প্রকাশিত: ১৮/০৮/২০১৯ ১০:৪৮ এএম
ফাইল ছবি

পণ্য পরিবহন তাদের মূল উদ্দেশ্য নয়। পণ্যের আড়ালে ইয়াবা পাচারই হচ্ছে তাদের উদ্দেশ্য। চালক ও তার সহকারীর সঙ্গে আঁতাত করে এসব যানবাহনে ইয়াবাসহ নানা ধরনের মাদক দেশের এক জেলা থেকে অন্য জেলায় পাচার করছে মাদক ব্যবসায়ীরা। এ কাজ করতে গিয়ে প্রায় সময়ই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হচ্ছেন মোটরযানের চালক ও তার সহকারী, জব্দ হচ্ছে যানবাহন। আর মামলার আলামত হিসেবে জব্দ হওয়া এসব ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান মামলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত জব্দ থাকায় একদিকে এসব যানবাহনের আয়ুষ্কাল শেষ হয়ে আসছে, অন্যদিকে বাড়ছে এর বিপরীতে নেয়া ঋণের সুদ। গত ১২ দিনে পণ্যবাহী চারটি ট্রাক ধরা পড়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জালে। জব্দ করা হয়েছে ৪৩ হাজার ৭০০ ইয়াবা।
গতকাল ১৭ আগস্ট শনিবার ভোরে কঙবাজারে পেঁয়াজ রেখে ইয়াবা নিয়ে ঢাকায় ফেরার পথে ২৬ হাজার ইয়াবাসহ একটি ট্রাক আটক করেছে র‌্যাব। নগরীর বাকলিয়া থানার শাহ আমানত সেতুর সংযোগ সড়ক থেকে ট্রাক আটকের পর চালক মশিউর রহমান লিটনকে (৩৫) গ্রেফতার করা হয়। র‌্যাব-৭ এর সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) এএসপি মাশকুর রহমান আজাদীকে জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শাহ আমানত সেতু সংযোগ সড়কে রাজবাড়ি কমিউনিটি সেন্টারের সামনে থেকে ট্রাকটি আটক করা হয়। পরে ট্রাকে তল্লাশি চালিয়ে বিশেষ কৌশলে রাখা ২৬ হাজার ২০০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। এএসপি মাশকুর বলেন, ট্রাকচালক লিটন জানিয়েছে, পেঁয়াজ নিয়ে ঢাকা থেকে কঙবাজারের উখিয়া গিয়েছিল সে। ফেরার পথে সে ইয়াবা নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছিল। এভাবে ট্রাকে মালামাল পরিবহনের আড়ালে আগেও ইয়াবা সংগ্রহ করে ঢাকায় নিয়ে গিয়েছিল।
গত ১০ আগস্ট সবজির আড়ালে ইয়াবা পরিবহনের সময় একটি ট্রাক আটক করে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। বিকালে কোতোয়ালী থানার তিন পুলের মাথা এলাকা থেকে আটক ওই ট্রাক থেকে ছয় হাজার ইয়াবা উদ্ধার ও দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলেন, ট্রাক চালক শাকিল (১৯) ও সহকারী সাকিব (১৯)। তাদের বাড়ি কঙবাজারের চকরিয়া উপজেলার ডুলহাজারায়। গোয়েন্দা পুলিশের এএসআই সন্তু শর্মা আজাদীকে বলেন, ট্রাকটি চকরিয়া থেকে সবজি নিয়ে চট্টগ্রামের রেয়াজউদ্দিন বাজারে আসছিল। গোপন খবরের ভিত্তিতে বিকালে ফিরিঙ্গি বাজার ব্রিজঘাট এলাকায় ট্রাকটিকে থামানোর সংকেত দিলে চালক দ্রুত চলে যায়। ট্রাকটি ধাওয়া করে তিন পুলের মাথায় আটক করা হয়। এসময় চালক ও সহকারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে চালকের পাশের আসনের সিট বেল্টের বঙে বিশেষ কৌশলে রাখা ছয় হাজার ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। এএসআই সন্তু বলেন, ট্রাকটিতে সবজির আড়ালে ইয়াবা আনা হয় কঙবাজার থেকে। রেয়াজউদ্দিন বাজারে সবজি রেখে ট্রাকটি রেল স্টেশনের পার্কিংয়ে রাখা হয়। সেখান থেকে মো. মনসুর নামের আরেক ট্রাক চালক মালামাল নিয়ে ঢাকায় চলে যায়। তিনি বলেন, গাড়ির মালিক মনসুরের সম্পৃক্ততায় ট্রাকটিতে করে ইয়াবা পাচার করা হয়। সবজির সাথে চট্টগ্রামে ইয়াবা আনা হয়। সেখান থেকে ঢাকায় ইয়াবা পাচার করা হয়।
গত ৬ আগস্ট ঢাকায় ইয়াবা পাচারের সময় চট্টগ্রামে একটি ট্রাক থেকে দুইজনকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। ডবলমুরিং থানার মনসুরাবাদ এলাকায় ট্রাকটি আটক করে দেড় হাজার ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলেন ট্রাকচালক আবু নাঈম (২১) এবং তার সঙ্গী মো. সোহাগকে (২১)। গোয়েন্দা পুলিশের এএসআই সন্তু শর্মা জানান, তারা কঙবাজার থেকে ইয়াবা সংগ্রহ করে ঢাকার রামপুরা নিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, বিকালে মনসুরাবাদ এলাকায় ট্রাকটিকে সংকেত দেওয়া হয়। এসময় গ্রেফতার সোহাগ নিজেকে ঢাকা ডিবি পুলিশের সোর্স পরিচয় দিয়ে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে। আমাদের সন্দেহ হওয়ায় ট্রাকটি তল্লাশি করে চালকের আসনের নিচে বিশেষ কৌশলে রাখা এক হাজার ৫০০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, মালামাল আনা নেয়ার পাশাপাশি কঙবাজার থেকে ইয়াবা নিয়ে ঢাকার রামপুরা এলাকায় প্রতি পিচ ৩০০ টাকায় বিক্রি করে।
৫ আগস্ট কুষ্টিয়া থেকে আনা গরু হাটে রেখে ইয়াবা নিয়ে ফেরার পথে পুলিশের হাতে ধরা পড়েন এক ট্রাকচালক। নগরীর দেওয়ান হাট এলাকা থেকে রাতে ১০ হাজার ইয়াবাসহ ট্রাকটি আটক করা হয় বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (পশ্চিম) এএএম হুমায়ুন কবির। গ্রেফতারকৃত রশিদুল ইসলামের (৪০) বাড়ি কুষ্টিয়ায়। পুলিশ কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির বলেন, রশিদুল ট্রাকে করে কুষ্টিয়া থেকে চট্টগ্রামে গরু এনেছিলেন। কর্ণফুলী উপজেলার মইজ্জ্যার টেক এলাকায় হাটে গরু রেখে উখিয়া উপজেলার পানিরছড়া এলাকায় যায়। সেখান থেকে ইয়াবা সংগ্রহ করে। রাতে গোপন সংবাদ পেয়ে গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল ট্রাকটি আটক করে জানান তিনি। চালক রশিদুলের বিরুদ্ধে ডবলমুরিং থানায় মামলা হয়েছে।
এদিকে পরিবহন মালিকরা বলছেন, তাদের অজ্ঞাতসারেই চালক ও তার সহকারীরা বাস, ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানে মাদক পাচার করে থাকেন। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে ধরা পড়ার পর তাদের পাঠানো হয় কারাগারে। আর যানবাহনগুলো মামলার আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়। মামলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত এসব যানবাহন আদালতের হেফাজতে সংরক্ষিত থাকে। মাদকের মামলাগুলো শেষ হতে অন্তত ৩ থেকে ১০ বছর সময় লেগে যায়। সেক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় জব্দ থাকা যানবাহনগুলোর আয়ুষ্কাল শেষ হয়ে যায়। পাশাপাশি ব্যাংক লোনের মাধ্যমে কেনা এসব যানবাহনের কিস্তিও ঠিকমতো পরিশোধ করতে পারেন না তারা।আজাদী

পাঠকের মতামত

মরিচ্যা- খুনিয়াপালং সিএনজি চালক ও টমটম শ্রমিক কল্যাণ সমিতির নির্বাচন সম্পন্ন

উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয়েছে মরিচ্যা- খুনিয়াপালং সিএনজি চালক ও টমটম শ্রমিক কল্যাণ সমিতির নির্বাচন। ...

চট্টগ্রামে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতদের পরিবারের পাশে ‘কোর্টবাজার দোকান মালিক সমিতি’

চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতির জাঙ্গালিয়া এলাকায় ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ও আহত কোর্টবাজারের ব্যবসায়ীদের পরিবারের ...

‘প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে’ সরকারি চাকরির আড়ালে ইয়াবা ব্যবসা!

কক্সবাজারের উখিয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে’ সরকারি চাকরির আড়ালে ইয়াবা ব্যবসা মনিরের, ১ লাখ ...

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীতকরণের নির্দেশনা

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ককে ছয় লেনে উন্নীত করার দাবির প্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সড়ক ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ...