
মিয়ানমারে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ভূমিকম্পে উদ্ধার ও চিকিৎসা সহায়তা প্রদানের জন্য বাংলাদেশি দলের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে দেশটির সরকার। বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) সকালে রাজধানী নেপিদোর তাবাউং গ্রাউন্ডে আয়োজিত এক আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশি অনুসন্ধান ও উদ্ধার এবং চিকিৎসা দলকে সম্মাননা জানানো হয়।
এ সময় রাজ্য প্রশাসন পরিষদের ভাইস-চেয়ারম্যান, উপ-প্রধানমন্ত্রী ও ভাইস-সিনিয়র জেনারেল সো উইন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে দলটির সদস্যদের হাতে প্রশংসাপত্র ও উপহার তুলে দেন। আরও উপস্থিত ছিলেন—কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা, নেপিদো কাউন্সিলের চেয়ারম্যান, উপ-মন্ত্রীরা, মিয়ানমারে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ড. মো. মনোয়ার হোসেন এবং দূতাবাসের অন্যান্য কর্মকর্তারা।
অনুষ্ঠানে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালনের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। পরে ভাইস-সিনিয়র জেনারেল সো উইন তার বক্তব্যে বলেন, এই দুর্যোগে বাংলাদেশ যেভাবে দ্রুত ও আন্তরিকভাবে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে, তা মিয়ানমার কখনো ভুলবে না। তাদের এই মানবিক সহায়তা নিঃস্বার্থ এবং নিখুঁত বন্ধুত্বের নিদর্শন।
জানা গেছে, বাংলাদেশি দলের নেতৃত্বে ছিলেন কর্নেল শামীম ইফতেখার ও কর্নেল নাসির। মোট ৫৫ সদস্যের এই দলটি ১ এপ্রিল নেপিদো পৌঁছায় এবং ৬৯ ধরণের আধুনিক সরঞ্জামসহ উদ্ধার অভিযানে অংশ নেয়। উদ্ধার দল মিয়ানমার ফায়ার ব্রিগেডের সহযোগিতায় ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে থাকা মানুষকে উদ্ধার করে। চিকিৎসা দল ১ থেকে ৭ এপ্রিল পর্যন্ত বিভিন্ন হাসপাতাল ও মোবাইল ক্লিনিকের মাধ্যমে মোট ৫২৭ জন রোগীকে সেবা প্রদান করে। যার মধ্যে ৪টি বড় অস্ত্রোপচার অন্তর্ভুক্ত।
বাংলাদেশি প্রকৌশলী দল ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলো পরিদর্শন করে এবং সম্ভাব্য বিপদের বিষয়ে সতর্কতা ও সুপারিশ প্রদান করে। এই দলটি পূর্বে নেপাল ও তুরস্কেও ভূমিকম্প-উত্তর সহায়তায় অংশগ্রহণ করেছিল।
অনুষ্ঠানের শেষে বাংলাদেশি দলের সদস্যদের জন্য নৈশভোজের আয়োজন করা হয়। আগামী ১৩ এপ্রিল এই দলটি একটি বাংলাদেশি জাহাজে করে দেশে ফিরে আসার কথা রয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ২৮ মার্চ মিয়ানমারে সংঘটিত ভূমিকম্পে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ও মানবিক বিপর্যয় নেমে আসে। দেশব্যাপী ৬০ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি, ৩ হাজার ৫১৪টি মঠ ও সন্ন্যাসী প্রতিষ্ঠান, ২ হাজার ৩৬৬টি স্কুল, ৩ হাজার ৬৭৮টি বিভাগীয় অফিস ও ভবন, ১৫৫টি সেতু এবং ৫ হাজার ৬২০টি প্যাগোডা সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ধ্বংস হয়ে যায়।
মানবিক দিক থেকে ভূমিকম্পটি ছিল অত্যন্ত মর্মান্তিক। এখন পর্যন্ত ৩ হাজার ৬৪৯ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে। আহত হয়েছেন ৫ হাজার ১৮ জন এবং নিখোঁজ রয়েছেন আরও ১৪৫ জন। উদ্ধার কার্যক্রমে মিয়ানমার ও আন্তর্জাতিক দলগুলো সম্মিলিতভাবে ৬৫৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে। একইসঙ্গে ৭১৮ জন মৃতদেহও উদ্ধার করা হয়েছে।
পাঠকের মতামত