প্রকাশিত: ৩০/০৬/২০১৬ ১০:০০ এএম

Jayedul-Ahsan-Pintu20160630033459ট্রগ্রামে পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতু হত্যার তদন্ত নিয়ে পুলিশ যেভাবে জল ঘোলা করছে তাতে আখেরে আম ছালা দুটোই হারাতে হবে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীকে। এখন পর্যন্ত পুলিশের আচরণে যতটুকু বোঝা গেছে তাতে স্ত্রী হত্যায় বাবুল আক্তারের সংশ্লিষ্টতার আভাষ পাওয়া গেছে। আর পুলিশ কি সেটাই লুকাতে চাইছে।  নাকি এর পেছনে আছে আরো বড় কোনো রহস্য?

পুলিশ আরো জানিয়েছে যারা হত্যা করেছে, যারা হত্যার সাথে সরাসরি যুক্ত ছিল যে অস্ত্রটি ব্যবহার করা হয়েছে, যার কাছ থেকে অস্ত্রটি আনা হয়েছিল তার সবই জানা গেছে।  তাহলে বাকি রইলো কী? বাকি রইলো কে এই হত্যার নির্দেশ দিয়েছে আর কে এই হত্যার ছক একেছে। সবকিছুই যখন জানা হয়ে গেছে তাহলে কার নির্দেশে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে সেটা জানা কি খুব কঠিন কাজ? পুলিশের কথাবার্তায় আচরণে এরইমধ্যে সেটির আভাষও পাওয়া গেছে।

আমরা অতীতে দেখেছি সাধারণত কোনো আসামীর কথায় যদি কারো নাম আসে তখন পুলিশ তা ক্রসচেক করার জন্য নাম চলে আসা ব্যক্তিকেও গ্রেপ্তার করে।  তাকে আসামীদের মুখোমুখি করিয়ে দেয় এবং সত্য উদঘাটনের  চেষ্টা করে। এক্ষেত্রে বাবুল আক্তারের নাম চলে আসায় তাকেও আসামীদের মুখোমুখি করা হয়েছে এবং ১৫ ঘন্টা টানা ক্রসিং চলেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশের বড় কর্তা সবাই এটা স্বীকারও করেছেন। আমরা ধরে নিতে পারি যেহেতু বাবুল আক্তার একজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা তাই তাকে শুরুতেই আটক করা হয়নি। কিন্তু আমাদের এটা বুঝতে অসুবিধা হয় না এতো বড় একজন পুলিশ কর্তাকে ১৫ ঘন্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ কোন পর্যায়ে করা হতে পারে।  আবার কথিত খুনিদের একজন বাবুল আক্তারেরই সোর্স হিসেবে কাজ করতেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের বক্তব্য যদি আমরা আমলে নেই তাহলে দেখা যাচ্ছে তিনি বলেছেন, ‘যারা বাবুল আক্তারের স্ত্রীকে হত্যা করেছে, বাবুলকে তাদের মুখোমুখি করা হয়েছিল। তিনি এদের চেনেন কি না বা হত্যার রহস্য কী, তা উদ্ঘাটনেই এই জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। কারা তাঁকে হত্যা করেছে, ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে তা স্পষ্ট হয়েছে। যারা হত্যা করেছে, তাদের অনেককেই আমরা ধরে ফেলেছি। বাকিদের ধরার প্রক্রিয়া চলছে।’

কথিত খুনিদের সাথে বাবুল আক্তারকে মুখোমুখি কেন করা হয়েছিল। বাবুল ওইসব খুনিদের চিনবেন কেন? তিনিতো ঘটনাস্থলে ছিলেন না। তিনিতো হত্যাকারীদের দেখেননি। তাই সনাক্ত করার বিষয়টি অবান্তর। আর যদি সনাক্ত করার বিষয়ই থাকতো সেটি কয়েক মুহূর্তের ব্যাপার। ১৫ ঘন্টা ধরে তা চলতে পারে না।  তাও আবার গভীর রাতে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে একাজটি করা হয়েছে। পুলিশ সুপার মর্যাদার একজন কর্মকর্তা, যিনি সদ্য তার স্ত্রীকে হারিয়েছেন, যিনি মামলার বাদি তাকে কী এমন জরুরি প্রয়োজন ছিল যে গভীর রাতে তলব করে নিতে হবে। তাকে কি রাতটা পার করে পরদিন সকালে ডাকা যেত না।

পুলিশ এসব কিছুই করেছে বিশেষ তাগিদে। কারণ আসামীদের ধরে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়েছে এবং তাদের গ্রেপ্তারের খবর প্রকাশ করা হয়নি। সবই হয়েছে আনঅফিসিয়ালি।  আসামীদের যে আটক করা হয়েছে সেটি প্রকাশ করার আগেই যেন বাবুল আক্তারের মুখোমুখি করা যায়, পুরো ব্যাপারটিতেই তাই তাড়াহুড়ো করা হয়েছে। এই তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে পুলিশ নিজের ফাঁদেই পা দিয়েছে। পুলিশ বলেছে আসামীদের ধরা হয়েছে শনিবার। আর বাবুল আক্তারের সাথে মুখোমুখি করা হয়েছিল শুক্রবার রাতে।

প্রশ্ন উঠতে পারে তদন্তে যদি বাবুল আক্তারের সংশ্লিষ্টতা পাওয়াই যায় তাহলে তাকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না কেন? এর সহজ জবাব হল বাহিনী হিসেবে পুলিশ এই মুহূর্তে এত বড় ধাক্কা নিতে চাইছে না। যে পুলিশ অফিসারকে সৎ এবং সাহসিকতার পুরস্কার দেওয়া হলো রাষ্ট্রীয়ভাবে, বিশেষ করে জঙ্গি ধরায় নাম কুড়িয়েছেন যিনি,  তিনি স্ত্রী হত্যার সাথে জড়িয়ে পড়েছেন এটা জনগণের কাছে পুলিশের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে মনে করছেন কোনো কোনো পুলিশ কর্মকর্তা। তাই তারা পুলিশের ভাবমূর্তি রক্ষার জন্য একটি আপস প্রস্তাব দিয়েছেন বাবুলকে। যা কিনা এরইমধ্যে সংবাদপত্রে এসেছে। সেটি হল হয় তাকে পদত্যাগ করতে হবে নয়তো কারাগারে যেতে হবে।

এই বেআইনি প্রস্তাব কীভাবে দেওয়া হয়? একজন ব্যক্তি যদি কোনো অপরাধ না করে থাকেন তাহলে জেলে যেতে হবে কেন? জেলে যাওয়ার মতো যদি কিছু না করে থাকেন তাহলে তাকে চাকরি ছাড়তে হবে কেন? এসব প্রশ্নের জবাবই বলে দিচ্ছে ওই হত্যাকাণ্ডে ওই ব্যক্তির কোনো না কোনো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে।

এখন আরেকটি প্রশ্ন আসবে ওই পুলিশ কর্মকর্তা কেন স্ত্রীকে  হত্যা করতে যাবেন? এবং তার মতো চৌকস একজন পুলিশ কর্মকর্তা যিনি ৬০টির মতো মামলা নিজেই তদন্ত করেছেন হত্যার পরিকল্পনায় এতো ফাঁকই বা রাখবেন কেন? এ প্রশ্নের জবাব আগামী লেখার জন্য বাকি রাখলাম। তবে পুলিশ কোনো দিক না তাকিয়ে প্রকৃত অপরাধীকে যদি ধরার চেষ্টা করে তিনি পুলিশের যত বড় কর্মকর্তাই হন না কেন তাতে বাহিনী হিসেবে পুলিশেরই ভাবমূর্তি বেড়ে যেত। এত প্রশ্নেরও জন্ম হতো না। তাছাড়া যেভাবে মামলাটি এগুচ্ছে শেষ পর্যন্ত কাউকে ছাড় দেওয়া বা কাউকে ফাঁসানো এখন আর অত সহজ হবে না।

লেখক : সম্পাদক, ডিবিসি নিউজ

সুত্র: জাগোনিউজ

পাঠকের মতামত

নতুন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকানোই যখন বড় চ্যালেঞ্জ!

মিয়ানমারের তিনটি প্রধান এথনিক রেজিস্ট্যান্ট গ্রুপ—তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ), মিয়ানমার ন্যাশনাল এলায়েন্স (এমএমডিএ) এবং ...

একটি ফুল—

একটি ফুল, একটি ফুলের জন্যে কতো নিষ্পাপ গাছ প্রাণ হারালো, এই বর্বর শুকোনের দল বারংবার ...