
বাংলাদেশের পূর্ব সীমান্তে মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নতুন এক বাস্তবতা সৃষ্টি করেছে জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। রাখাইন রাজ্যের প্রায় পুরোটা এখন এই গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে, যা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন থেকে শুরু করে আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক সমীকরণে বড় ধরনের জটিলতা তৈরি করেছে বাংলাদেশের জন্য।
বিশেষজ্ঞদের মতে, রাখাইনে কার্যকর সরকারের অনুপস্থিতি, আরাকান আর্মির সশস্ত্র উত্থান, এবং ভারতের সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ—সব মিলিয়ে বাংলাদেশের পূর্ব সীমান্তে একটি সংবেদনশীল ভূরাজনৈতিক বাস্তবতা তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মোহাম্মদ তৌহিদ হোসেন স্বীকার করেছেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা এখন আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণ। তিনি বলেন, “তাদের সম্পৃক্ততা ছাড়া রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান সম্ভব নয়।” তবে যোগাযোগ যতই থাকুক, একে একটি ‘নন-স্টেট অ্যাক্টর’ হিসেবেই দেখছে বাংলাদেশ সরকার।
সম্প্রতি বান্দরবানের থানচি উপজেলার রোমাক্রি ঝরনা এলাকায় পাহাড়ী সম্প্রদায়ের বর্ষবরণ উৎসবে আরাকান আর্মির সদস্যদের অংশগ্রহণের অভিযোগ উঠেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ও ছবিতে বাংলাদেশ ও আরাকান আর্মির পতাকা একসাথে দেখা গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০ এপ্রিল ওইসব সদস্যরা সাঙ্গু নদীপথে বাংলাদেশের ভেতর প্রবেশ করে পরে সীমান্ত পার হয়ে রাখাইনের লাবোয়া ক্যাম্পে ফিরে যায়। এটি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের জন্য বিপজ্জনক ইঙ্গিত বলেই মনে করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।
৫ আগস্ট ২০২৪ সালের গণ-আন্দোলনে বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর, ভারতের সঙ্গে আরাকান আর্মির ঘনিষ্ঠতা আরও বাড়ে। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, দিল্লিতে আরাকান আর্মির শীর্ষ নেতাদের সাথে একাধিক বৈঠক হয়েছে। মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রীসহ শীর্ষ কর্মকর্তারাও আরাকান আর্মির প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করেছেন।
এই কৌশলগত জোট বাংলাদেশের দৃষ্টিভঙ্গিতে এক “অশনি সংকেত”, কারণ এর ফলে সীমান্ত অস্থিরতা কিংবা প্রভাব বিস্তারের প্রচেষ্টা আরও বেড়ে যেতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন বাংলাদেশকে একদিকে আরাকান আর্মি ও মায়ানমারের সামরিক জান্তা—উভয়ের সাথে সমন্বয় করে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পথ তৈরি করতে হবে। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মাঝে কূটনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা করে জাতীয় স্বার্থ নিশ্চিত করতে হবে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক খলিলুর রহমান বলেন, “আমরা আরাকান আর্মির সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করেছি। তারা বাস্তবতা—তাদের এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।”
বিশ্লেষকরা মনে করেন, আরাকান আর্মির দিক থেকে এখন দুটি বড় হুমকি দেখা দিচ্ছে:
বাংলাদেশের ভেতর সরাসরি তাদের সশস্ত্র উপস্থিতি।
ভারতের সঙ্গে তাদের কৌশলগত সম্পর্ক।
যদিও বর্তমানে এটি পূর্ণমাত্রায় সংঘর্ষে রূপ নেয়নি, তবুও এটি একটি “এলার্মিং সিচুয়েশন” যা ভবিষ্যতে বড় ধরনের নিরাপত্তা হুমকিতে রূপ নিতে পারে। তথ্যসূত্র, বার্তা বাজার
পাঠকের মতামত