প্রকাশিত: ১৪/১০/২০২০ ১০:০৫ পিএম
বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্রে সজ্জিত সশস্ত্র রোহিঙ্গারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেদের অস্তিত্ব জাহির করতে এভাবে ছবি দিয়ে প্রচারণাও চালায়।

আবদুর রহমান, টেকনাফ

বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্রে সজ্জিত সশস্ত্র রোহিঙ্গারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেদের অস্তিত্ব জাহির করতে এভাবে ছবি দিয়ে প্রচারণাও চালায়।

সশস্ত্র বাহিনীর তৎপরতা, মাদক-মানবপাচার, চাঁদাবাজি, অপহরণ বাণিজ্য ও দোকান দখল থেকে শুরু করে তুচ্ছ ঘটনায়ও ব্যবহার করা হচ্ছে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র। ক্যাম্পে নিজেদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও ক্ষমতা বিস্তারে ক্ষুদ্রাস্ত্র ব্যবহার করছে একশ্রেণির রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী। গত ১-৮ অক্টোবর পর্যন্ত সবচেয়ে বড় আশ্রয়কেন্দ্র উখিয়া কুতুপালং ক্যাম্পে পাহাড়ি রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের দু’পক্ষের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনায় অন্তত আট জন নিহত হয়। তখনই নেমে আসে বড় আশ্রয় ক্যাম্পটিতে ভয়াবহ অশান্তি। এরপর যৌথ অভিযান শুরু হলেও সংঘর্ষ থেমে নেই। এখন প্রশ্ন উঠেছে, আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের পাহাড়ি ক্যাম্পে এত অস্ত্র-গোলাবারুদ আসছে কোত্থেকে? তা-ও আবার অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র!

স্বাধীনতার আগে থেকেই রোহিঙ্গাদের অনেকের এ দেশে ব্যবসায়িক সূত্রে আসা-যাওয়া ছিল। তবে সামরিক নিপীড়ন শুরু হওয়ায় আশির দশক থেকেই হাজার হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পাড়ি জমাতে থাকে। ২০১৭ সালের আগে অন্তত সাড়ে তিন লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে বসতি স্থাপন করেছিল। এরপর ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ভয়াবহ নিপীড়ন শুরু হলে মানবিক কারণে তাদের আশ্রয় দিতে রাজি হয় বাংলাদেশ সরকার। সে সময় এক বছরে চলে আসে সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা। বর্তমানে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় ৩৪টি স্বীকৃত ক্যাম্পে ১১ লাখ ১৮ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাস করছে। এসব রোহিঙ্গাকে মানবিক কারণে জায়গা দেওয়ার সময় তাদের সঙ্গে আনা সামগ্রী সরকারের পক্ষে যথাযথভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি। মানবিক কারণেই তখন মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গুলি থেকে তাদের পিঠ বাঁচানোর বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে তাদের আশ্রয় দিয়েছে সরকার। তবে তারাই এখন হয়ে উঠেছে সরকারের মাথাব্যথার কারণ। একে তো তাদের ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে নানা কূটনৈতিক চেষ্টা চালিয়েও এখনও সফলতা মেলেনি পাশাপাশি তারা নষ্ট করছে উখিয়া-টেকনাফের শান্তিময় পরিবেশ। গোলাগুলি ও হামলায় প্রায় মাসেই রক্তাক্ত হয়ে উঠছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর পরিবেশ।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০১৭ সালের আগস্টে মানবেতর পরিস্থিতির মুখে পড়া রোহিঙ্গাদের মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে জায়গা দেওয়ার সময় সরকারের পক্ষে তাদের সঙ্গে আনা ব্যাগপত্রের সব মালামাল পরীক্ষা করা সম্ভব হয়নি। এই সুযোগে সিংহভাগ সাধারণ রোহিঙ্গার সঙ্গে সে সময়ে কিছু অস্ত্রবাজও ঢুকে পড়ে। এর প্রমাণ পাওয়া যায়, প্রথম বছর যেতে না যেতেই এসব ক্যাম্পে সশস্ত্র তৎপরতা শুরু করতে দেখা যায় অনেককেই। বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের কাছে পরিষ্কার, এসব রোহিঙ্গা মূলত ডাকাতি এবং মানব ও মানবপাচার কারবারের জন্যই এমন সশস্ত্র পেশা বেছে নিয়েছে। তবে ক্যাম্প ছেড়ে এসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডেও মাঝে মাঝে ডাকাতি করায় তারা এখন দেশের নিরাপত্তার জন্যও হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। ফলে শুরু থেকেই এদের দমন করতে তৎপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে তাদের পাহারার ফাঁক গলিয়ে নানাভাবে উখিয়া-টেকনাফের পাহাড়ি এলাকাগুলোতে এখনও তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে সশস্ত্র রোহিঙ্গারা। ফলে তাদের অস্ত্রগুলোর উৎস কি সেটা যাচাই এবং এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। তাছাড়া রোহিঙ্গা শিবিরে উত্তেজনা এবং সংঘর্ষ জিইয়ে রেখে পরিবেশ ঘোলাটে করতে মিয়ানমারের কোনও গোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের কাছে গোপনে অস্ত্র সরবরাহ করছে কিনা সেটাও যাচাই জরুরি।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভারত ও মিয়ানমারে সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্ত এখনও অরক্ষিত। এসব জায়গা দিয়েই ওই দুটি দেশ থেকে রোহিঙ্গার জন্য অস্ত্র আসে। তারপর বিভিন্ন কৌশলে সেগুলো পৌঁছে যায় ক্যাম্পে। তবে এসব অস্ত্রের প্রধান উৎস মিয়ানমার। এছাড়া কিছু স্থানীয় দুর্বৃত্তের সহায়তা নিয়েও পাহাড়ি এলাকায় অবৈধ অস্ত্রের কারখানা বানিয়ে তারা সংগ্রহ করছে আগ্নেয়াস্ত্র ছাড়াও নানা ধরনের দেশীয় অস্ত্র।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, সর্বশেষ (১২ অক্টোম্বর) ভোরে টেকনাফের শামলাপুরের জলসীমানায় ঢুকে জেলেদের অপহরণের চেষ্টাকালে মিয়ানমারের ডাকাতসহ ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ সময় তাদের কাছে ৪টি অস্ত্র পাওয়া যায়। এছাড়া চলতি মাসের ১-১২ অক্টোবর পর্যন্ত কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ক্যাম্পসহ পাহাড়ি এলাকা থেকে পিস্তলসহ ২১টি দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র এবং অর্ধশতাধিক গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলাবাহিনী। এ সময় রোহিঙ্গাসহ ৪০ জন ডাকাতকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ঘটনায় দুই থানায় ৭টি মামলা করা হয়েছে। কিন্তু এ বছরের গেলো ৯ মাসে এসব এলাকায় আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়েছিল ৯০টি। এই পরিসংখ্যান হিসাব করলে বোঝা যায় ক্যাম্পে বর্তমানে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার কতটা বৃদ্ধি পেয়েছে।

সীমান্ত ও ক্যাম্প নিয়ে কাজ করেন উচ্চ পর্যায়ের এমন একজন সরকারি কর্মকর্তা বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে মাদক চালানের সঙ্গে অস্ত্র আসছে এতে কোনও সন্দেহ নেই। মাদকের মূল হোতারা মাদক পাচারকালে ব্যবহারের জন্য তাদের বহনকারীদের হাতে তুলে দিচ্ছে অস্ত্রশস্ত্র। আবার অনেকে মাদক বহনকারী হিসেবে ব্যবহার করছে রোহিঙ্গাদের। সেই সুবাদে ক্যাম্পে তারা যে কোনও কর্মকাণ্ডে অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার করছে। এতে প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে।’

সরেজমিনে স্থানীয়রা বলছেন, ‘ক্যাম্পে মাদকসহ নানা ধরনের অবৈধ ব্যবসার আধিপত্যকে কেন্দ্র করেই এই সংঘাত। এই গ্রুপগুলোর সঙ্গে মিয়ানমারের যোগাযোগ থাকার দাবি করেছেন কেউ কেউ। আবার অনেকে এর পেছনে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর ইন্ধন থাকার অভিযোগ তোলেন। তাদের দাবি, রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী  গ্রুপগুলোর অস্ত্রের প্রধান উৎস মিয়ানমার। তাছাড়া সহায় সম্বল ফেলে গত তিন বছর আগে বাংলাদেশ আসা রোহিঙ্গাদের হাতে কিভাবে এত অস্ত্র এল! সেময় আমরা অনেকে বলেছিলাম তারা মিয়ানমার থেকে আসার সময় ইয়াবার চালানের সঙ্গে অস্ত্রও এনেছিল। বর্তমানে ক্যাম্পের অবস্থা দেখলে বিষয়টি পরিষ্কার।’

নাম না বলার শর্তে কয়েকজন রোহিঙ্গা নেতা বলেন, ‘অধিকাংশ রোহিঙ্গা ক্যাম্প পাহাড়ি এলাকায়। সন্ত্রাসীদের অস্ত্রের গুদামও সেখানে। রাতে জনপদে নেমে আসে ডাকাতিসহ খুন খারাবি করতে। এমনকি পেশাদার এসব খুনি চুক্তি নিয়েও খুনের কাজ করে। হত্যা শেষে আবার চলে যায়। এমনকি একজনের কাছেই আছে দশটি আগ্নেয়াস্ত্র। কিছু বিদেশি, কিছু দেশি। ক্যাম্পে অত্যাধুনিক অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র এখন সন্ত্রাসীদের হাতে হাতে। তবে তাদের সঙ্গে কিছু স্থানীয় লোকজনও জড়িত রয়েছে।’

র‌্যাব ও বিজিবি দেওয়া তথ্য মতে, কক্সবাজারের সীমান্তের ক্যাম্পসহ রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় বিভিন্ন সময়ে অভিযান পরিচালনা করে চলতি বছরের গেল ৯ মাসে প্রায় শতাধিক দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এসময় ২১১টি গোলাবারুদ পাওয়া গেছে। অস্ত্রের মধ্যে ছিল, ৫৩টি দেশীয় বন্দুক, নাইন এমএম ২টি পিস্তল, ৬টি রিভলবার, ২টি থ্রি কোয়ার্টার গান, ৪টি এলজি, ৯টি এসবিবিএল, ১টি রাইফেল। এসব আগ্নেয়াস্ত্রসহ অর্ধ শতাধিক রোহিঙ্গা ডাকাতকে আটক করা হয়েছে। যাদের বেশির ভাগই রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা। এর আগের বছর এসব ক্যাম্পে অভিযান চালিয়ে ২৬টি দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্রসহ ১৩৮টি গোলাবারুদ উদ্ধার করেছিল র‌্যাব।

র‌্যাব ও পুলিশ জানায়, ‘ক্যাম্পে সন্ত্রাসীদলের অস্ত্র এগুলো। খুন-জখম, মাদক, মানব পাচার, চাঁদাবাজি, অপহরণ-দোকান বাণিজ্যে এবং আধিপত্য বিস্তারের জন্যই এসব অস্ত্রের মজুত গড়ে তোলে। মূলত সমুদ্র, উপকূল, সীমান্ত জল-পাহাড়ি জনপদ দিয়ে ক্যাম্পে অস্ত্র ঢুকছে। তবে এক প্রকারে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া গেছে মিয়ানমার থেকেও অস্ত্র আসে। পাশপাশি অস্ত্র তৈরির কারিগর এনে ক্যাম্প সংলগ্ন পাহাড়ি জনপদে অস্ত্র নির্মাণ করছে তারা। বলতে গেলে সীমান্তের সব রুট দিয়ে মাদক চালানের সঙ্গে অস্ত্র ঢুকছে।’

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সরবরাহের জন্য গহীন পাহাড়ে গড়ে তোলা হয়েছে অস্ত্র তৈরির অস্থায়ী কারখানাও। সেখানে চারপাশে পাহারা বসিয়ে লেদ মেশিন ও অন্যান্য যন্ত্রাংশের সহায়তায় দেশীয় প্রযুক্তিতে আগ্নেয়াস্ত্রসহ নানা ধরনের দেশীয় অস্ত্র তৈরি করা হয়। গত ৫ অক্টোবর শুক্রবার এমন একটি অস্ত্র তৈরির কারখানার সন্ধানে উখিয়ার পালংখালী মধুরছড়া নামক পাহাড়ি জনপদে অভিযান চালায় র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-১৫)। এসময় সেখান থেকে অস্ত্র তৈরির দুই কারিগরকে আটক করে র‌্যাব। এসময় তাদের স্বীকারোক্তি মতে ৩টি দেশি অস্ত্র, ২ রাউন্ড গুলি ও বিপুল পরিমাণ অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করে। আটক দুজন আবার বাংলাদেশি। তারা হচ্ছে মহেশখালী উপজেলার বাসিন্দা আনোয়ার (৫০) ও এখলাস (৩২)। এই উপজেলায় দেশীয় অস্ত্র তৈরির আরও কারখানা রয়েছে বলে একটি বিশ্বস্ত সূত্র নিশ্চিত করেছে।  অর্থাৎ স্থানীয় কিছু বাংলাদেশিরও অর্থের লোভে রোহিঙ্গাদের অস্ত্র বানিয়ে সহযোগিতা করছে।

জানতে চাইলে র‌্যাব-১৫ কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের উপ-অধিনায়ক মেজর মেহেদী হাসান বলেন, ‘সম্প্রতি সময়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সরবরাহকারী দুই অস্ত্র তৈরির কারিগরকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি। তারা স্বীকার করেছিল দীর্ঘদিন ধরে পাহাড়ি জনপদে একটি কারখানায় অস্ত্র তৈরি করে ক্যাম্পে সরবরাহ করে আসছিল। তারা কী পরিমাণ অস্ত্র সরবরাহ করেছে সেই বিষয়ে তদন্ত চলছে।’

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘বিভিন্ন এলাকার সীমান্ত দিয়ে ভারত ও মিয়ানমার থেকে অস্ত্র আসে। তারপর বিভিন্ন কৌশলে সেগুলো পৌঁছে যায় ক্যাম্পে। এসব অস্ত্রধারী ধরতে র‌্যাবের একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে। তথ্য পাওয়া মাত্রই তাদের ধরা হবে। বিশেষ করে মাদক চালান পাচারের জন্য একটি চক্র তাদের কাছে অস্ত্র তুলে দিচ্ছে। মাদক পাচারের সুবিধার্থে অস্ত্রের ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘মূলত রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় মাদক আর অস্ত্র একই সূত্রেই গাঁথা। আসলে এটা একটি বিশাল সিন্ডিকেট। তবে মূল হোতাদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে র‌্যাব।’

এদিকে গত ২০১৬ সালের ১৩ মে ভোররাতে টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের নয়াপাড়ার মুচনী এলাকার নিবন্ধিত রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার ক্যাম্পে সশস্ত্র হামলা চালায় একদল দুর্বৃত্ত। এতে নিহত হন আনসার ক্যাম্পের কমান্ডার মো. আলী হোসেন। এ সময় ১১টি বিভিন্ন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র ও ৬৭০টি গুলি লুট করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত থাকার কারণে রোহিঙ্গাদের দায়ী করে র‌্যাব ও পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

ক্যাম্পের দায়িত্বে নিয়োজিত এপিবিএন পুলিশ বলছে, উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে দায়িত্বে নেওয়ার পর থেকে গত তিন মাসে এলজিসহ ১৪টি আগ্নেয়াস্ত্র ও শতাধিক গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে। বেশিরভাগই টেকনাফের নয়াপাড়া, উনছিপ্রাং ও শালবন এবং উখিয়ার লম্বাশিয়া, কুতুপালং, জামতলী ও মধুরছড়া ক্যাম্প থেকে এসব আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে শরণার্থী ক্যাম্পে দায়িত্বে থাকা কক্সবাজারে ১৬’র ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ হেমায়েতুল ইসলাম বলেন, ‘এটা সত্য হঠাৎ করে ক্যাম্পে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার বেড়েছে। ক্যাম্পে কিভাবে অস্ত্র এল, বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি। পাশাপাশি অস্ত্রধারীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’

অস্ত্রের রুট

গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, বিভিন্ন এলাকার সীমান্তে দিয়ে ভারত ও মিয়ানমার থেকে অস্ত্র আসে। বিশেষ করে মিয়ানমারের কাছাকাছি কক্সবাজারের ক্যাম্পগুলো হওয়ায় নাফ নদী, সমুদ্র, উপকূল ও পাহাড়ি এলাকায় ক্যাম্পে অস্ত্র ঢুকছে। এছাড়া ক্যাম্প সংলগ্ন পাহাড়ি জনপদে কারিগর নিয়ে এসে তৈরি করছে দেশীয় অস্ত্র। বিশেষ করে সাতকানিয়া, বান্দরবন, রাঙামাটি, নাইক্ষ্যংছড়ি, লামা-আলী কদম, আনোয়ারা, বাঁশখালী, পতেঙ্গা, সীতাকুন্ড, ঘুমধুম, উখিয়া ও টেকনাফ সীমান্ত হয়ে ক্যাম্পের সন্ত্রাসীদের হাতে পৌঁছে যাচ্ছে অস্ত্রগুলো। এসবের কিছু ধরা পড়লেও অধিকাংশই ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়।

ক্যাম্পের অস্ত্রধারীরা

সম্প্রতি কক্সবাজারের ক্যাম্পে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা বেপয়োরা হয়ে উঠেছে। ফলে তাদের ধরতে মাঠে নেমেছে একাধিক আইনশৃঙ্খলাবাহিনী। অস্ত্রধারীদের মধ্যে মো. আনাস, মাহাদ, মুন্না, হাফেজ, মো. ইউনুছ, শাহ আলম, পুতিয়া, মো. খালেক, রাশেদ জকির আহমদ ওরফে জকির ডাকাত, হাসান প্রকাশ কামাল, খলিফা সেলিম, খায়রুল নবী, মোহাম্মদ রাজ্জাক, মোহাম্মদ রফিক, দোস মোহাম্মদ, নুরু মিয়া প্রকাশ ভুইল্ল্যা, মোহাম্মদ নুর, বনি আমিন, সালমান শাহ, রশিদ উল্লাহ, খায়রুল আমিন, মহিউদ্দিন ওরফে মাহিন, সাদ্দাম হোসেনসহ আরও অনেকে রয়েছে। তারা সবাই উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পের বাসিন্দা। এসব বাহিনীর কাছে একাধিক দেশীয় তৈরি বন্দুকসহ আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ রয়েছে।

টেকনাফ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আলম বলেন, ‘ক্যাম্পে সন্ত্রাসীরা অপরাধের এত শক্ত নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে যে সেখানে সাধারণ লোকজনের চলাফেরা তো দূরে থাকুক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও প্রবেশ করতে বেগ পায়। তার এলাকার ক্যাম্পে একাধিক অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীর আনাগোনা রয়েছে। ফলে স্থানীয় লোকজনের মাঝে মৃত্যুর ভয় কাজ করে সব সময়। তাই এখনই সময় তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া। না হলে গোটা অঞ্চলের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে।’

কক্সবাজার নাগরিক আন্দোলনের মহাসচিব এইচএম নজরুল ইসলাম বলেন, ‘মিয়ানমার থেকেও মাদকের সাথে অস্ত্র আসে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। এই সময়ে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সদস্যরাও সক্রিয় আছে। তারা অস্ত্র দিচ্ছে, কারণ তারা চায় এখানকার পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে। এখানে কথিত আরসাসহ আরো কিছু গ্রুপও সক্রিয় আছে। সব মিলিয়ে এক জটিল পরিস্থিতি।’

কক্সবাজার জেলায় কর্মরত বিজিবি’র এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘সীমান্তে অস্ত্র ও মাদক চালান ঠেকাতে রাত-দিন টহল অব্যাহত রেখেছে বিজিবি। তবে এটা সত্য এখন মাদক পাচার হচ্ছে। পাচারকারীরা অস্ত্র ব্যবহার করছে।’

সম্প্রতি উখিয়া ক্যাম্পে গোলাগুলির ঘটনায় এক বাংলাদেশিসহ চারজন নিহত হওয়ার পর ক্যাম্পটি পরিদর্শনে যান চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন। সেসময় তিনি স্পষ্ট বলে আসেন, ক্যাম্পে নিয়ন্ত্রণ থাকবে শুধু আইন শৃ্ঙ্খলাবাহিনীর। এসময় রোহিঙ্গা দুর্বৃত্তদের প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে অস্ত্র আসে কিনা আমাদের জানা নেই। তবে সংঘর্ষে যারা লিপ্ত, তারা তো সশস্ত্র। তাছাড়া ক্যাম্পের মধ্যে মাদকের কারখানা আছে। এসব ধ্বংস করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করে যাচ্ছে।’ সুত্র: বাংলাট্রিবিউন

পাঠকের মতামত

১৫০ বাংলাদেশিকে ফিরিয়ে ২৮৫ সেনাকে নিয়ে ফিরবে মিয়ানমারের জাহাজ

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ জা‌নি‌য়ে‌ছেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ ও সেনাবাহিনীর ২৮৫ ...

সোনার দামে আবারও রেকর্ড, ভ‌রি‌ ১ লাখ ১৯ হাজার ৬৩৮ টাকা

আবারও সোনার দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। প্রতি ভরিতে ...