হাফেজ মুহাম্মদ কাশেম, টেকনাফ::
টেকনাফের রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান ও যুবলীগ নেতা মোস্তাক আহমদের খোঁজ মেলেনি ২ বছরের বেশী সময় ধরে। তাঁর শূণ্যতায় উদ্বেগ-উৎকন্ঠার মধ্যে রয়েছেন মোস্তাকের পরিবার। তাঁর সন্ধানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যর্থ হওয়ায় রাজনৈতিক সচেতন মহলসহ সর্বস্তরে নেতৃবৃন্দের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। এলাকায় গুঞ্জন রয়েছে মোস্তাক এখনও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে রয়েছেন।
পরিবার ও থানায় দায়ের করা এজাহার সূত্রে জানা গেছে ২০১৫ সালের ১১ আগস্ট রাত ৮ টার দিকে উপজেলা ছাত্রলীগের উদ্যোগে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস পালন উপলক্ষ্যে প্রস্তুতি সভার আয়োজন করা হয়। এতে যোগ দিতে নিজ বাড়ির সামনে অবস্থিত ছাত্রলীগের কার্যালয়ে যান মোস্তাক আহমদ। কিছুক্ষনের মধ্যে একটি জ্বীপ ও দুইটি মাইক্রো বাসযোগে ৭-৮ জনের একটি সশস্ত্র সাদা পোশাকে ওই কার্যালয়ে ঢুকে কথা আছে বলে ডেকে মাইক্রোবাসে তুলে নেয়া হয়। উপস্থিত ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ ও স্থানীয়রা পরিচয় জানতে চাইলে র্যাবের লোক বলে পরিচয় দেন। তারই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দপ্তরে যোগাযোগ করেও কোন কূল কিনারা পাননি তাঁর পরিবার ও দলীয় লোকজন। ১৩ আগস্ট মোস্তাক আহমদের পিতা টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব জাফর আহমদ বাদী হয়ে অজ্ঞাত ৭-৮ জনকে আসামী করে টেকনাফ থানায় মামলা দায়ের করেছিলেন। মামলা নং ২০।
টেকনাফ উপজেলা পরিষদের চেয়াম্যান ও উখিয়া-টেকনাফ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদির ঘনিষ্ট সহচর জাফর আহমদের প্রথম পুত্র উপজেলা যুবলীগের সিনিয়র যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক হাজী মোস্তাক আহমদকে অক্ষত অবস্থায় ফেরৎ পাওয়ার দাবীতে ১৬ আগস্ট রোববার সকালে স্মরণ কালের বৃহত্তম মানব বন্ধন, সাংবাদিক সম্মেলন ও প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারক লিপি প্রদান করা হয়েছিল। ওইদিন সকালে টেকনাফ পৌরবাজার বাসষ্টেশন চত্বরে বৃষ্টি উপেক্ষা করে উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা হাজার হাজার জনতা মানব বন্ধনে অংশ নেন। এতে আবাল, বৃদ্ধ, বনিতা, শিশু, কিশোর হতে আরম্ভ করে সরকার দলীয় উপজেলা পর্যায়ের শীর্ষ স্থানীয় নেতা-কর্মী সংবাদিক, বুদ্ধিজীবি, শ্রমিকসহ হাজার হাজার নারী ও সর্বস্তরের লোকজন অংশ নেন। ওই মানব বন্ধন ও স্মারক লিপি প্রদান অনুষ্টানে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ও হাজী মোস্তাক আহম্মদের মুক্তি পরিষদের সভাপতি আলহাজ্ব জহির হোসেন এমএ। প্রধান অতিথি ছিলেন টেকনাফ উপজেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোঃ শফিক মিয়া। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ককসবাজার জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আলী আহমদ, উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য ও হ্নীলা ইউনিয়ন আওয়য়ামীলীগের সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব এইচকে আনোয়ার, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মাওঃ রফিক উদ্দিন, জেলা যুবলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি আবুল কালাম, কাউন্সিলর আলহাজ্ব আবু হারেছ, হাজী মোস্তাকের মাতা আমেনা বেগম, উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি কাউন্সিলর একরামুল হক, পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি জাবেদ ইকবাল চৌধুরী, সাধারন সম্পাদক মোঃ আলম বাহাদুর, সাবরাং ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি জাহেদ হোছন, হামজালাল মেম্বার, নুরুল ইসলাম কালু মেম্বার, পৌর যুবলীগের সভাপতি মনজুরুল করিম সোহাগ, সাধারণ সম্পাদক অং চৌধুরী মারমা। এতে সর্বস্তরের লোকজন, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
মানব বন্ধন শেষে হাজী মোস্তাককে অক্ষত অবস্থায় ফেরৎ প্রদানের জন্য প্রধান অতিথির নেতৃত্বে তৎকালীন উপজেলা ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) জাহিদ ইকবালের নিকট স্মারক লিপি প্রদান করা হয়। মানব বন্ধনের পূর্বে পুরাতন পল্লান পাড়ায় হাজী মোস্তাকের পৈত্রিক বাস ভবনে সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন হাজী মোস্তাকের সদ্য বিবাহিত স্ত্রী জয়নাব রাজিয়া শিমু। উপস্থিত ছিলেন তাঁর গর্ভাধারনী মা আমেনা বেগম, মা হামিদা খাতুন, চাচা জালাল আহমদসহ পরিবারের সদস্যবৃন্দ।
সাংবাদিক সম্মেলনে অশ্রু নয়নে তাঁর স্ত্রী বলেছিলেন ইউপি নির্বাচনে অংশ নেওয়া জন্য বিভিন্ন স্থানে জন সংযোগ, প্রচারনা চালিয়ে আসছিল। এতে জনগনের ব্যাপক সাড়া ও জনসর্মথন দেখে ও আমার শ্বশুরের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের প্রতিপক্ষরা জনপ্রিয়তার ঈর্ষান্বিত হয়ে তাঁকে সাদা পোষাকধারী কিছু অস্ত্রধারী লোক নিজেরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোক পরিচয় দিয়ে দুটি মাইক্রোবাস যোগে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। মোস্তাক ফিরে আশার আশায় রয়েছেন তাঁর পরিবার। তাঁর মায়ের অবস্থা খুবই করুন, শোকে কাতর। যেভাবে হউক ফিরে পাওয়ার জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করেন মোস্তাকের মা আমেনা বেগম।
যুবলীগ নেতা শাহ আলম বলেন এখনো অপহৃত মোস্তাকের খোঁজ না পাওয়া সত্যি দুঃখজনক। তাঁর অনুসন্ধানের দায়িত্ব আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপর বর্তায়। টেকনাফ পৌর যুবলীগের সভাপতি মন্জুরুল করিম সোহাগ বলেন সহকর্মীর শূন্যতায় ব্যথায় ব্যথিত। টেকনাফের ঘাঁটিকে যুবলীগের ঘাঁটিতে রুপান্তর করায় মোস্তাকের ভুমিকা ছিল অপরিসীম। আইনশৃঙ্খালা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি অনুরুধ জানিয়ে তিনি আরো বলেন অনতি বিলম্বে অপহৃত নেতাকে অনুসন্ধানের মাধ্যমে জনগণের মাঝে ফিরিয়ে দেয়ার দাবী জানান।
মোস্তাকের পিতা ও টেকনাফ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাফর আহমদ পুত্রের ফিরে আসার অপেক্ষায় আছেন। মোস্তাকের পরিবারের সদস্য ও সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ শাহজাহান এখনো ভাইয়ের ফিরে আসার বিষয়ে আশা ছাড়েননি জানিয়ে বলেন অপহরণ মামলাটি বর্তমানে পুলিশ ইনভেস্টিগেশন ব্যুরোতে (পিআইবি) রয়েছে। টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান বর্তমানে মামলাটি পিআইবি তদন্ত করছেন। কক্সবাজার পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ তৌহিদুল আরিফ বলেন মামলাটি গভীরভাবে তদন্তনাধীন রয়েছে।
পাঠকের মতামত