প্রকাশিত: ০৩/১০/২০১৭ ৭:২৩ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ১২:৪৫ পিএম

মাহাবুবুর রহমান :
কক্সবাজারে ওএমএস এর চাল নিয়ে চালবাজি শুরু হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে ঠিক মত চাল পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ,ওএমএস এর চাল বিক্রি করা দোকান গুলোতে লোক দেখানো কিছু চাল বিক্রি করলেও বরাদ্ধ অনুযায়ী চাল বিক্রি করছে না ডিলাররা। এতে সরকারের এই মহৎ কর্মসূচী ভেস্তে যেতে চলছে আবার গরীব মানুষের চাল বেশি দামে বাজারে বিক্রি করে রাতারাতি বিপুল টাকার মালিক বনে যাচ্ছেন ডিলাররা। ভোক্তভোগীদের দাবী ডিলার, পরিদর্শক এবং খাদ্য অফিস সবাই মিলে একটি সিন্ডিকেট তৈরি করে গরীব মানুষের জন্য বরাদ্ধ করা এই চাল নিয়ে লুটপাটে মেতেছে তাই বাজারে চালের দাম কমছে না। বাধ্য হয়ে সবাইকে বেশি দামে বাজার থেকেই কিনতে হচ্ছে।
কক্সবাজার জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস সূত্রে জানা গেছে কক্সবাজার পৌরসভা এলাকায় মোট ১২ জন ওএমএস ডিলার আছে আর কক্সবাজার সদর বাদে প্রতিটি উপজেলায় ৩ জন করে ওএমএস ডিলারআছে। তারা দিনে ১ টন হিসাবে চাল পায়। সরকারি ভাবে ২৮ টাকা ৫ পয়সা কিনতে হয় আর মাঠ পর্যায়ে বিক্রি হবে ৩০ টাকা করে। আর জন প্রতি কেজি করে চাল পাবে ৫ কেজী এর বেশি কেউ
পাবে না। আর কক্সবাজার পৌরসভার ১২ জন ডিলারকে ২ ভাগে ভাগ করা হয়েছে তারা ৩ দিনের জন্য ৩ টন এক সাথে নিয়ে যায় এবং পালাক্রমে বিক্রি করবে এটাই নিয়ম।
এদিকে টেকপাড়া এলাকার সমাজ কমিটির সভাপতি গোলাম মাওলা বাবুল বলেন আমাদের এলাকায় ওএমএস ডিলার আছে সে কোন সময় নিয়ম অনুযায়ী চাল বিক্রি করে না। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী দৈনিক ১ টন চাল পায় সে হিসাবে ৫ কেজি করে ১০০ জন সাধারণ মানুষ ন্যায্য মুল্যে চাল পাওয়ার কথা কিন্তু যে কেউ এখানে এসে তদন্ত করলে দেখতে পাবে নামে মাত্র কয়েক জন কে চাল দিয়ে দোকান বন্ধ করে দেয় এবং সেই চাল পরে বাজারে বাড়তি দাম দিয়ে বিক্রি করে। আর যে ডিলার আছে ঈসমাইল সে এখানকার স্থায়ী বাসিন্দা না তার বাড়ি নোয়াখালীর দিকে তাই তাই পরিচিত নোয়াখালী বরিশাল এলাকার কিছু মানুষকে দিয়ে দেয় স্থানীয় কাউকে চাল দেয় না। অনেক দিন আগে সে আমাকে বলেছিল সরকারি চাল বিক্রি করে যা লাভ হয় তার চেয়ে বেশি টাকা সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষ দিতে চলে যায় তাই চাল বাইরে বিক্রি করে কিছু টাকা লাভ করতে হয়।
এদিকে গতকাল বেলা ১১টার দিকে সদর উপজেলা গেইট এলাকার ওএমএস ডিলার আবুল কাশেমের দোকানে গিয়ে দেখা গেছে সেখানে আবুল কাশেম নেই তার পরিবর্তে কয়েক জন কর্মচারী কাজ করছে। এসময় চাল নিতে আসা ডিককুল এলাকার রোজিনা আকতার বলেন আমরা সকাল ৮ থেকে লাইনে দাড়িয়েছি উনারা দোকান খোলেছে সাড়ে ১০ টার দিকে। সবাইকে ৫ কেজি করে দিচ্ছে কিন্তু সমস্যা হচ্ছে উনাদের পরিচিত এবং আত্বীয়দের অনেককে ১৫/২০ কেজিও চাল দিচ্ছে খাতায় ৩ জনের টিপ সই নিয়ে চাল দিচ্ছে আর আমাদের দিচ্ছে না। তিনিবলেন কত বস্তা চাল দেয় সেটা বলতে পারবো না। এ সময় পার্শবর্তি এক দোকান থেকে সাংবাদিক পরিচয় গোপন রেখে জানতে চাইলে বলেন ১ টন চাল বিক্রি করে না। রাতের বেলায় তাদের দোকান থেকে অনেক সময় চাল নিয়ে যেতে দেখা গেছে। তিনি বলেন এগুলো গুদাম থেকেই হিসাব নিকাশ হয়ে যায়। চাল গুদাম থেকে বের হওয়ার পর বস্তা পরিবর্তন করে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করা হয়। সঠিক ভাবে চাল বিতরণ হচেছ না।
পরে সেখান থেকে কলাতলীতে গিয়ে ওএমএস চালের দোকানে গিয়ে দেখা যায় আরো খারাপ অবস্থা চালের জন্য মানুষ থাকলেও চাল নেই, এ সময় চালের জন্য লাইনে থাকা আবুল বশর বলেন আমরা অনেক বার বলেছি লাইনের বাইরে চাল না দেওয়ার জন্য কিন্তু উনারা খাতির করে লাইনের বাইরে অনেককে বেশি বেশি চাল দিয়েছে আমরা শুনেছি সকাল বেলায় ৩ জনকে নাকি ১ বস্তা করে চাল দিয়েছে। আমরা গরীব মানুষ সব কিছুতো আর বলা সম্ভব না। পরে দোকানে গিয়ে কর্মচারীর সাথে কথা বলে জানা গেছে ১ টন চাল দিয়েছি এখন সব শেষ হাতে মাত্র কিছু চাল আছে সে গুলো দিয়েই দোকান বন্ধ করে দেব।
এর পরে শহরের ঝাউতলা এলাকায় এসে ্ওএমএস দোকানে গেলে সেখানেই মানুষের ভীড় লক্ষ্য করাযায় এখানে অবশ্য ডিলার তপন কান্তি দাশ নিজে চাল বিক্রি করতে দেখা গেছে। তিনি বলেন, আমি নিয়ম অনুযায়ী চাল বিক্রি করি তবে কেউ যদি একই পরিবারের হয়েও পরিচয় গোপন করে সেটা বুঝা মুশকিল। এসময় চাল নিতে আসা লায়লা আক্তার বলেন আমরা দিন মজুর মানুষ বাজার থেকে ৫০ টাকা দিয়ে চাল কিনে খেতে পারি না। তাই এখানে রোদের মধ্যে দাড়িয়ে চাল নিচ্ছি। তবে সব সময় চাল পাওয়া যায় না। মাঝে মাঝে চাল না নিয়ে ফেরত যেতে হয়।
এদিকে শহরের বাহারছড়া নুনিয়ারছড়া, সমিতি পাড়া সহ বেশ কয়েক টি এলাকার জনপ্রতিনিধিরে সাথে কথা বলে জানা গেছে উনারা সরকারি ওএমএস চাল বিক্রি নিয়ে সন্তুস্ট না। তাদের দাবী এখানে অনেক লুটপাট হচ্ছে প্রকৃত গরীব মানুষরা পাচ্ছে না আর ডিলাররা সরকারি বরাদ্ধ অনুযায়ী চাল বিক্রি করছে না। নামে মাত্র কিছু বিক্রি করে বাকি গুলো বাড়তি দামে বাজারে বিক্রি করে দেয়।
এ ব্যপারে টেকপাড়া এলাকার ডিলার ইসমাঈল বলেন আমাদের দোকান ছোট তাই সব মাল আনতে পারি না। আর সব যদি বিক্রি করি তাহলে আামদের কি থাকবে ? দোকান ভাড়া আছে কর্মচারীর বেতন আছে তাছাড়া সব অফিসে টাকা দিতে হয় মাল আনা নেওয়ার খরচ আছে সব মিলিয়ে কিছু না করলে কিভাবে চলবো ?
এ ব্যপারে কক্সবাজার জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক এস.এম তাহসিনুল হক বলেন ওএমএস কর্মসূচী বর্তমান সরকারের একটি মহৎ এবং অনেক বড় কর্মসূচী। এটাকে কোন ভাবে সমস্যায় ফেলা যাবে না। যে কেউ সামান্যতম অনিয়ম করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সুত্র: দৈনিক কক্সবাজার

পাঠকের মতামত

রামুর ফতেখাঁরকুলে উপ-নির্বাচনে প্রতীক পেয়ে প্রচারনায় ৩ চেয়ারম্যান প্রার্থী

রামু উপজেলার ফতেখাঁরকুল ইউনিয়ন পরিষদের উপ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্ধি ৩ প্রার্থীকে প্রতীক বরাদ্ধ দেয়া ...