্য ৪০ কোটি টাকা।

টেকনাফ উপজেলার আইন শৃংখলা বাহিনীর হাতে ইয়াবাসহ রোহিঙ্গারা সক্রিয়ভাবে জড়িত থাকায় এবং ইয়াবাসহ তাদের আটকের খবরে টেকনাফ উপজেলার সুশীল সমাজের মাঝে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ বলছে মিয়ানমারের উৎপাদিত ইয়াবাসহ বিভিন্ন প্রকার মাদক দ্রব্য গুলো আমাদের এলাকায় নিয়ে আসছে মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গারা। আবার অনেকে বলছে এই রোহিঙ্গাদের কারনে এই দেশের যুব সমাজ আজ ধ্বংসের পথে। তারা দু:খ প্রকাশ করে আরো বলেন, এই রোহিঙ্গারা মুসলিম জাতী বলে আমরা তাদেরকে বছরের পর বছর ধরে আশ্রয় দিয়ে যাচ্ছি। অথচ তারা বেশি টাকার লোভে পড়ে মাদক পাচারসহ এমন কোন অপরাধ নেই যা তারা ব্যবহার হচ্ছে না। তার পাশাপাশি এই গবীর অসহায় রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ডে ব্যবহার করে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যাচ্ছে স্থানীয় চোরাকারবারীরা। তাই আমাদের দাবি যতই তাড়াতাড়ি সম্ভব এই রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে ফেরত নিয়ে যাওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক ভাবে চাপ প্রয়োগ করতে হবে। তা নাহলে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা আর ইয়াবা আগ্রাসনে ধ্বংস হয়ে যাবে এই সোনার বাংলাদেশ।

এই অভিযানের সত্যতা নিশ্চিত করে কক্সবাজার-৭ সিপিসি-২ কোম্পানী কমান্ডার মেজর মো: রুহুল আমিন জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারি এই দেশে বেশ কয়েকটি সংঘবদ্ধ মাদক কারবারী চক্র মাছ ব্যবসার আড়ালে ইয়াবার বড় বড় চালান মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে নিয়ে আসে। সেই তথ্যের ভিত্তিতে আমাদের সদস্যরা টেকনাফ উপজেলার উপকুলীয় পয়েন্ট গুলোতে অবস্থান নেয়। অবশেষে দীর্ঘ পরিশ্রমের পর ২৭ সেপ্টেম্বর ভোররাত সাড়ে ৪ টার দিকে একটি ফিশিং ট্রলারের অন্তরালে থাকা ৮ লক্ষ ইয়াবাসহ ৪ জন পাচারকারীকে আটক করতে সক্ষম হয়। আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায় এই ইয়াবা চালানটি কক্সবাজার নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। সাংবাদিকদের প্রশ্বের জবাবে তিনি আরো বলেন, এই ইয়াবা পাচারের সাথে কারা কারা জড়িত এবং ইয়াবা পাচারের মুলহোতা কারা তাদের বিরুদ্ধে অনেক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। সেই তথ্য গুলো সঠিক ভাবে যাছাই বাচাই করে খুব শিগ্রই অপরাধীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে তাদের আইনের আওয়াতাই নিয়ে আসব।

পাঠকের মতামত

শেখ মুজিবকে স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করে পোস্ট, এসিল্যান্ড প্রত্যাহার

শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সিরাজুম মুনিরা ...

আলোচিত স্কুলছাত্রী টেকনাফের তাসফিয়া হত্যা: এবার তদন্ত করবে পুলিশ

চট্টগ্রামের আলোচিত স্কুলছাত্রী তাসফিয়া আমিন হত্যা মামলায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদনের ...