সুদানে চলমান সংঘাতে নিজেদের তিনজন কর্মী নিহত হওয়ার পর দেশটিতে কার্যক্রম স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতিসংঘের খাদ্য বিষয়ক সংস্থা ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম (ডব্লিউএফপি)। গতকাল রোববার এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছেন ডব্লিউএফপির নির্বাহী পরিচালক সিন্ডি ম্যাককেইন।
বিবৃতিতে বলা হয়, সুদানে চলমান নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে সেখানে আমাদের সব ধরনের কার্যক্রম স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছি। দেশটির খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় থাকা মানুষদের সহায়তা করতে ডব্লিউএফপি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কিন্তু আমাদের অংশীদারদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা না পেলে সেখানে জীবনরক্ষাকারী কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া সম্ভব না।
প্রসঙ্গত, সুদানে সেনাবাহিনীর সঙ্গে আধাসামরিক বাহিনীর সংঘর্ষে গতকাল পর্যন্ত অন্তত ৫৬ জন বেসামরিক মানুষ নিহত হওয়ার খবর দিয়েছে রয়টার্স। এছাড়া আরো ডজন ডজন সেনা নিহত হয়েছে বলেও জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি।
দেশটিতে মোহাম্মদ হামদান দাগালোর নেতৃত্বাধীন আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) ও সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। এরই মধ্যে প্রেসিডেন্ট ভবন ও সেনাপ্রধানের বাসভবনসহ খার্তুমের ৯০ শতাংশের বেশি কৌশলগত স্থাপনা দখলে নেয়ার দাবি করেছেন দাগালো। অবশ্য সেনাবাহিনীর দাবি উল্টো। দেশটির সেনাপ্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান বলছেন, সরকারি স্থাপনার ওপর সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ অব্যাহত রয়েছে।
প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ ও রাজধানীর সেনা সদর দফতরসহ খার্তুম জুড়ে সশস্ত্র সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। সেন্ট্রাল খার্তুমের একটি হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, কয়েক ঘণ্টায় কয়েক ডজন আহত বেসামরিক ও সামরিক লোকজন চিকিৎসা নিতে এসেছেন।
দাগালোর উত্থান শুরু হয়েছিল এই শতকের প্রথম দশকের গোড়ার দিকে। তখন তিনি দারফুর সংঘাতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত কুখ্যাত জানজাওয়েদ বাহিনীর নেতা ছিলেন। ২০১৯ সালে গণতন্ত্রপন্থী শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে গুলি করে কমপক্ষে ১১৮ জনকে হত্যা করেছিল তার দল।
সুদানের সেনাবাহিনী দাগালোর আরএসএফকে দেশের বিরুদ্ধে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ করার জন্য অভিযুক্ত করেছে ও দলটি ভেঙে দেয়ার দাবি করেছে। এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, হেমেদতির বিদ্রোহী মিলিশিয়াকে ভেঙে দেয়ার আগে কোনো সংলাপ হবে না। দাগালোকে ‘পলাতক অপরাধী’ অভিহিত করে ওয়ান্টেড পোস্টারও জারি করেছে তারা।
জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস আরএসএফ ও সুদানের সশস্ত্র বাহিনীর নেতাদের ‘অবিলম্বে সংঘাত বন্ধ করার’ আহ্বান জানিয়েছেন। নিরাপত্তা পরিষদ এক বিবৃতিতে মানবাধিকার সাহায্যে প্রবেশাধিকার ও জাতিসংঘের কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের ওপর জোর দিয়েছে। তাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে কয়েক ঘণ্টার জন্য অস্ত্রবিরতিও দিয়েছে বিবদমান পক্ষগুলো।
আফ্রিকান ইউনিয়নও রাজনৈতিক ও সামরিক পক্ষগুলোকে ন্যায্য রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে বের করার আহ্বান জানিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের মিত্রদেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছে যুক্তরাষ্ট্র।
সুদানের সেনাবাহিনীর জেনারেল কমান্ড একটি বিবৃতি জারি করে বেসামরিক নাগরিকদের বাড়ির ভেতরে থাকার আহ্বান জানিয়েছে। আরো বলছে, দ্রুত প্যারামিলিটারি বাহিনীর অনুসন্ধানে অভিযান পরিচালনা করবে যুদ্ধবিমান।
প্রসঙ্গত, আফ্রিকার দেশ সুদানে ২০২১ সালের অক্টোবরে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটে। তার পর থেকেই সামরিক জেনারেলদের পরিচালিত সভরিন কাউন্সিল নামে একটি পরিষদ দেশ পরিচালনা করছে। সভরিন কাউন্সিল চায়, দুই বছরের মধ্যে আধাসামরিক বাহিনী আরএসএফকে মূল সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করতে। তবে আরএসএফ চায় আরো অন্তত দশ বছর পর এ প্রক্রিয়া শুরু হোক। পক্ষদুটির সাম্পতিক দ্বন্দ্বের মূল কারণ এটিই।
পাঠকের মতামত