প্রকাশিত: ১১/১১/২০১৭ ৭:৩৬ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ১১:২১ এএম

শরীয়তপুরে ছয় নারীকে ধর্ষণ ও তার ভিডিও ছড়িয়ে দিয়েছেন এক ছাত্রলীগ নেতা। তার নাম আরিফ হোসেন হাওলাদার (২২)। তিনি ভেদরগঞ্জ উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। তাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, আরিফ এলাকার ছয় নারীকে ফাঁদে ফেলে ধর্ষণ করেছে। ধর্ষণের ভিডিও মোবাইলে ধারণ করে নারীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে একাধিকবারও ধর্ষণ করেছে। গত ১৫ অক্টোবর থেকে ধর্ষণের এই ভিডিও উপজেলার মানুষের মোবাইলে ছড়িয়ে পড়ে।

আরিফ ভেদরগঞ্জ উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের ফেরাঙ্গীকান্দি গ্রামের মজিবর হাওলাদারের ছেলে। তিনি স্থানীয় একটি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র। ২০১৫ সালের জুনে তাকে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, আরিফ প্রথমে গোসলখানায় গোপন ক্যামেরা লাগিয়ে এক গৃহবধূর ভিডিও ধারণ করেন। পরে সেই ভিডিও দেখিয়ে ফাঁদে ফেলে তাকে ধর্ষণ করেন। ধর্ষণের সেই ভিডিও আবার গোপনে ধারণ করা হয়। সেই ভিডিও এখন এলাকার মানুষের হাতে হাতে। এভাবে ফাঁদে ফেলে ছয় নারীকে ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করে তা মোবাইলে ছড়িয়ে দিয়েছেন আরিফ। লোকলজ্জার ভয়ে কোনো নারী এখনও মামলা করেননি। তাদের মধ্যে একজন প্রবাসীর স্ত্রী। তাকে শ্বশুরবাড়ি থেকে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। আরেক গৃহবধূ গ্রাম ছেড়ে অন্য কোথাও চলে গেছেন। ঘটনার শিকার কলেজছাত্রীরা লোকলজ্জায় কলেজে যাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন।

ভেদরগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম সোহাগ বলেন, ‘ঘটনা শুনে আমরা এলাকায় যাই। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর সঙ্গে কথা বলি। আরিফের বিরুদ্ধে সব ধরনের আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে আরিফ হোসেন হাওলাদারকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ও যে এত খারাপ লোক, আগে জানতাম না।’

ধর্ষণের শিকার এক গৃহবধূর চাচাতো বোন বলেন, ‘আরিফ তাকে ফাঁদে ফেলে ধর্ষণ করেছে। পরে ভিডিও প্রকাশ করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে কয়েক দফায় অনেক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। আতঙ্কে ও লোকলজ্জার ভয়ে মামলা করা হয়নি। আরিফের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।’

এক ভুক্তভোগী কলেজছাত্রী বলেন, ‘আরিফ আমার জীবন শেষ করে দিয়েছে। সমাজে এখন কীভাবে মুখ দেখাব? মরে যাওয়া ছাড়া কোনো পথ দেখছি না।’

নারায়ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিন তালুকদার বলেন, ‘ওরে খুব ভালো জানতাম। এখন তো দেখি আমার ধারণা ভুল। ওর মতো খারাপ লোক আর হয় না। ঘটনা জানাজানির পর থেকে সে পলাতক। তার বাবাকে বলেছি তাকে হাজির করতে। বিষয়টি স্থানীয় সাংসদ ও আওয়ামী লীগ নেতাদের জানানো হয়েছে। তাকে পাওয়া গেলে সামাজিকভাবে বিচার করা হবে।’

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অনল কুমার দে বলেন, ‘ঘটনাটি মাত্র শুনেছি। ঘটনা সত্যি হলে সাংগঠনিকভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’

জেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক মহসিন মাদবর বলেন, ‘দলীয় সিদ্ধান্তে ভেদরগঞ্জ উপজেলার পক্ষ থেকে তাকে অস্থায়ী বহিষ্কার করে আমাদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। আমরা তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (গোসাইরহাট সার্কেল) খন্দকার খায়রুল হাসান বলেন, ‘আরিফকে আমরা খুঁজছি। বাদী হয়ে কেউ মামলা করলে ভালো হতো।’

শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার সাইফুলল্গাহ আল মামুন বলেন, ভেদরগঞ্জের ছাত্রলীগ নেতা যে ঘটনাটি ঘটিয়েছে তা বড় ধরনের সাইবার ক্রাইম। যে কোনো উপায়ে তাকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে।

ভেদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মেহেদি হাসান বলেন, ‘বিষয়টি শুনেছি। এ বিষয়ে এখনও অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এদিকে, বিডিনিউজকে আরিফ হোসেন হাওলাদার বলেন, তার সঙ্গে এক মালয়েশিয়া প্রবাসীর স্ত্রীর বন্ধুত্ব ছিল। এর আগে কলেজছাত্রী চাচাতো বোনের সঙ্গেও তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিছু দিন আগে তার মোবাইল ফোন চুরি হয়ে যায়। এরপর তার ফেসবুকের মাধ্যমে এক নারী তার কাছে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দিলে মোবাইলে ধারণ করা ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। এ ঘটনায় সে ভেদরগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছে।

পাঠকের মতামত

রামুর ফতেখাঁরকুলে উপ-নির্বাচনে প্রতীক পেয়ে প্রচারনায় ৩ চেয়ারম্যান প্রার্থী

রামু উপজেলার ফতেখাঁরকুল ইউনিয়ন পরিষদের উপ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্ধি ৩ প্রার্থীকে প্রতীক বরাদ্ধ দেয়া ...