ব্যর্থতা ঢাকতে ভুয়া আসামি বানালো পুলিশ!
উখিয়ায় মূর্তি চুরির ঘটনায় প্রকৃত অপরাধী ধরা পড়েনি

কক্সবাজারের উখিয়ায় মূর্তি চুরির ঘটনায় প্রকৃত অপরাধীদের শনাক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে পুলিশ। পরে নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে প্রকাশ বড়ুয়া নামের এক ব্যক্তিকে সামনে এনে ভয়ভীতি দেখিয়ে কয়েকজনের নাম শিখিয়ে নিয়ে তাদেরকে মিথ্যা মামলায় আসামি বানানোর অভিযোগ উঠেছে। মামলার নম্বর-২২।
এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে সন্তোষ বড়ুয়া ও মিলন বড়ুয়ার বিরুদ্ধে। মামলার এজাহারে অজ্ঞাত চোর/চোরেরা বিবাদী হিসেবে লিপিবদ্ধ করা হলেও টাকার বিনিময়ে প্রকাশ বড়ুয়াকে ১ নম্বর বিবাদী করে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি নিয়ে নিরপরাধ তিনজনকে আসামি বানানো হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। একাধিকবার চেষ্টা করে অভিযুক্ত দুইজনের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
শিখিয়ে দেওয়া নিরপরাধ আসামিরা হলেন— পূর্ব মরিচ্যা এলাকার নুর আহমদের ছেলে মো. তারেক, মোহাম্মদ সাকেরের ছেলে মো. রিয়াজ ও দানু মিয়ার ছেলে জামাল হোসেন।
বিষয়টি স্বীকার করেছেন মামলার প্রধান আসামি প্রকাশ বড়ুয়া। তিনি বলেন, “এখানে যে কয়জন আছে, ওদের নাম বলতে বলেছিল। এগুলো বলতে বলেছে সন্তোষ ও মিলন বড়ুয়া। তারা আমাকে জিজ্ঞেস করেছে, আমি জড়িত আছি কিনা। আমি বলেছি আমি নেই। তখন তারা বলেছে, তুমিও থাকো ওদের সাথে, তোমাকে দিয়ে কাজ করতে হবে। তুমি টেনশন করো না, আমরা তোমাকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসবো।” ৯ অক্টোবর উখিয়া থানায় হেফাজতে থাকাকালীন এ বক্তব্য দেন প্রকাশ বড়ুয়া।
ভুক্তভোগী মোহাম্মদ তারেকের মা বলেন, “প্রকাশ বড়ুয়ার কাছ থেকে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি নিয়ে আমার ছেলে তারেককে মূর্তি চুরির অপবাদ দিয়ে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। থানায় গিয়ে আমার ছেলের সাথে দেখা করলে প্রকাশ বড়ুয়া নিজেই বলে— সন্তোষ আর মিলন টাকা দেবে বলে তারেক, শাকের ও রিয়াজের নাম বলতে বলেছে। এর প্রমাণস্বরূপ আমাদের কাছে রেকর্ডিংও রয়েছে। আমার ছেলে নির্দোষ। আমরা প্রশাসনের নিকট বিচার দাবি করছি।”
আরেক ভুক্তভোগী রিয়াজের স্ত্রী শামসুন্নাহার বলেন, “আমার স্বামীকে সন্দেহজনকভাবে ধরে থানায় নিয়ে পরে মামলার আসামি দেখিয়ে চালান দেওয়া হয়েছে। আমি আমার স্বামীর মুক্তি দাবি করছি।”
ভুক্তভোগী স্থানীযরা অভিযোগ, গত ৪ অক্টোবর ঘটে যাওয়া মূর্তি চুরির ঘটনায় তদন্তে কোনো অগ্রগতি না পেয়ে পুলিশ এক অদ্ভুত কৌশল নেয়। ৯ অক্টোবর প্রকাশ বড়ুয়াকে দিয়ে কয়েকজনের নাম মুখস্থ করিয়ে তা মামলার এজাহারে সংযুক্ত করা হয়। ফলে নিরপরাধ মানুষ হঠাৎ করেই মূর্তি চোরের আসামি হয়ে যায়।
ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, আসল অপরাধীদের চিহ্নিত করার পরিবর্তে পুলিশ সহজ টার্গেট বেছে নিয়ে দায়সারা কাজ করেছে। এতে একদিকে সাধারণ মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছেন, অন্যদিকে প্রকৃত মূর্তি চোররা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উখিয়া থানার এসআই তপু বড়ুয়া। তিনি বলেন, “আমি কাউকে শিখিয়ে দিয়ে কারো নাম বলার প্রশ্নই ওঠে না। বরং আসামিদের জনগণ ধরে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছে।”
বিষয়টি অবগত করে জানতে চাইলে উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি জিয়াউল হক বলেন, যতটুকু জানি আসামীদের পাবলিক ধরে পুলিশের কাছে দিয়েছিল। এরপরও যদি কোন অভিযোগ উঠে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে এ ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা বলছেন, পুলিশের এ ধরনের কর্মকাণ্ড কেবল ভুয়া আসামি তৈরির মাধ্যমে ন্যায়বিচারকে বাধাগ্রস্ত করছে। এলাকাবাসীর দাবি— স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হোক।
সৌজন্য: টেলিগ্রামনিউজ

পাঠকের মতামত