প্রকাশিত: ১৮/১১/২০১৮ ৯:৫২ পিএম , আপডেট: ১৯/১১/২০১৮ ৭:৫৯ এএম
আলমগীর মাহমুদ

আলমগীর মাহমুদ ::

আলমগীর মাহমুদ

সকাল নয়টায় পরীক্ষা শুরু।কক্স থেকে উখিয়া গিয়ে দায়িত্ববানের কর্ম নির্বাহ করতে হবে আমায় ।গাড়িতে, ট্রেনে ভোরের যাত্রায় টিকেট কাটিয়ে রাতে কি আর ঘুমানো যায়!

এই বুঝি সকাল হয়ে গেল,এই বুঝি সময় গেল, আমারে ফেলে মনে হয় ছেড়ে গেল, ছেড়ে গেল। ঘুম ভাঙে, ঘড়ি দেখে আবার ঘুমানোর চেষ্টা, এমন ধোয়াশায় পরেরদিন ভোরের দেখা ।দায়িত্বের ভার নিয়ে ঘুমানো মানুষেরও একই দশা।গেলরাতে এই দশার স্বাদ আমিও নিয়েছিলাম।

কাকডাকা ভোরে রেডি।জ্যাম, দক্ষিণমুখী পিঠে ব্যাগওয়ালা চাকরিজীবিদের পাল্লায় , গাড়ি ঘোড়া সামাল দিয়েই পৌঁছাতে হবে আমায়।
তারা হুমড়ি খেয়ে গাড়ি উঠে, আমি আবার তাহ পারব না।আমি যে মাষ্টার। কেউ দেখে ফেললে আপণ মনেই চা’র দোকানে ধোঁয়া তুলবে “দেখলেন স্যারদের আক্কেল, বুদ্ধি! এভাবে হুমড়ি খেয়ে উঠতে হয়!পরের গাড়িতে গেলে কি এমন ক্ষতি হতো? আমাদের সমাজে মাষ্টারদের বাস গন্ধ যে বেশী! এসব মাথায় রেখেই চলেছি।

লিংরোড পৌঁছাই। দেখি গাড়ির নেই তেমন দেখা।প্যাসেঞ্জারদের লোকে লোকারণ্য দশা। রোয়াইঙ্গা সেবাজীবিরাই দৃষ্টি কাড়ছিল।পিঠে ব্যাগ কানে লাগানো মোবাইল।রকমারি বোরখার পর্দা।কারো কারো নেকাবে ঢাকা চেহেরা,তবে সবাই মিলে আছে একখানে সবাইর কানে মোবাইল।

এমন অবস্থায় যাহ পাই তাহ নিয়ে সামনে আগানো উত্তম ভেবে সি,এন,জিতে এক সিটের কম্পিটিশনে জিতে যাই।কোর্টবাজার গাড়িটির গন্তব্য।পথে পথে লিংরোডের দৃশ্য দেখে দেখেই কোর্টবাজার।ওখানেও যারা দাঁড়ানো বেশীর ভাগই নারী কর্মী।

কোর্টবাজারে তোতার ঝাঁক ধানক্ষেতে বসার আবহ আবহ।বরাবরের মতই একজায়গায় মিল ।কানে মোবাইল।কেউ আবার সাথে থাকাদের চেয়ে একটু দুরত্বে শব্দদূষন সামলাচ্ছে বেশ পরিকল্পিত ভাবে।

টমটমে সামনের একটা সিটজুটে। গন্তব্য তার উখিয়া। যন্ত্রদানব চলছে… পথে পথে ব্যাগওয়ালা আধুনিক মানুষেরা দাঁড়ানো। মোবাইলের রেহাই নাই।রাজপথেও ওভার ডিউটি।

চলছি আর ভাবছি।আমার শিশু, কিশোরের দেখা কোর্টবাজারকে।ধর্মীয় ছাঁচে গড়া আমার মা, দাদী, নানীদের জীবনীকে।যাহ আধুনিকবাদীদের জবানে সেকালের হয়েই আছে।কথায় কথায় তারা কয় “এখন কি ঐ যুগ আছে?” উল্টো পথে জাহাজ গন্তব্যে পৌঁছায় না।

উখিয়া নেমে এখানেও এইদশা। আমি পূর্বপাশ ঘেষে বন্ধন,প্রদীপসেনের দোকান পেরিয়ে ইনশাল্লাহ হোটেলের সামনে হাঁটছি আর ভাবছি কোথায় চলেছি আমরা? সাগর ইনশাআল্লাহ হোটেলের মালিক। ডাক দিয়ে থামায়। চা’পানে বাধ্য করে। জানতে চায় “চিন্তিত কেন স্যার!

বলতেই সে আমারে কয় ” স্যার প্রত্যেকটা দিন বিদেশী ফ্রাই(সাদা চামড়ার এদের চাটগাঁইয়ারা ডাকে) এই উখিয়া বাজারে হাঁটে। কোনদিন দেখলাম না মোবাইল কানে নিতে।যখন পথ চলে রাস্তার দূরত্ব বজায় রেখে পাশ দিয়ে চলে।

দূ’জন মহিলা বিদেশীকে প্রত্যেকদিন আমি দেখি তাঁরা রাস্তার পশ্চিম পাস দিয়ে চলে বেশির ভাগ।ঐ সাইটটা হাঁটার পথ প্রশস্ত।ঁতারা যখন হাঁটে এদিক ওদিক চোখ ভ্রমণ করাতে দেখিনি।দেখিনি মোবাইল কানে নিতে।ড্রেসে আমাদের সাথে মিশে গেছে।ওরা, রাস্তায় যাদের দেখছেন তাদের বস।সাথে সাথেই সুর বড় করে “উখিয়া শেষ হয়ে গেল স্যার”

খোঁচাইয়ে জানতে চাইলাম দোষ কার? বেশ অভিমানী রাগে”আমার ঘরে প্রধানমন্ত্রী আমি,আমি আমার ছেলের বউরে ৫৬হাজার টাকার চাকরীতে যেতে দেইনি।শর্তদিয়ে বলেছি আমি মাটি কেটে খাওয়াব”এই কথা ও যদি অপছন্দ করছ, চাকরি মন চায়। আজ থেকে আউয়াল আখেরে বিদায়।

গার্ডিয়ানেরা মেয়ের ডলারে মোহাবিষ্ট হয়ে পাঠিয়েছে চাকরীতে।তারা ছয়দিন চাকরি করে শুক্রবারে ট্রেনিং এ যায় কক্সবাজার। ।যে মেয়ে কলেজ থেকে বাড়ি পৌঁছাতে দেরী হলে আপনারে ফোন দিত।সেই মা, বাবার খবরই নাই রাত ৯ টায় তার মেয়ে নূরহোটেলের উপরের তলায় অমূক ভাই,তমূক ভাই বুলায়,আশপাশে মায়মূরুব্বী না দেখার ভাণে রয়।

আস্তে করে বলি চাকরি কি খারাপ? সাথে সাথেই সে আমারে জ্ঞানগর্ভ একখান কথা হুনায় “স্যার মালয়েশিয়ার সমাজে, সিঙ্গাপুরে চাকুরী আমি সাপোর্ট করি।এর বাইরের কোন দেশ কেমন আপনি জানবেন।

এটা উখিয়া। সব কাউয়া যে লাইনে ময়ূর বনতে চায় সে লাইন ময়ূরের নয় ভ্রষ্টের।হারাইয়া মারাইয়া বুঝবো।এখন তাদের কিছু বলাটা হবে বিড়ালের গলায় মুক্তার মালা পরানো।মালাটা পরিয়ে যতই বলবেন ” I MISS YOU” সে শুধুই বলবে ‘মিউ’ ‘মিউ’…

লেখকঃ-বিভাগীয় প্রধান।
সমাজবিজ্ঞান বিভাগ।উখিয়া কলেজ কক্সবাজার।
[email protected]

পাঠকের মতামত

নতুন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকানোই যখন বড় চ্যালেঞ্জ!

মিয়ানমারের তিনটি প্রধান এথনিক রেজিস্ট্যান্ট গ্রুপ—তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ), মিয়ানমার ন্যাশনাল এলায়েন্স (এমএমডিএ) এবং ...

একটি ফুল—

একটি ফুল, একটি ফুলের জন্যে কতো নিষ্পাপ গাছ প্রাণ হারালো, এই বর্বর শুকোনের দল বারংবার ...