প্রকাশিত: ০৯/০৮/২০১৭ ৫:০৮ পিএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ৩:২৭ পিএম

নিউজ ডেস্ক::
নিজেদের আলিশান ফ্ল্যাটে ইয়াবার গোডাউন গড়ে তুলেছিল আসমা আহমেদ ডালিয়া (৩৭) ও তার বোন ফারজানা আক্তার স্বপ্না (৩০)। সেখান থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা, সাভার ও রাজশাহীতে পাঠানো হতো মরণনেশা ইয়াবা। খুচরা নয়, তারা পাইকারি বিক্রি করত। ওই দু’জনের মা মনোয়ারাসহ পরিবারের সব সদস্যই ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। ডালিয়া, স্বপ্না ও মনোয়ারা মাদকজগতে ‘ইয়াবা সম্রাজ্ঞী’ হিসেবেই পরিচিত। মাত্র কয়েক বছর এই অবৈধ ব্যবসা করে তারা কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে।
রাজধানীর কলাবাগান ও এলিফ্যান্ট রোডে রয়েছে দুটি ফ্ল্যাট, যার আনুমানিক মূল্য ছয় কোটি টাকা। এ ছাড়া ইয়াবা বহনের জন্য রয়েছে একটি বিলাসবহুল গাড়ি। কোটি টাকা ব্যাংক লেনদেনের তথ্যও মিলেছে। মা, ফুফু ও স্বামীসহ গ্রেফতারের পর দুই বোনের অঢেল সম্পত্তির বিষয়টি সামনে উঠে এসেছে। তাদের সিন্ডিকেটের আরও অন্তত ১০ সদস্যকে খুঁজছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
৯ জুলাই ৫০ হাজার পিস ইয়াবাসহ মনোয়ারা, ডালিয়া ও তার স্বামী রবিউল ইসলাম, স্বপ্না ও তার স্বামী শামীম আহমেদ এবং ফুফু মাহমুদা রানীকে গ্রেফতার করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) ঢাকা মেট্রো উপ-অঞ্চল। এলিফ্যান্ট রোড, পশ্চিম রাজাবাজার ও কলাবাগান এলাকার বাসা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এ ব্যাপারে কলাবাগান ও নিউমার্কেট থানায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। এ মামলা তদন্ত করছেন ডিএনসির ঢাকা মেট্রো উপ-অঞ্চলের দুজন পরিদর্শক। গ্রেফতার ছয়জনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্ত কর্মকর্তারা। কীভাবে তারা

ইয়াবা ব্যবসায় নেমেছে, কোথা থেকে ইয়াবা আসে, কোথায় কাদের কাছে বিক্রি করে সেসব বিষয়ে তারা চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, স্বপ্নার স্বামী শামীম আহমেদের বাড়ি যশোরের বেনাপোলের কাগজপুকুর গ্রামে। ১৯৯৮ সালে শামীম হেরোইন ব্যবসা শুরু করে। থাকত ঢাকার বিভিন্ন এলাকায়। হেরোইন ব্যবসা মন্দা হওয়ায় ২০০৬ সালে ইয়াবার ব্যবসা শুরু করে। ওই সময় সে কলাবাগানের ভূতের গলিতে থাকত। একই এলাকায় বোন ডালিয়াকে নিয়ে থাকত স্বপ্না। ভূতের গলিতে শামীম-স্বপ্নার পরিচয় ও প্রেম। এরপর তাদের বিয়ে হয়। স্বপ্না সুন্দরী হওয়ায় ২০০৮ সালের দিকে তাকে ইয়াবা বহনের কাজে লাগায় শামীম। ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় স্বপ্না বিক্রেতাদের কাছে ইয়াবা পৌঁছে দিত। বিয়ের কয়েক মাসের মাথায় স্বপ্না বিত্তশালী হয়ে ওঠায় বড় বোন ডালিয়াও একই পথে পা বাড়ায়।
ডালিয়ার স্বামী রবিউল ও মা মনোয়ারাও যোগ দেয় তাদের সঙ্গে। দুই বোন, তাদের স্বামী ও মা মিলে গড়ে তোলে ইয়াবার সিন্ডিকেট। সিন্ডিকেটে আরও কয়েকজন সদস্য রয়েছে। ইয়াবা ব্যবসা করে ডালিয়া এলিফ্যান্ট রোডের ১৭৩ নম্বর ভবনে ১৬৬০ স্কয়ার ফিটের একটি ফ্ল্যাট এবং স্বপ্না কলাবাগানে সেল হাসনা হেনায় ১৮০০ স্কয়ার ফিটের একটি ফ্ল্যাট কিনে বসবাস শুরু করে। এ দুটি ফ্ল্যাটে তারা ইয়াবার গোডাউন গড়ে তোলে। পশ্চিম রাজাবাজারের একটি ভাড়া ফ্ল্যাটে থাকত মনোয়ারা। দুই বোন ইয়াবার টাকায় মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম গড়েছে বলে তথ্য পেয়েছেন তদন্তসংশ্লিষ্টরা। ডালিয়ার বড় ছেলে মালয়েশিয়ায় পড়ালেখা করছে।
সূত্র আরও জানায়, চট্টগ্রামের দুই ইয়াবা ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ডালিয়া ও স্বপ্না প্রতি মাসে অন্তত দেড় লাখ পিস ইয়াবা ঢাকায় আনে। এরপর তারা মিরপুর, বাড্ডা, যাত্রাবাড়ী, কারওয়ান বাজারসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা, সাভার ও রাজশাহীতে তা সরবরাহ করত। একজনের কাছে ৫০০ পিসের কম ইয়াবা বিক্রি করত না। গাড়িতে করে ইয়াবা পৌঁছে দেওয়া হতো। ঢাকার আটজন ও চট্টগ্রামের দু’জন ইয়াবা ব্যবসায়ীর তথ্য পেয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তারা।
মামলা দুটির তদন্ত কর্মকর্তা ডিএনসির ঢাকা মেট্রো উপ-অঞ্চলের পরিদর্শক হেলাল উদ্দিন ভূঁইয়া ও সুমনুর রহমান বলেন, গ্রেফতারকৃতরা চট্টগ্রাম থেকে একটি কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ঢাকায় ইয়াবা আনত। তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। জড়িত অন্যদের গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে।

পাঠকের মতামত