
কক্সবাজারের চকরিয়ার সাহারবিল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নবী হোছাইন চৌধুরী ওরফে নইব্যা চোরাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। সোমবার (৮ জুলাই) বিকালে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মুন্সী আবদুল মজিদ তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। তার বিরুদ্ধে, হত্যা, ডাকাতি, গরুচুরি, অপহরণ, সরকারি জমি দখল ও চিংড়িঘের দখলের অভিযোগ রয়েছে। এসব ঘটনায় নবী হোসাইন চৌধুরীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ১৭টি মামলা রয়েছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, মাতামুহুরী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাহারবিল ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মহসিন বাবুলের ভাই কৃষকলীগ নেতা আবুল কালামকে গত ১৪ জানুয়ারি গভীর রাতে বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান নবী হোছাইন চৌধুরীর নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী অস্ত্রের মুখে অপহরণ করে নিয়ে যায়। আবুল কালামকে রাতভর অমানষিক নির্যাতনের পর মৃত্যু ভেবে পাশ^বর্তী ইউনিয়ন পূর্ববড়ভেওলা আটারকুম এলাকায় ফেলে চলে যায় সন্ত্রাসীরা। পরদিন সকাল ৬টার দিকে স্থানীয় মুসল্লিরা মসজিদে যাওয়ার সময় আবুল কালামকে দেখতে পেয়ে স্বজনদের খবর দেন। পরে স্বজনরা আবুল কালামকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে চকরিয়া সরকারি হাসপাতাল ভর্তি করা হয়। ওইসময় তার অবস্থার অবনতি হলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এঘটনায় আবুল কালামের বড় ভাই সাহারবিল ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মহসিন বাবুল বাদী হয়ে বর্তমান চেয়ারম্যান নবী হোসাইন চৌধুরীসহ আরও ৭-৮জনের নাম উল্লেখ করে চকরিয়া থানায় একটি অপহরণ ও হত্যা চেষ্ঠার মামলা দায়ের করা হয়। পরবর্তীতে চকরিয়া থানার একদল পুলিশ নবী হোসাইন চৌধুরী ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের গ্রেফতারে তার বাড়িতে অভিযান চালায়। ওইসময় তার নেতৃত্বে পুলিশের উপর হামলা চালানো হয়। পুলিশের ওয়াকিটকি ও অস্ত্র লুট করে নিয়ে যায় তারা। এখনো পর্যন্ত পুলিশের ওয়াকিটকি ও অস্ত্র উদ্ধার করতে পারেনি।
এ ঘটনায় চকরিয়া থানার এসআই মিজানুর রহমান বাদী হয়ে ইউপি চেয়ারম্যান নবী হোসাইনকে প্রধান আসামী করে পুলিশের কাজে বাধা দানের অভিযোগ এনে একটি মামলা দায়ের করা হয়। এ দুই মামলায় নবী হোসাইন চৌধুরী গত ২৩ এপ্রিল উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেন। উচ্চ আদালত তাকে ৬ সপ্তাহের মধ্যে কক্সবাজার চীফ জুড়িশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে আত্মসর্ম্পনের নির্দেশ দেন এবং তার দুটি মামলা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে শুনানীর দিন ধার্য্য করেন। গত ৮ জুলাই সোমবার নবী হোসাইন চৌধুরী কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হলে জজ মুন্সী আবদুল মজিদ জামিন না মঞ্জর করে তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করেন।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, কক্সবাজার-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জাফর আলমের ছত্রছায়ায় নবী হোসেন চৌধুরী নানা অপকর্ম চালিয়ে আসছিলো। তার বিরুদ্ধে, হত্যা, ডাকাতি, গরুচুরি, অপহরণ, জমি দখল ও চিংড়িঘের দখলের অভিযোগ রয়েছে। নবী হোসাইন চৌধুরীর বিরুদ্ধে নানা অপরাধে চকরিয়া, লামা, আলীকদম, লোহাগড়া, সাতকানিয়া, পেকুয়া ও বাঁশখালী থানায় ১৭টি মামলা রয়েছে।
কক্সবাজারসহ আশপাশের তিন জেলা দাপিয়ে বেড়ায় তার চক্র- এমন অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। তার চক্রের সদস্যরা প্রতি রাতে কোনো না কোনো এলাকা হতে গরু-মহিষ চুরি করে চকরিয়ার সাহারবিল এলাকার নবী হোসাইনের ‘ডেরায়’ এনে মজুদ করে। বছর দুয়েক আগে গরু চুরি করে কক্সবাজার হতে চকরিয়া ফেরার পথে মহাসড়কের খুটাখালী এলাকায় দুই যুবক গণপিটুনিতে মারা যান। তারা দুজনই নবী হোসেন গ্রæপের সদস্য এবং এদের একজন নবী হোসেনের নিকটাত্মীয় বলে ওই সময় পরিচয় প্রকাশ পায়। গত ইউপি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর থেকে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেন।
এদিকে চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, পুলিশের উপর হামলা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের ভাইকে অপহরণের মামলায় সোমবার এজাহারনামীয় এক নম্বর আসামি ইউপি চেয়ারম্যান নবী হোছাইন চৌধুরী উচ্চ আদালতের জামিন মেয়াদ শেষে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। এসময় আদালত শুনানি শেষে তাঁকে কক্সবাজার জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন
পাঠকের মতামত