উখিয়া নিউজ ডেস্ক::
নির্বাচন কমিশনের চলমান ছবি সহ ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম মাঠ পর্যায়ে ৯ আগষ্ট পর্যন্ত চলবে। রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে উখিয়ায় ভোটার হওয়ার উপর্যুক্ত শত শত নারী পুরুষ ব্যাপক বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর স্বচ্ছল, সচেতন আগ্রহী রোহিঙ্গারা নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত বিশেষায়িত দেশে ৩০ উপজেলা সহ অন্যান্য এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে বিচ্ছিন্ন ভাবে। তাদের প্রধান লক্ষ্য যেকোন মূল্যে ভোটার তালিকায় অর্ন্তভুক্ত হওয়া। মোটা অংকের অর্থ নিয়ে তারা ওই অতৎপরতা চালাচ্ছে। ব্যক্তি উদ্যোগের পাশাপাশি একাধিক রোহিঙ্গা সংগঠন ভোটার তালিকাভুক্তিতে প্রয়োজনীয় অর্থের যোগান দিচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
২০০৮ সালের পর থেকে কক্সবাজার জেলার উখিয়া, টেকনাফ সহ কয়েকটি উপজেলায় বিদেশী নাগরিক তথা মিয়ানমার রোহিঙ্গা ভোটার অর্ন্তভুক্তিতে নির্বাচন কমিশন বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করে। স্থানীয় সচেতন মহলে একটি অংশের ব্যাপক প্রতিরোধের মুখে প্রশাসন রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকাভুক্তির ব্যাপারে ব্যাপক কড়াকড়ি আরোপ করে। রোহিঙ্গারাও কৌশল পাল্টে চট্টগ্রাম, তিন পার্বত্য চট্টগ্রাম ও কক্সাবাজার জেলার অসন্দেহ প্রবন উপজেলাগুলোতে সঠিক তথ্য গোপন করে অনেক রোহিঙ্গা ভোটার তালিকাভুক্তির খবর পাওয়া গেছে। সংশিষ্ট এলাকায় কতিপয় প্রভাবশালী তাদের ঘরবাড়ি, খামার সহ বিভিন্ন পেশায় কাজ করার সুবাদে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহায়তায় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরী করে রোহিঙ্গারা ভোটার হয়েছে ও হচ্ছে। একই পন্থায় এবারও মোটা অংকের মিশন নিয়ে রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে ভোটার হতে আটঘাট বেধে ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র। রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকাভুক্তির পিছনে পাকিস্তান, সৌদিআরব, কুয়েত, মালয়েশিয়া ভিত্তিক রোহিঙ্গাদের কয়েকটি সংগঠন প্রয়োজনীয় অর্থের যোগান দিচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
উখিয়ার কুতুপালং শরনার্থী শিবিরের নিবন্ধিত রোহিঙ্গা শরনার্থী মোঃ ইউনুছ চট্টগ্রামের হাটাজারী পুরাতন মসজিদ দ্বিতীয় তলা ফটিকার ঠিকানায় ১৫১৩৭৫৯৩৩০২১৩ নং বাংলাদেশী জাতীয় পরিচয়পত্র বানিয়ে নিয়ে ভোটার অর্ন্তভুক্তি হয়েছে। একইভাবে টেকনাফের নয়াপাড়া শরনার্থী শিবিরের নিবন্ধিত রোহিঙ্গা জয়নাল আবেদীন ০৩০২৯৫৩৭৪৯৩২ নং এন.আই.ডি কার্ডধারি হয়ে বর্তমানে উখিয়ার কুতুপালং বাজারে ডাক্তার হিসেবে নিয়োজিত রয়েছে। ১৯৭৮ সালে আসা রোহিঙ্গা হোছন আহমদ ১৯৫৬২২১৯৪৪৭০২২৩৩৫ নং এন.আই.ডি ধারি। সে উখিয়া টাইপালং এলাকার ঠিকানা দিয়ে তার পরিবারের ৫ সদস্যের এন.আই.ডি ধারি ও ভোটার তালিকাভুক্ত হয়েছে। অথচঃ বিশেষ এলাকার বাসিন্দা হিসেবে উখিয়া উপজেলা সহ বিভিন্ন এলাকার ভোটার হওয়ার উপযোগী শত শত নারী পুরুষ নানা বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছে। ইউনিয়ন পরিষদ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে স্থানীয় অধিবাসিরা ভোটার হওয়ার জন্য নানা কাগজপত্র জোগাড় করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে অসংখ্য লোকজনের অভিযোগ। এখানকার অসংখ্যা লোক বিভিন্ন দেশে অবৈধভাবে দীর্ঘদিন অবস্থান করে ট্রানজিট পাস নিয়ে দেশে ফিরলেও এসব লোকের কাছে বৈধ পাসপোর্ট না থাকায় তারা চরম বিপাকে পড়ছে। অথচঃ শত শত নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানের ভুয়া ঠিকানা ও তথ্য দিয়ে ভোটার তালিকা ভুক্ত হয়ে বাংলাদেশী এন.আই.ডি ধারি হয়ে গেছে।
নির্বাচন কমিশন এবারের ভোটার তালিকায় বিদেশী নাগরিক ঠেকাতে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের বিশ উপজেলার স্থলে নতুন ভাবে আরো ১০ উপজেলাকে বিশেষ এলাকা হিসেবে ঘোষনা করেছে। কক্সবাজার জেলার সদর, রামু, উখিয়া, টেকনাফ, চকরিয়া, পেকুয়া, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, পার্বত্য বান্দরবানে ৭ উপজেলা বান্দরবান সদর, রুমা, থানচি, আলিকদম, লামা রোয়াং ছড়ি, নাইক্ষ্যংছড়ি, রাঙ্গামাটি জেলার ৮ উপজেলা রাঙ্গামাটি সদর, লংগদু, রাজস্থলি, বিলাইছড়ি, কাপ্তাই, বাঘাইছড়ি, বরকল, জুরাছড়ি, চট্টগ্রাম জেলার ৭ উপজেলা আনোয়ারা, বাঁশখালী, বোয়ালখালী, সাতকানিয়া, লোহাগড়া, চন্দনাইশ ও পটিয়া উপজেলাকে নির্বাচন কমিশন বিশেষ এলাকা হিসেবে ঘোষনা করেছে। এসব উপজেলার ২০০১ সালের জানুয়ারীর পূর্বে জন্ম গ্রহণকারী ভোটার আগ্রহীদের মা, বাবা, চাচা, ফুফু, স্বামীর এন.আই.ডি, জন্মনিবন্ধন সনদ, জাতীয়তা সনদ, জায়গা জমির খতিয়ান/ভুমিহীন সনদ, হোল্ডিং ট্যাক্স অথবা বিদ্যুৎ বিলের কপি, প্রবাসী হলে বৈধ পাসপোর্ট, বিয়ের কাবিন নামা সহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি মাঠ পর্যায়ে ভোটার তথ্য সংগ্রহকারীদের নিকট দিতে হচ্ছে। উল্লেখিত ৩০ উপজেরা ছাড়াও চট্টগ্রাম সিটি খাগড়াছড়ির কয়েকটি উপজেলা চট্টগ্রামের রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, ফটিকছড়ি, হাটহাজারী, সীতাকুন্ড, মীরসরাই উপজেলা সহ ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি, গাজিপুর সিটি সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তথ্য গোপন করে রোহিঙ্গারা ভোটার হওয়ার জন্য ছড়িয়ে পড়ছে বলে নির্বরযোগ্য সূত্রে খবর পাওয়া গেছে।
এ ছাড়াও মাঠ পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহের পর উপজেরা নির্বাহী অফিসারের নেতৃত্বে গঠিত বিশেষ যাচাই বাছাই কালে নিবন্ধিত নারী পুরুষদের স্ব-শরীরে উপস্থিত হয়ে বর্ণিত কাগজপত্র প্রদর্শন করতে হবে। ওই বিশেষ কমিটিতে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসার, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, নির্বাচন অফিসার, ডিজিএফআই, এন.এস.আই, এসবি, বিজিবি, আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তাগণ রয়েছে।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাঈন উদ্দিন বলেন, ভোটার তথ্য সংগ্রহকারী ও সুপারভাইজারদের রোহিঙ্গারা যাতে ভোটার তালিকায় অর্ন্তভুক্ত হতে না পারে সে জন্য কঠোরতা অবলম্বন করা হচ্ছে। তা ছাড়া নির্বাচন কমিশন মাত্র সাড়ে তিন শতাংশ নিবন্ধন ফরম দেওয়ায় এখানে অনেক লোক বাদ পড়ে যাওয়ার আশংখ্যা করা হচ্ছে। সুত্র দৈনিক কক্সবাজার
পাঠকের মতামত