উখিয়া নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৮/০৫/২০২৪ ৯:২৩ এএম
ফাইল ছবি

বান্দরবান থেকে কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া—দুর্গম এই সীমান্ত এলাকা ঘিরে দীর্ঘদিন ধরে অস্থিরতা চলছে। পাশের দেশ মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ গোলযোগের প্রভাব পড়ছে এসব সীমান্ত এলাকায়। পাশাপাশি সম্প্রতি পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের অপতৎপরতাও বেড়েছে। টেকনাফ-উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘিরে অস্ত্র-মাদক, সন্ত্রাসীদের তৎপরতা আর খুনোখুনিতে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, পাহাড়ে স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে এখনই এ ধরনের কর্মকাণ্ড শক্তহাতে মোকাবিলা করতে হবে, নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে হবে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা আরও বলছেন, রোহিঙ্গা সমস্যার দ্রুত সমাধান করা গেলে টেকনাফ-উখিয়া এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা সম্ভব হবে। তা না হলে ক্যাম্পকেন্দ্রিক মাদক-অস্ত্রের ঝনঝনানি বাড়তে থাকবে। এর জেরে ক্যাম্পে খুনোখুনির প্রভাব পড়তে পারে বাইরে স্থানীয় বাসিন্দাদের ওপর। পাশাপাশি সীমান্ত এলাকাকে আরও সুসংহত করার তাগিদ দিয়ে তারা বলেছেন, সীমান্ত এলাকার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজিয়ে পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী ও সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর দিকে গোয়েন্দা কার্যক্রম বাড়াতে হবে। অরক্ষিত সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করাসহ যুগোপযোগী পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদও দিয়েছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।

মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে চলমান অভ্যন্তরীণ লড়াইয়ে টিকতে না পেরে মাঝেমধ্যেই সীমান্ত পেরিয়ে দেশটির সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর (বিজিপি) সদস্য ও সেনাসদস্যরা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিচ্ছেন। তাদের অভ্যন্তরীণ যুদ্ধে মাঝেমধ্যেই কেঁপে উঠছে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকা। সম্প্রতি উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পাশের গহিন লাল পাহাড় থেকে আর্জেস গ্রেনেড, মিলিটারি গ্রেনেডসহ অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করেছে র্যাব। ওই ঘটনায় মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরকান স্যালভেশন আর্মির (আরসা) দুই কমান্ডারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এসব অস্ত্র ও গোলাবারুদের সঙ্গে মিয়ানমারের অস্ত্রশস্ত্রের সাদৃশ্য পাওয়ায় উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। এর বাইরে বান্দরবানে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী গ্রুপ কুকি-চিন বা কেএনএফ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। এর মধ্যে অস্ত্রের মুখে দুটি ব্যাংকের তিনটি শাখায় লুট করেছে কেএনএফ সন্ত্রাসীরা। এই গ্রুপটি সশস্ত্র হামলা ও ব্যাংকে লুটপাট ছাড়াও পুলিশ ও আনসার সদস্যকে মারধর করে অস্ত্র ও গুলি ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা ঘটায়।

এমন পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা বাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও বসে নেই। পার্বত্য অঞ্চলের শান্তিশৃঙ্খলা ধরে রাখতে এরই মধ্যে বান্দরবানে যৌথ অভিযান শুরু হয়েছে। অভিযানে সফলতাও পাওয়া যাচ্ছে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) এ কে মোহাম্মদ আলী শিকদার কালবেলাকে বলেন, ‘মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ ঝামেলার যে প্রভাব বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকায় পড়ছে, তা নিয়ে আমাদের বেশি কিছু করার নেই। তবে যথাযথভাবে আমাদের সীমান্ত সুরক্ষা করার কাজটা করতে হবে। এর বাইরে বান্দরবানের ভেতরে কেএনএফসহ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো যে অপতৎপরতা চালাচ্ছে, তা কঠোর হাতে দমন করতে হবে। এজন্য পার্বত্য অঞ্চলে নিরাপত্তা বাহিনীর ক্যাম্পগুলোর কার্যক্রম আরও জোরদার করতে হবে, শক্তিশালী করতে হবে। এটা শুধু পুলিশ দিয়ে সম্ভব নয়। এজন্য সশস্ত্র বাহিনীকে কাজে লাগাতে হবে।’

রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘিরে সন্ত্রাসী তৎপরতার বিষয়ে এই নিরাপত্তা বিশ্লেষক বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের মধ্য থেকে জন্ম নেওয়া সন্ত্রাসী গ্রুপ আরসা বা অন্যান্য গ্রুপগুলো অর্থের জন্য মাদক ও অস্ত্র পাচার করছে। এর জেরে ক্যাম্পে অপহরণ ও প্রতিনিয়ত খুনের মতো ঘটনা ঘটছে। তবে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘিরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা যেভাবে থাকা দরকার, সেটা আমরা নিশ্চিত করতে পারিনি। এজন্যই সন্ত্রাসী গোষ্ঠী অপরাধ করতে ক্যাম্পগুলো ব্যবহারের সুযোগ পেয়েছে।’

রোহিঙ্গা ক্যাম্পকেন্দ্রিক মাদক-অস্ত্র আর সন্ত্রাসী ঠেকাতে না পারলে সামনে আরও বেশি নিরাপত্তা সংকট সৃষ্টি হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে মোহাম্মদ আলী শিকদার বলেন, ‘আরসার মতো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে ছাড় দেওয়া ঠিক হবে না, এখনই এদের বিষয়ে কঠোর হতে হবে। এজন্য সব বাহিনীর সমন্বয়ে ক্যাম্পের নিরাপত্তায় বিশেষ টাক্সফোর্স গঠন করা যেতে পারে। ক্যাম্প ঘিরে কাঁটাতারের বেষ্টনী নিশ্চিত করাসহ সিসি ক্যামেরাও বসানো যেতে পারে। পাশাপাশি ক্যাম্পগুলোতে কারা প্রবেশ করে, আশপাশে কারা অবস্থান করে, তা কঠোর নজরদারির আওতায় নিতে হবে।’

এদিকে পুলিশের একটি সূত্র জানায়, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ১০টির বেশি সন্ত্রাসী গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে, যাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় দুটি গ্রুপ হলো আরসা ও আরএসও। ক্যাম্পগুলোতে গত বছর ৬৪ এবং ২০২৪ সালে চলতি মাস পর্যন্ত ১৬ জন হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন।

স্থানীয়রা বলছেন, ক্যাম্প ঘিরে কাঁটাতারের বেষ্টনী থাকলেও তা কোনো কাজে আসছে না। কাঁটাতারের এই বেষ্টনীর জায়গায় জায়গায় কেটে ফেলা হয়েছে। বেষ্টনী উঠিয়ে চলাচলের রাস্তা বানিয়েছে সন্ত্রাসীরা। ক্যাম্পে দায়িত্ব পালন করা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর অফিসের সামনে ও অল্প কিছু স্থানে সিসি ক্যামেরা থাকলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা কম। ক্যাম্পের বাইরে নির্দিষ্ট পয়েন্টে পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সদস্যরা দায়িত্ব পালন করে। চেকপোস্টের মাধ্যমে ক্যাম্পের ভেতরে আসা-যাওয়া নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বও এপিবিএনের।

দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া না হলে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তা কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার শঙ্কার কথা জানিয়ে নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) আ ন ম মুনীরুজ্জামান কালবেলাকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে একটা উদ্ধাস্তু জনগোষ্ঠী থাকলে এ ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়, যেগুলো এখন আমাদের দেশে হচ্ছে। মিয়ানমারে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে সংঘর্ষের নানা ধরনের প্রভাব এখানে পড়ছে। এখানে বিভিন্ন গোষ্ঠীর স্বার্থ চলে আসছে। দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।’

ক্যাম্পের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘আঞ্চলিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ঢেলে সাজাতে হবে। মাদকের ট্রান্সপোর্টার হিসেবে রোহিঙ্গারা ব্যবহৃত হচ্ছে, এটাও বন্ধ করতে হবে। ক্যাম্পে অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে হবে।’

নিরাপত্তার ফাঁক গলে সন্ত্রাসীরা ক্যাম্পের ভেতর যে ঢুকছে, তা স্বীকার করেছেন এপিবিএন-৮-এর অধিনায়ক অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক আমির জাফর। তবে নিয়মিত অভিযান চালানোর মাধ্যমে ক্যাম্পের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

আমির জাফর কালবেলাকে বলেন, ‘আমাদের টানা অভিযানের ফলে ক্যাম্পের ভেতরে আরসার যে অবস্থান ছিল, তা এখন নষ্ট হয়েছে। তারা বাইরে অবস্থান করছে। ক্যাম্পের পাশে বিভিন্ন পাহাড়ে এরা হয়তো আস্তানা গেড়েছে। ওখান থেকে মধ্যরাতে বা শেষ রাতের দিকে হুটহাট করে ক্যাম্পে ঢুকে টার্গেটে হামলা করছে। তবে ক্যাম্পের বাইরেও পুলিশ-র্যাব অভিযান চালাচ্ছে।’সুত্র: কালবেলা

পাঠকের মতামত

তারেক রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদমুক্ত হয়েছে: সালাহউদ্দিন আহমদ

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল মানে গণতন্ত্রের ঠিকানা। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত ...

হাসপাতালে ঢুকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সংগঠকসহ ১০ জনকে পিটুনি

লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ঢুকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠকসহ অন্তত ১০ জনকে পিটিয়ে আহতের ...

আজ পবিত্র ঈদুল আজহা

ত্যাগ আর উৎসর্গের আদর্শে মহিমান্বিত পবিত্র ঈদুল আজহা আজ। আরবি মাসের ১০ জিলহজ তারিখে এই ...

এপ্রিলের প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন, প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা

২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ...