কক্সবাজারে দুই প্রতিষ্ঠানের নামে দেওয়া ৮৫৬ একর বনভূমির দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্ত বাতিলের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শহীদ এটিএম জাফর আলম মাল্টিডিসিপ্লিন একাডেমির নামে ১৫৬ একর এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একাডেমি অব পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের নামে ৭০০ একর বনভূমি নিয়মবহির্ভূতভাবে দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্ত দিয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকার।
বনভূমি রক্ষার মাধ্যমে ওই অঞ্চলের প্রতিবেশ ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখতে বন্দোবস্ত বাতিলের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এ ব্যাপারে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। গত ২১ ও ২৯ আগস্ট ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার কাছে পৃথক চিঠি দেওয়া হয়। দুই প্রতিষ্ঠানের নামে দেওয়া বন্দোবস্ত বাতিল এবং রেকর্ড সংশোধনের বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে চিঠিতে।
এ প্রসঙ্গে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সমকালকে বলেন, ‘দেশে যে পরিমাণ বনভূমি দরকার, তা নেই। তাই যতটুকু বনভূমি টিকে আছে, তা রক্ষা করতে সরকার সাংবিধানিকভাবে অঙ্গীকারবদ্ধ।’
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সাবেক সচিব শফিউল আলমের ভাই এটিএম জাফর আলম (প্রয়াত)। কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালে রামু উপজেলার খুনিয়াপালং মৌজায় ১৫৫ দশমিক ৭ একর জমি শহীদ এটিএম জাফর আলম ক্যাডেট কলেজের নামে দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে। এ জমি ৭৭ লাখ ৭ হাজার ১৫০ টাকা মূল্য নির্ধারণ করে ৭ লাখ ৭০ হাজার ৭১৫ টাকা মূল্যে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়। পরে শহীদ এটিএম জাফর আলম ক্যাডেট কলেজের নাম পরিবর্তন করে শহীদ এটিএম জাফর আলম মাল্টিডিসিপ্লিন একাডেমি নাম দেওয়া হয়।
এ ছাড়া কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ-সংলগ্ন ঝিলংজা মৌজার ৭০০ একর জমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একাডেমি অব পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের নামে ২০২১ সালের ৩ জুলাই বরাদ্দ দেওয়া হয়। জমির মূল্য ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৮০৩ কোটি ৬৪ লাখ ২৩ হাজার ৬০০ টাকা। কিন্তু একাডেমির জন্য প্রতীকী মূল্য ধরা হয়েছে মাত্র ১ লাখ টাকা। ভূমি মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দপত্রে দেশের অন্যতম জীববৈচিত্র্যসমৃদ্ধ বনভূমিকে অকৃষি খাসজমি হিসেবে দেখানো হয়েছে। এতে বন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দিয়ে আপত্তি জানিয়েছিল বন বিভাগ।
কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা সমকালকে বলেন, জীববৈচিত্র্যপূর্ণ এই বনভূমিতে মূলত প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো গাছপালা রয়েছে। বন্য প্রাণীদের নিরাপদ আবাস এই এলাকা। বিশেষ করে মহাবিপন্ন প্রজাতির এশীয় বন্যহাতির একটি দল নিয়মিতভাবে সেখানে বিচরণ করে। বিশেষ প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য– যেমন নরম মাটি, ছড়া ও মিঠাপানির আধার ও সমুদ্র-উপকূলবর্তী হওয়ায় সেখানে বৈচিত্র্যপূর্ণ বৃক্ষ জন্মেছে।
প্রাণ-প্রকৃতি সংরক্ষণের স্বার্থে এ বনভূমি রক্ষা করা প্রয়োজন।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৯ সালে ঝিলংজা মৌজার ৭০০ একর বনভূমিসহ কক্সবাজার সদর ও সাগর সৈকতকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করা হয়। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুসারে এমন এলাকায় কোনো ধরনের অবকাঠামো নির্মাণ এবং প্রতিবেশ-পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কোনো তৎপরতা চালানো নিষেধ। কিন্তু ২০২১ সালে ওই বনভূমিকে খাসজমি দেখিয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ভূমি মন্ত্রণালয় একাডেমি নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দেয়। এ ছাড়া খুনিয়াপালং মৌজায় বন্দোবস্ত দেওয়া ১৫৫ দশমিক ৭ একর জমি গেজেটভুক্ত রক্ষিত বনভূমি। সূত্র সমকাল
পাঠকের মতামত