নিজ গ্রামের মাদরাসা ও এতিমখানার শিশুদের ইফতার করানো হলো না সেনাবাহিনীর মেজর মাহফুজুর রহমানের। তার আগেই নিজের একমাত্র সন্তানকে এতিম করে দুনিয়া থেকে চির বিদায় নিলেন তিনি।
গতকাল মঙ্গলবার (১৩ জুন) রাঙামাটির মানিকছড়িতে পাহাড়ধসে হতাহতদের উদ্ধার করতে গিয়ে চার সেনা কর্মকর্তা নিহত হন। তাদের একজন মেজর মাহফুজুর রহমান।
মেজর মাহফুজুর রহমানের গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলার তালেবপুর ইউনিয়নের ইরতা গ্রামে। তার বাবা বাংলাদেশ ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোজ্জামেল হোসেন।
মাহফুজুর রহমানের পরিবারের সবাই ঢাকায় থাকেন। তার বেড়ে ওঠা লেখাপড়া সবই ঢাকায়। দুই ভাই-বোনের মধ্যে তিনিই সবার বড়। মেজর মাহফুজুর রহমানের পাঁচ বছরের এক ছেলে সন্তান রয়েছে।
মাহফুজুর রহমানের মামি মাকসুদা খানম মিনা জানান, প্রতি বছর রোজায় সে বাড়িতে আসে। বাড়ি সংলগ্ন ইরতা দারুল উলুম এতিমখানার (শিশু সদন) শিশুদের ইফতার করায়। গ্রামের গরিব মানুষের মাঝে কাপড় বিতরণ করে। এবারও ২০ রোজায় গ্রামের বাড়ি এসে মাদরাসায় ইফতার করানোর কথা ছিল তার। কিন্তু সেই আশা আর পূরণ হলো না।
কথাগুলো বলতে বলতে চোখের পানি মোছেন মাকসুদা। বলেন, বড় ভালো ছেলে ছিল মাহফুজ। এলাকার কোনো অনুষ্ঠানে দাওয়াত দিলে সপরিবারে উপস্থিত হত সে। তার অকাল মৃত্যু হওয়ায় গ্রামবাসী এক রত্ন হারাল।
প্রতিবেশী মো. ফয়সাল জানান, মাহফুজুরের বাপ-চাচা মিলে তিন ভাই। দুই ভাইয়ের কোনো ছেলেসন্তান নেই। বড় ভাইয়ের ঘরে মাহফুজুই একমাত্র ছেলে। তাই ছোট থেকেই সবার আদরে বড় হয়েছেন তিনি। একজন আদর্শ মানুষ ছিলেন মাহফুজুর। অসাধারণ ছিল তার ব্যবহার। ছিলেন ধার্মিকও। মেজর মাহফুজুরের হঠাৎ মৃত্যুর খবরে পুরো গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে বলে জানান তিনি।
মেজর মাহফুজুরের মামাতো ভাই তালেবপুর ইউনিয়নের মেম্বার হুমায়ুন কবীর বলেন, ছোটবেলা থেকেই ঢাকায় বড় হলেও নিজ গ্রামের প্রতি তার অনেক টান ছিল। বছরে একাধিকবার তিনি গ্রামে আসতেন। তার মৃত্যুতে আমরা মর্মাহত।
গ্রামের বাড়িতে মেজর মাহফুজুর রহমানের দাদা এবং নানার বাড়ি পাশাপাশি। সবাই ঢাকায় বসবাস করেন বলে নিজেদের বাড়ি খালি পড়ে আছে। এদিকে মৃত্যু সংবাদ শুনে বুধবার ভোরেই গ্রামের বাড়ির আত্মীয়-স্বজন সবাই ঢাকায় তার পরিবারের কাছে চলে গেছেন। জাগোনিউজ
পাঠকের মতামত