প্রকাশিত: ১৮/১১/২০১৭ ৯:৫৯ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ১০:৫৭ এএম

উখিয়া নিউজ ডেস্ক::
মিয়ানমারে দমন-পীড়নে বাংলাদেশে নতুন আসা রোহিঙ্গারাও বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করছে। সম্প্রতি চট্টগ্রাম বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসে পাসপোর্ট করতে আসা এমন সাত রোহিঙ্গাকে আটক করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এরপরই প্রশাসনের সর্বস্তরে কঠোর নজরদারি রাখার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। তবে এবারই প্রথম নয়, এর আগে কমপক্ষে দেড় লাখ রোহিঙ্গা বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে বিদেশে পাড়ি দিয়েছে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী রোহিঙ্গা রয়েছে। বিদেশে গিয়ে রোহিঙ্গাদের কেউ কেউ অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে এবং তাদের অপরাধের দায় বর্তাচ্ছে বাংলাদেশের ওপর। সংশ্নিষ্ট একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সমকালকে বলেন, অতীতে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি না থাকায় বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের নাগরিকদের অনেকেই এ সুযোগ কাজে লাগিয়েছে। এখন আর সেটি করা সম্ভব হবে না। রোহিঙ্গাদের কেউ সন্ত্রাস ও সমাজবিরোধী কাজ করলে তাদের শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। ইতিমধ্যে এই বার্তা রোহিঙ্গাদের মধ্যে প্রচার করা হয়েছে। পাশাপাশি তারা যাতে পাসপোর্ট তৈরি করতে না পারে সে জন্য প্রশাসনকেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে কেউ রোহিঙ্গাদের সহযোগিতা করলে তার বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ সব বিষয় কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, নির্যাতনের মুখে গত দুই দশক ধরে পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশে আসা মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকেই বেছে নিয়েছে। গত এক বছর আগে তাদের অনেকেই সাগরপথে মালয়েশিয়ায় গেছে। অতীতেও রোহিঙ্গারা মিয়ানমার সীমান্ত পেরিয়ে এসে বাংলাদেশি সেজে পাসপোর্ট করে সুযোগ বুঝে মধ্যপ্রাচ্যে চলে গেছে। সম্প্রতি আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে অনেকেই সুযোগ মতো বিদেশে পাড়ি দেওয়ার কৌশল নিচ্ছে। আর তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে এক শ্রেণির দালাল। তাদের মাধ্যমে জন্মসনদ নিয়ে তারা পাসপোর্ট তৈরির চেষ্টা করছে। অতীতে যেসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে তাদের অনেকেই স্থানীয় জনসাধারণের সঙ্গে মিশে গেছে। স্থানীয় ভাষা এবং চেহারায় যথেষ্ট মিল থাকার ফলে কক্সবাজারের বাসিন্দাদের থেকে তাদের আলাদা করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

জানা গেছে, মালয়েশিয়ায় যাওয়া রোহিঙ্গারা বাংলাদেশি পরিচয়ে সেখানে অবস্থান করছে। সাম্প্রতিক সময়ে অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে চালানো অভিযানে অনেক রোহিঙ্গা আটক হয়। এ ছাড়াও প্রতি বছর হজ মৌসুমে অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে পাড়ি দিচ্ছে। আবার অনেকেই ওমরাহ ভিসায়ও যাচ্ছে। সৌদি সরকার আকামা (কাজ করার অনুমোদন) দেওয়ার ক্ষেত্রে রোহিঙ্গাদের প্রতি সদয় অনেকটাই হওয়ায় সেই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে তারা। শুধু সৌদি আরবেই এখন প্রায় পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা রয়েছে। তাদের মধ্যে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীও রয়েছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের সামজিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির জন্য বিশাল সমস্যা। মানবিক কারণে তাদের আশ্রয় দেওয়া হলেও বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে না। তাই কক্সবাজার জেলার বাসিন্দাদের জন্যেও জন্ম নিবন্ধনের পাশাপাশি পুলিশ ভেরিফিকেশনে কঠোর হতে বলা হয়েছে। পাসপোর্ট অধিদপ্তর থেকে সংশ্নিষ্টদের এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

রোহিঙ্গাদের অবস্থানের কারণে আগে শুধু চট্টগ্রাম বিভাগকে ঝুঁকির মধ্যে রাখা হলেও এখন অন্যান্য বিভাগেও একইভাবে দেখতে বলা হয়েছে। কারণ রোহিঙ্গারা এখন দেশের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। কোথাও কোথাও আত্মীয়তা সৃষ্টি করে স্থায়ীভাবে বসবাস করছে।

গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর হামলার পর বাংলাদেশে ছয় লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা প্রবেশ করেছে। তাদের মধ্যে অনেকেই চট্টগ্রাম বিভাগ থেকেই অন্যান্য বিভাগে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। বিভিন্ন সময়ে তারা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতেও ধরা পড়ছে। ফলে তারা বিভিন্ন কৌশলে পাসপোর্ট তৈরির সুযোগ নিতে পারে। এ পরিপ্রেক্ষিতে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে রোহিঙ্গাদের নিবন্ধনের পাশাপাশি যে কোনো ব্যক্তির পাসপোর্ট তৈরির ক্ষেত্রে কঠোরভাবে পুলিশ ভেরিফিকেশন করতে সংশ্নিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি একটি গোয়েন্দা সংস্থা জানিয়েছে, কয়েক দশক ধরে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা শুধু পর্যটন জেলা কক্সবাজারের নয়, গোটা বাংলাদেশের সামাজিক ও অর্থনীতির জন্য বড় ঝুঁকি। বর্তমানে বিভিন্ন ক্যাম্পে থাকা প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গার ব্যাপারে এখনই লাগাম টেনে ধরতে হবে। তাদের গতিবিধির ওপর নজরদারি জোরদার এবং নির্দিষ্ট এলাকার বাইরে চলাচলে সীমাবদ্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

কক্সবাজার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রতিরোধ কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য আদিল চৌধুরী সমকালকে বলেন, দেড় লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যসহ মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে রয়েছেন। তাদের যে কোনো অপকর্ম বাংলাদেশের জন্য ক্ষতিকর। সুত্র: সমকাল

পাঠকের মতামত

মিয়ানমারের আরেক গুরুত্বপূর্ণ শহর বিদ্রোহীদের দখলে

মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা দেশটির আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ শহরের দখল নিয়েছে। মিয়ানমারের জান্তাবিরোধী সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী তা’আং ...

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ও দূরপাল্লার ট্রেন পটিয়া স্টেশনে যাত্রা বিরতির দাবি

চট্টগ্রাম–কক্সবাজার ও দূরপাল্লার ট্রেন পটিয়া স্টেশনে যাত্রা বিরতিসহ বিভিন্ন দাবিতে রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিমকে স্মারকলিপি দিয়েছেন ...