ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ০৭/১১/২০২৪ ৩:৪৬ পিএম

‘ছোট ভাই দুই মাস আগে মালয়েশিয়া থেকে ১ লাখ টাকা পাঠিয়েছেন। ব্যাংক আমাকে ১৩ দিনে ৭০ হাজার টাকা দিয়েছে। একদিন ১০ হাজার টাকা দিয়েছে। বাকি দিনগুলোতে ৫ হাজার টাকা করে দিয়েছে। বাকি টাকা এখনো পাইনি।’

কথাগুলো বলছিলেন সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের (এসআইবিএল) যশোরের মনিরামপুর শাখা থেকে সেবা নেওয়া আল আমিন। ব্যাংকের কার্যালয়ে গিয়ে হয়রানির শিকার হয়ে আজকের পত্রিকাকে এসব কথা বলেন তিনি। খোঁজ নিয়ে জানা যাচ্ছে, শুধু যশোরের আল আমি নন, তারল্যসংকটের কারণে এসআইবিএলের অনেক শাখাতেই কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ টাকা না পেয়ে ঘুরে যাচ্ছেন গ্রাহকেরা। গত রোববার ও গতকাল সোমবার যশোর ছাড়াও চার বিভাগীয় শহর রংপুর, সিলেট, ময়মনসিংহ ও বরিশাল এবং ঢাকার অদূরে সাভারের এসআইবিএলের শাখায় গিয়েও একই চিত্র দেখা গেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, টাকা না পেয়ে হতাশা আর বিরক্তি নিয়ে বের হয়ে যাচ্ছেন গ্রাহকেরা।

যশোরের মনিরামপুরের এসআইবিএল শাখায় সেবা নিতে গিয়ে আল আমিন ছাড়াও ভোগান্তিতে পড়েছিলেন মনিরামপুর মহিলা কলেজের শিক্ষক মুহিব্বুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘টাকা তুলব বলে এক সপ্তাহ আগে ১০ হাজার টাকার চেক জমা দিয়ে এসেছি। আজ সোমবার সর্বশেষ যোগাযোগ করেছি। তারা বলেছে টাকা দিতে পারবে না।’

যদিও ব্যাংকের এই চিত্রের সঙ্গে একমত নয় প্রতিষ্ঠানটির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের চলতি দায়িত্বে থাকা উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ ফোরকানুল্লাহ দাবি করেন, ‘আমাদের ব্যাংকের তো কিছু সমস্যা রয়েছে। তা আমরা রিকভার করতে চেষ্টা করছি। তবে কোন শাখায় বা এটিএমে টাকা গ্রাহক পাচ্ছেন না, এমন কোনো নতুন অভিযোগ কেউ করেনি। তবে গ্রাহকের ভোগান্তি কমাতে আমরা বদ্ধপরিকর। আশা করি সামনে সমস্যা কেটে যাবে।’

তবে মনিরামপুরের এসআইবিএলের শাখার চিত্র তুলে ধরে সেখানকার ব্যবস্থাপক মো. আরিফুজ্জামান বলেন, ‘দুই মাস ধরে আমরা তারল্যসংকটে ভুগছি। আগে প্রতিদিন ২৫-৩০ জন নতুন গ্রাহক সৃষ্টি হতো। এখন সেটা কমে গেছে। দু-তিন সপ্তাহ ধরে সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। এক সপ্তাহ ধরে গ্রাহকদের কোনো টাকা দিতে পারছি না।’

ভরসার সংকট

বরিশাল নগরের কাঠপট্টি রোডে এসআইবিএলের শাখায় গত রোববার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, লেনদেন প্রায় নেই। টাকার জন্য অনেকেই এসেছেন। না পেয়ে অপেক্ষা করছেন। তাঁদের একজন সামসুন্নাহার। জানালেন, আড়াই ঘণ্টা বসে থেকেও ১০ হাজার টাকা তুলতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘ওই দেখেন পাওনাদার পেছনে ঘুরছে।’

সিলেট নগরের এসআইবিএলের দুই শাখার চিত্র আরও করুণ। সরেজমিনে দেখা যায়, ২ হাজার টাকার বেশি পাচ্ছেন না গ্রাহকেরা। নগরের টুকের বাজার শাখায় রোববার কথা হয় মাহিম নামে এক গ্রাহকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ব্যাংকে আমার ২ লাখ টাকা জমা রাখা। আগে আরও ছিল। ২ হাজার টাকার বেশি দিচ্ছে না। এখন আমার প্রয়োজন মেটাতে প্রতিদিন ২ হাজার টাকা করে তুলে অন্য ব্যাংকে রাখছি।’

এই শাখার ব্যবস্থাপক সোহাগ রানা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘গ্রাহকদের এই ২ হাজার টাকা করে দিয়ে কোনোভাবে বুঝ দেওয়া যাচ্ছে না। গ্রাহকেরা আমাদের সহযোগিতা না পেয়ে হতাশ।’

রোববার এসআইবিএলের আম্বরখানা শাখায় গিয়েও দেখা যায় একই অবস্থা। সেখানকার গ্রাহক মারুফা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলেকে দেশের বাইরে পাঠানোর জন্য টাকা রাখা। সেখান থেকে ৫ লাখ তুলতে গেলে বলে ২০ হাজারের ওপরে তুলতে পারব না। এখন কোনোরকমে মাত্র ৩০ হাজার টাকা তুলছি। এ রকম সমস্যা হলে আমরা আর ব্যাংকে কীভাবে টাকা রাখব।’

একই চিত্র ময়মনসিংহেরও। ময়মনসিংহ শাখার ব্যবস্থাপক ইকবাল বাহার বলেন, এই শাখায় ৩০ হাজারের মতো গ্রাহক রয়েছে, জুনে তাঁদের ডিপোজিট ছিল ৯২ কোটি টাকা, এখন তা কমে ৮৩ কোটিতে নেমে এসেছে। একটি ভুল মেসেজে এই ব্যাংকের প্রতি মানুষের আস্থা কমেছে।

টাকা নিতে আসেন, দিতে নয় রংপুর শহরের এসআইবিএলের শাখায় গতকাল বিকেলে গিয়ে দেখা গেল দরজা খুলে মুখ ভার করে বের হচ্ছেন শহরের একটি মোটরসাইকেল শোরুমের ব্যবস্থাপক আব্দুর রউফ। তিনি ১০ হাজার টাকার একটি চেক নিয়ে গেলে এক ঘণ্টা অপেক্ষার পরও টাকা না পেয়ে বের হয়ে আসেন। আব্দুর রউফ বলেন, ‘এক ঘণ্টা অপেক্ষা করেও টাকা দিল না। মঙ্গলবার আসতে বলল।’

ব্যাংকের ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, চেক হাতে ক্যাশ কাউন্টারে ১৫-২০ জন গ্রাহক ভিড় করেছেন। সেখানে থাকা কর্মকর্তা চেক দেখে গ্রাহকদের মঙ্গলবার টাকা উত্তোলনের জন্য আসতে বলছেন। অনেকে ফিরে গেলেও কেউ কেউ টাকার অপেক্ষায় বসে থাকেন।

এই পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে রংপুর শাখার সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার সেলিম আহম্মেদ বলেন, আগে প্রতিদিন লেনদেন ৭০ থেকে ৮০ লাখ হলেও এখন ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা লেনদেন হচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে গ্রাহকেরা খুব কম টাকা জমা রাখছেন।’

সাভারে এসআইবিএলের শাখায় গিয়ে গত রোববার সাড়ে চার ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও টাকা তুলতে পারেননি অনেকে। তাঁদেরই একজন সেলিম শিকদার। বলেন, ‘একজন গ্রাহককে এক দিন পর পর সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা বলা হলেও তা দেওয়া হচ্ছে না। গত দুই মাসে ১০ হাজার করে মাত্র ৪০ হাজার টাকা উত্তোলন করতে পেরেছি।’

শাখাটির ব্যবস্থাপক মাসুদ আলম সরকার বলেন, ‘হাজারো ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে কোটি কোটি টাকার ঋণ দেওয়া হয়েছে। তাঁরা টাকা দিচ্ছেন না। আবার কেউ টাকা জমাও দিচ্ছেন না। অন্যদিকে আমানতকারীরা টাকার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। এসব কারণে আমরা আমানতকারীদের চাহিদা অনুযায়ী টাকা দিতে পারছি না। সূত্র আজকের পত্রিকা

পাঠকের মতামত

৪০০ পিস ই’য়া’বাসহ আ’ট’ক বৈষ’ম্যবিরোধী ছাত্র আ’ন্দোলনের ৩ নেতা

টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে ৪০০ পিস ই’য়া’বাসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন ছাত্র প্রতিনিধিকে আ’ট’ক করেছে ডিবি পুলিশ। ...

রোহিঙ্গা ক্যাম্প ডেঙ্গুর ‘হটস্পট’, মৃত্যু কমলেও বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা

কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরগুলো ডেঙ্গুর ‘হটস্পট’ হয়ে উঠেছে। শীত মৌসুমেও এই দুই উপজেলার ...