তোফায়েল আহমদ, কক্সবাজার::
মিয়ানমার থেকে আসা ইয়াবার চালান ঠেকাতে কক্সবাজারের টেকনাফের নাফ নদে সাময়িকভাবে মাছ ধরা বন্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে স্থানীয় লোকজন। দেশের যুবসমাজকে মাদকের গ্রাস থেকে রক্ষায় এটি সময় উপযোগী সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছে তারা। এই পদক্ষেপে ইয়াবার সঙ্গে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশও বন্ধ হবে বলে মনে করে স্থানীয় লোকজন।
তবে জেলেরা তাদের জীবিকা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছে। বিকল্প হিসেবে নিরাপত্তা বাহিনীর টহলের মাধ্যমে দিনের বেলায় মাছ ধরার সুযোগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে কেউ কেউ।
নাফ নদে সাময়িকভাবে মাছ ধরা বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বৃহস্পতিবার তাঁর কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে জানান। তবে টেকনাফের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাহেদ হোসেন সিদ্দিকী গতকাল শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত মাছ ধরা বন্ধের লিখিত নির্দেশনা পাননি বলে জানিয়েছেন।
ইউএনও বলেন, ‘নাফ নদ নির্ভরশীল টেকনাফের চারটি ইউনিয়নের তিন হাজারের মতো জেলে রয়েছে। মাছধরা বন্ধের প্রক্রিয়াটি চলছে অনেক আগ থেকেই। তাই এ নির্দেশনা হাতে পেলেই জেলেদের নাফ নদে নামতে নিষেধ করা হবে। ’
তবে ওই নির্দেশনার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ ও প্রচার হওয়ায় ইতিমধ্যে নাফ নদে মাছ ধরা এক প্রকার বন্ধ হয়ে গেছে বলে জেলেরা জানিয়েছে। জেলেদের ভাষ্য, জেলে পল্লীতে প্রায় পাঁচ হাজার জেলে রয়েছে।
নাফ নদে মাছ ধরা বন্ধ প্রসঙ্গে টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাওলানা নুর আহমদ আনোয়ারি কালের কণ্ঠকে বলেন, নাফ নদই হচ্ছে ইয়াবা পাচারের অন্যতম প্রধান রাস্তা। মাছ ধরার জেলেরাই পাচারের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল—এটাও মিথ্যা নয়। তিনি বলেন, বিজিবি সদস্যদের টহলের জন্য পর্যাপ্ত স্পিড বোটের ব্যবস্থা করা হলে মনে হয় বেশ ভালো ফল পাওয়া যাবে। সেই সঙ্গে গভীর সাগরেও নৌবাহিনীর টহল বাড়ানোর দাবি জানান তিনি।
টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মোহাম্মদ আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, নাফ নদে মাছ ধরা বন্ধ করা হলে ইয়াবা পাচার বন্ধ হয়ে যাবে। তবে গভীর সাগর পথে বড় বড় ইয়াবার চালান পাচার ঠেকানো কিভাবে সম্ভব সেটা চিন্তা করা দরকার।
শাহপরীর দ্বীপ জালিয়াপাড়ার জেলে আবদুর রশিদ জানান, নাফ নদ দিয়ে ইয়াবা আসে, এটা সত্য। তবে যারা প্রকৃত জেলে, যারা সারা বছর নদে জাল ফেলে জীবিকা নির্বাহ করে তারা কখনো ইয়াবার সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়।
টেকনাফের হোয়াইক্যং কাটাখালী গ্রামের জেলে জওহর আলী মাঝি বলেন, ‘আমার পাড়ার ১৫ জন জেলে নাফে মাছ ধরে। সরকারের নির্দেশ শুনে আমরা কেউই আজ (গতকাল) নাফে নামিনি। তবে মাছ না ধরে কিভাবে খাব চিন্তা করছি। ’ তিনি জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানান।
সাবরাং এলাকার জেলে নুর মোহাম্মদ তাদের কিছুটা ক্ষতি হলেও সরকারের সিদ্ধান্তকে ধন্যবাদ জানান। তবে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থার দাবি জানান।
টেকনাফের হ্নীলা এলাকার জেলে রহিম উল্লাহ জানান, মিয়ানমার থেকে ইয়াবার বৃহৎ চালানগুলো আসে মূলত রাতের অন্ধকারে। তাই দিনের বেলায় বিজিবি ও কোস্ট গার্ডের টহল জোরদার করে জেলেদের মাছ ধরার সুযোগ দেওয়া যেতে পারে। সেটা হলে জেলে এবং সাধারণ মানুষের জন্য ভালো হবে।
টেকনাফের অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক জাহেদ হোসেন বলেন, ‘নাফ নদ দিয়ে মিয়ানমার থেকে মাছ ধরার ছোট নৌকা দিয়ে বাংলাদেশ সীমান্তে ইয়াবার চালান যেমন আসে তেমনি আসে রোহিঙ্গাও। এখন নাফ নদে মাছ ধরা বন্ধ থাকলে ইয়াবার চালান বন্ধের পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের অবৈধ অনুপ্রবেশও বন্ধ হবে। ’
তিনি বলেন, ইয়াবার চালান বন্ধে শুধু নাফ নদে মাছ ধরা বন্ধ নয়, বঙ্গোপসাগর হয়ে যে বড় চালানগুলো এ দেশে আসে তা প্রতিরোধ করার জন্যও প্রশাসনের সতর্কতা জরুরি।
সুত্র: কালেরকন্ঠ
পাঠকের মতামত