
নিউজ ডেস্ক::
সংযুক্ত আরব আমিরাতে শ্রমশক্তি রফতানির বাধা দূর করতে জোর তৎপরতা চলছে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নানামুখী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমিরাতের শীর্ষ দুই সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে আভাস পাওয়া গেছে, খুব শিগগির ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আশা করছে বাংলাদেশ। এই আশাবাদ সত্যি হলে, আবারও আমিরাতে শ্রমশক্তি রফতানি শুরু করতে সক্ষম হবে সরকার। তবে আমিরাত কর্তৃপক্ষ ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে তাদের দিক থেকে প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকার কথা জানালেও এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক কোনও প্রতিশ্রুতি দেয়নি।
দক্ষ ও অদক্ষ খাতে ৭ লাখ থেকে ৮ লাখ বাংলাদেশি প্রবাসী শ্রমিক কর্মরত আছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ আমিরাতে। ২০১২ সাল থেকে বাংলাদেশি নতুন শ্রমিক নিয়োগে ভিসা দেওয়া বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। সেখানে অবস্থানরতদের চাকরি বদলেও আরোপিত হয় নিষেধাজ্ঞা। নানা কারণে শ্রমিক নিয়োগে ভিসা দেওয়া বন্ধ হলেও প্রধানতম একটি কারণ হিসেবে ‘অপরাধ প্রবণতা’র কথা বলা হয়। রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান আমিরাতের সংবাদমাধ্যম খালিজ টাইমসকে জানান, বর্তমানে ৭০০ থেকে ৮০০ বাংলাদেশি সংযুক্ত আরব আমিরাতে কারাভোগ করছে। তিনি জানিয়েছেন, অপরাধ প্রবণতা রুখতে সকল প্রবাসী শ্রমিকদের ওপর সরকার এরইমধ্যে থ্রি-টায়ার নিরাপত্তা পরীক্ষা চালিয়েছে। এ ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করা হবে।
খালিজ টাইমস-এর ওই প্রতিবেদনে মোহাম্মদ ইমরানকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, বন্ধ ভিসা চালুর উদ্যোগ ত্বরান্বিত করতে নিরাপত্তা ইস্যুতেও কড়াকড়ি আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ। ‘আরব আমিরাত কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চলমান আলোচনার সাপেক্ষে শ্রমিকদের জীবন বৃত্তান্ত যাচাই ও নিরাপত্তা পরীক্ষার ওপর কড়াকড়ি আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা। আমিরাতে থাকা বাংলাদেশিদের অপরাধ সংঘটনের হার বেড়ে যাওয়ার কারণে নিরাপত্তাজনিত কিছু উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। আমরা আরব আমিরাত সরকারকে আশ্বস্ত করেছি। বলেছি, এ সমস্যা মোকাবিলায় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’ জানিয়েছেন রাষ্ট্রদূত ইমরান।
গত ১৬ মে আমিরাতের মানবসম্পদ মন্ত্রী সাকর গোবাশের সঙ্গে আবুধাবিতে বৈঠক করেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি। বৈঠকে উপস্থিত ৭ সদস্যের প্রতিনিধি দলে রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরানও ছিলেন। বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৈঠকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে আরও কর্মী পাঠানো এবং তাদের অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
আমিরাতভিত্তিক অনলাইন ন্যাশনাল পোস্টের দাবি, মন্ত্রী নূরুল ইসলাম এ ব্যাপারে আমিরাত কর্তৃপক্ষের ইতিবাচক সাড়া পেয়েছেন। মন্ত্রী জানিয়েছেন, শিগগিরই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ব্যাপারে আমিরাতের পক্ষ থেকে তাকে আশ্বস্ত করা হয়েছে। ওই বৈঠকের প্রসঙ্গ টেনে রাষ্ট্রদূত ইমরানও খালিজ টাইমসকে নিজের আশাবাদের কথা জানান। তিনি বলেন, ‘দুই দেশের কর্মকর্তাদের মধ্যকার বৈঠক থেকে সত্যিকার অর্থে ইতিবাচক ফলাফল এসেছে।’
২০১৫ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাত ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করতে ঢাকায় একটি ভিসা সেন্টার খোলে। ২০১৬ সালের অক্টোবরে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলো পরিদর্শনের পর সন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের কারিগরি বিশেষজ্ঞরা। তবে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে আমিরাত কর্তৃপক্ষের সরাসরি কোনও প্রতিশ্রুতির কথা জানা যায়নি। কেবলই বলা হয়েছে প্রচেষ্টার কথা। আমিরাতের মানবসম্পদ মন্ত্রী বলেছেন, ‘সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য শ্রমবাজার আরও উন্মুক্ত করতে প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’ এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া কিংবা দিনক্ষণের কথা জানাননি তিনি।
পাঠকের মতামত