প্রকাশিত: ০২/০৩/২০১৭ ৯:২৮ এএম

রাশেদ পারভেজ, ঠেঙ্গারচর থেকে ফিরে ::

চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ এবং নোয়াখালির হাতিয়া উপজেলার মাঝামাঝিতে নতুন করে জেগে ওঠা একটি চর ঠেঙ্গারচর। গত ৩০ জানুয়ারি সরকার মিয়ানমারের প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে সেখানে পুনর্বাসনের সিদ্ধান্ত নেয়। তবে প্রথম থেকেই ঠেঙ্গারচর বসবাস উপযোগী কিনা তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। এই বিতর্কের রেশ কাটতে না কাটতেই চরটির মালিকানা নিয়ে শুরু হয় নতুন বিতর্ক। সম্প্রতি চরটি নোয়াখালির অংশ হিসেবে দাবি ওঠার পর সন্দ্বীপের বাসিন্দারা গত ১৭ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে সেটি নিজেদের অংশ বলে দাবি করেন। সর্বশেষ গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ‘জেগে ওঠা ভূমি রক্ষা পরিষদ’ নামে একটি সংগঠন অন্তত ৫ হাজার নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর ও শিক্ষার্থী সমেত প্রায় ২ কি. মি. দীর্ঘ মানববন্ধন করে ঠেঙ্গারচরকে সন্দ্বীপের আদিভূমি ‘নেয়ামস্তি’ বলে সেই দাবি জোরালো করে। অর্থাৎ হাতিয়ার মানুষ চরটিকে ‘ঠেঙ্গারচর’ এবং সন্দ্বীপের বাসিন্দারা ‘নেয়ামস্তি’ বলে দাবি করে আসছেন। কিন্তু সচেতন মহলের দাবি, চরটিতে রোহিঙ্গা পুনর্বাসনের পরিকল্পনা বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের আগেই চরটির মালিকানা নিয়ে বিতর্ক ওঠা দুঃখজনক। কেননা দুই লক্ষাধিক রোহিঙ্গাদের ওই চরটিতে পুনর্বাসন করা হলে চট্টগ্রাম-নোয়াখালিসহ আশেপাশের এলাকায় তারা ছড়িয়ে পড়তে পারে। সেক্ষেত্রে কক্সবাজার-টেকনাফ অঞ্চলে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর পূর্ব অভিজ্ঞতার আলোকে এসব অঞ্চলেও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। যে কারণে এখন জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, ঠেঙ্গারচর তবে কে পাচ্ছে? হাতিয়াবাসী, সন্দ্বীপ নাকি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী?

জানতে চাইলে সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন মজুমদার দৈনিক আজাদীকে বলেন, রোহিঙ্গা পুনর্বাসনের পরিকল্পনা বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের আগেই চরটির মালিকানা নিয়ে বিতর্ক ওঠা দুঃখজনক। তবে চরের মালিকানা নির্ধারণের চেয়ে এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের সিদ্ধান্ত কার্যকর হচ্ছে কিনা সেটা। যদি পুনর্বাসন করা হয় সেক্ষেত্রে দেশের জাতীয় স্বার্থের বিষয়টি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে নিগৃহীত বলে তাদের প্রতি সহানুভূতি দেখানোর ক্ষেত্রে সতর্ক হতে হবে। কেননা রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড যেমন স্বীকৃতি তেমনি বহির্বিশ্বে তারা বাংলাদেশি পাসপোর্ট ব্যবহার করে দেশের ভাবমূর্তিও নষ্ট করেছে। অন্যদিকে তারা কেবল চরেই সীমাবদ্ধ থাকবে এমনটা ভাবাও বোকামি হবে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভূ-খণ্ডে বসবাস করিয়ে তাদেরকে কেউ ষড়যন্ত্রে ব্যবহার করছে কিনা সেটিও ভেবে দেখতে হবে। যে কারণে বিষয়টিকে আমি ভালো সিদ্ধান্ত বলে মনে করছি না।

ঠেংগার চরে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের বিষয়ে জানতে চাইলে সন্দ্বীপ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ গোলাম জাকারিয়া বলেন, এই বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি। বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ে (সচিব পর্যায়ে) বিবেচনাধীন রয়েছে। মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সরেজমিনে পরিদর্শন শেষে হয়তো একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছাবেন। সরেজমিনে গত মঙ্গলবার সন্দ্বীপ হয়ে ঠেঙ্গারচর (নেয়ামস্তির চর) এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ২৫ কি.মি. দৈর্ঘ্য এবং ১২ কি.মি. প্রস্ত বিশিষ্ট প্রায় ৩শ’ বর্গ কি.মি. আয়তনের চরটি বর্তমান সন্দ্বীপ উপজেলা হতে মাত্র ৩ কি.মি. এবং সময়ের হিসেবে মাত্র আধা ঘণ্টার দূরত্বে অবস্থিত। যেখানে সুবিস্তৃত সমতল ভূমি যেমন রয়েছে তেমনি কেরফা গাছের সুবিশাল ভাগাড়ও রয়েছে। তবে পানি থেকে ভূমির উচ্চতা ছিল মাত্র ২-৩ ফিট। আর গাছগুলো ছিল রুক্ষ ও হালকা আগুনে পোড়ার মত কালচে রঙয়ের। কোথাও কোথাও চর ভেঙ্গে পড়ার দৃশ্যও দেখা গেছে। দূরে চরের একাংশে ৩টা মহিষ চড়ে বেড়ানো ও সামুদ্রিক মাছের জলখেলির দৃশ্যের পাশাপাশি হরেক রকম অতিথি পাখিরও দেখা মিলেছে। অর্থাৎ আপাতদৃষ্টিতে খুব তড়িঘড়ি করে ঠেঙ্গারচরে বসবাসযোগ্য পরিবেশ প্রতীয়মান হয়নি। তবে বিস্ময়কর বিষয় হচ্ছে সন্দ্বীপের অন্তত কয়েকটি সংগঠন ঠেঙ্গারচরকে নিজেদের আদিভূমি দাবি করে সরকারের কেবল স্বীকৃতিই চেয়েছে। সেখানে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের ব্যাপারে তাদের বিশেষ কোন আপত্তি নেই। এ বিষয়ে প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার বলেন, দেশের উপকূলীয় এলাকায় চর জেগে উঠলেই সেখানে কিছু ভূমিখেকো স্বার্থান্বেষী মহল মালিকানা নিয়ে অন্তর্দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ঠেঙ্গারচর কিংবা নেয়ামস্তি চর নিজেদের অংশ বলে দাবি পর্দার অন্তরালে ভূমিখেকোদেরই সুপ্ত লড়াই। সরকারের উচিত দ্রুত মালিকানা নির্ধারণ করে চরটিকে বসবাস উপযোগী করে গড়ে তোলা।

এদিকে বঙ্গোপসাগরে জেগে ওঠা নেয়ামস্তির চর (ঠেঙ্গারচর) সন্দ্বীপের সাবেক ইউনিয়ন নেয়ামস্তির অংশ দাবি করে ‘জেগে ওঠা ভূমি রক্ষা পরিষদ’র আহ্বায়ক ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, অন্য উপজেলার নামে এটি অন্তর্ভুক্তিকরণের ষড়যন্ত্র সন্দ্বীপবাসী মেনে নেবে না। সন্দ্বীপ থেকে আধ ঘণ্টায় ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ঠেঙ্গার চরে পৌঁছানো যায়। যেখানে হাতিয়া থেকে দুই ঘণ্টা সময় লাগে। দূরত্বও ২০ কিলোমিটারের বেশি। এ চরকে কেন হাতিয়ার অংশ বলা হয় তা আমাদের বোধগম্য নয়। তিনি অবিলম্বে ভূমি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী সীমানা নির্ধারণের মাধ্যমে পিলার স্থাপনের দাবী জানান। তবে ঠেঙ্গারচরকে সন্দ্বীপ উপজেলার অংশ হিসেবে স্বীকৃতির পর যদি সরকার সেখানে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন করতে চায় সেক্ষেত্রে কোন আপত্তি আছে কিনা জানতে চাইলে মিজানুর রহমান বলেন, সরকারি সিদ্ধান্তের বিষয়ে আমাদের কোন আপত্তি নেই। তবে ভবিষ্যত বিবেচনায় ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিলে সন্দ্বীপবাসীর জন্য মঙ্গল।

অন্যদিকে একই দাবিতে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছে ‘সন্দ্বীপের সীমানা রক্ষা আন্দোলন কমিটি’ নামে আরেকটি সংগঠন। সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রাজিবুল আহসান সুমন বলেন, সরকার ঠেঙ্গারচরে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন করতে চায়, সেটা সরকারের সিদ্ধান্ত। কিন্তু তার আগে এ অঞ্চলে জেগে ওঠা চরের মালিকানা যে সন্দ্বীপের তার স্বীকৃতি দিতে হবে। অর্থাৎ এই দুটি সংগঠনের সবাই কেবল চরের স্বীকৃতি চেয়েছে। সেখানে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন নিয়ে তাদের বিশেষ কোন অভিযোগ নেই।
সুত্র : অাজাদী

পাঠকের মতামত

কক্সবাজারে বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্র চালু, দৈনিক উৎপাদন ৩০ মেগাওয়াট

কক্সবাজার সদর উপজেলার বাঁকখালী নদীর খুরুশকুল উপকূলে বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হয়েছেছবি: প্রথম আলো কক্সবাজার সদর উপজেলার ...

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে টার্গেট কিলিং!

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে চলছে ‘টার্গেট কিলিং’। ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তার, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড ...

জান্নাতুলকে খুনের কথা আদালতে স্বীকার করলেন কক্সবাজারের রেজা

রাজধানীর পান্থপথে আবাসিক হোটেলে চিকিৎসক জান্নাতুল নাঈম সিদ্দিকা হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন ...

খাদ্য সংকটে সেন্টমার্টিন

হেলাল উদ্দিন সাগর :: বৈরী আবহাওয়ার কারণে গত এক সপ্তাহ ধরে দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন ...