প্রকাশিত: ২৪/০১/২০২১ ৯:৪৩ এএম

আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সভ্যতা, সংস্কৃতি, মুক্তিযুদ্ধ, প্রাচীন প্রত্মতাত্তিক নিদর্শন, আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে গিয়ে ইত্যাদি ধারণের ধারাবাহিকতায় এবারের পর্ব ধারণ করা হয়েছে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় অবস্থিত সুনীল সাগরের কোলে গড়ে ওঠা এক অনন্য সুন্দর নান্দনিক স্থাপত্য বাংলাদেশ নেভাল একাডেমিতে।

গত ১৬ জানুয়ারি বঙ্গোপসাগর আর কর্ণফুলীর মোহনায় অবস্থিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত ঐতিহ্যবাহী বাংলাদেশ নেভাল একাডেমির বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্সের সামনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত সংখ্যক দর্শক নিয়ে সুশৃঙ্খলভাবে ধারণ করা হয় এবারের ইত্যাদি।

শিল্পী, কলাকুশলী ও আমন্ত্রিত দর্শকসহ সবার স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা বিবেচনায় রেখে অত্যাবশ্যকীয়ভাবে নিশ্চিত করা হয় সকল দর্শকের মাস্ক ব্যবহার।

বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্সের সঙ্গে সাদৃশ্য রেখে নির্মাণ করা আলোকিত মঞ্চের সামনে আমন্ত্রিত দর্শকরা ইত্যাদির মাস্ক পরে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে মন্ত্রমুগ্ধের মত উপভোগ করেছেন ইত্যাদির নান্দনিক সব পর্ব।

ইত্যাদির এই ধারণ অনুষ্ঠান চলে সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত।

অনুষ্ঠানে গান রয়েছে দুটি। বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে নিয়ে রচিত একটি গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেছেন বাংলাদেশ নৌবাহিনী স্কুল এন্ড কলেজের শতাধিক শিক্ষার্থী। গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন নৌ সদস্য সৌরভ, মেহেদী, পিয়াল ও আনুভা, নৃত্য পরিচালনা করেছেন মনিরুল ইসলাম মুকুল ও মামুন।

মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার গৌরব নিয়ে আর একটি দেশের গান গেয়েছেন চট্টগ্রামেরই সন্তান জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী রবি চৌধুরী, আর নৌ সদস্য লেফটেন্যান্ট সাদিয়া। গানের সঙ্গে যন্ত্রসঙ্গীতে অংশগ্রহণ করেছেন নৌবাহিনীর অর্কেস্ট্রা দল। দুটি গানেরই কথা লিখেছেন গীতিকবি মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান, সুর করেছেন হানিফ সংকেত, সঙ্গীতায়োজন করেছেন মেহেদী।

শেকড়ের সন্ধানে ইত্যাদিতে সবসময়ই দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে প্রচার বিমুখ, জনকল্যাণে নিয়োজিত মানুষদের খুঁজে এনে তুলে ধরা হয়। পাশাপাশি গত প্রায় তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে ইত্যাদি প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে অচেনা-অজানা বিষয় ও তথ্যভিত্তিক শিক্ষামূলক প্রতিবেদন প্রচার করে আসছে।

সেই ধারাবাহিকতায় এবারের ইত্যাদিতে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় অতন্দ্র প্রহরী বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও বাংলাদেশ নেভাল একাডেমির ইতিহাস, ঐতিহ্যর উপর রয়েছে দু’টি তথ্যভিত্তিক প্রতিবেদন। ঝড়ে পড়া শিশুদের নেশা থেকে বাঁচিয়ে জীবনের দিশা দেয়ার জন্য একটি নৈতিক স্কুল খুলেছেন মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক গাজী সালেহ উদ্দিন। তার উপর রয়েছে একটি শিক্ষামূলক প্রতিবেদন।

গুড় একটি অত্যন্ত প্রাচীন মিষ্টি জাতীয় খাদ্য এবং বাঙালি সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এবারে সেই গুড় তৈরি, গুড়ের মান ও বিক্রির উপর রয়েছে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন।

চুয়াডাঙ্গা জেলার ট্রাফিক পুলিশ সার্জেন্ট মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাসের অনন্য পাখি প্রেমের উপর রয়েছে একটি উদ্বুদ্ধকরণ প্রতিবেদন।

পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার হাসান পারভেজ ও তার হাতে লেখা পত্রিকার উপর রয়েছে একটি হৃদয়স্পর্শী প্রতিবেদন। রয়েছে ঝিনাইদহ জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার মহেশ^রচাঁদা গ্রামের হেলালউদ্দিনের বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডের উপর একটি অনুকরণীয় প্রতিবেদন। ইত্যাদিতেই প্রথম শুরু হয় বিদেশি প্রতিবেদন শিরোনামে বিশ্বের বিস্ময়কর বিষয় ও স্থানের উপর প্রতিবেদন। তারই ধারাবাহিকতায় এবারের পর্বে রয়েছে সভ্যতা ও গণতন্ত্রের জন্মভূমি এথেন্সের আগোরার উপর একটি তথ্যভিত্তিক প্রতিবেদন।

দর্শকপর্বের নিয়ম অনুযায়ী ধারণস্থান বাংলাদেশ নেভাল একাডেমি ও বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে ঘিরে করা প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে উপস্থিত দর্শকের মাঝখান থেকে ৪ জন দর্শক নির্বাচন করা হয়। ২য় পর্বে নির্বাচিত দর্শকরা একটি নাট্যাংশে অভিনয় করেন। যা ছিল বেশ উপভোগ্য।

নিয়মিত পর্বসহ এবারও রয়েছে বিভিন্ন সমসাময়িক ঘটনা নিয়ে বেশ কিছু সরস অথচ তীক্ষè নাট্যাংশ। যন্ত্র নামের যন্ত্রণা, বিশ্বাস অবিশ্বাসের দ্বন্দ্ব, টি শার্টে আর্ট, শব্দ বিভ্রাট, পিঠা-পুলির বুলি, অ্যাপ এর গ্যাপ, টিকটক রোধে ডাক্তারের ঠিক টকসহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর রয়েছে বেশ কয়েকটি নাট্যাংশ। বরাবরের মত এবারও ইত্যাদির শিল্প নির্দেশনা ও মঞ্চ পরিকল্পনায় ছিলেন ইত্যাদির নিয়মিত শিল্প নির্দেশক মুকিমুল আনোয়ার মুকিম। আবহ সঙ্গীত করেছেন নাভিদ পারভেজ।

এবারের ইত্যাদিতে উল্লেখযোগ্য শিল্পীরা হলেন-এস এম মহসীন, মাসুম আজিজ, সোলায়মান খোকা, আব্দুল আজিজ, জিয়াউল হাসান কিসলু, শবনম পারভীন, কাজী আসাদ, সুভাশিষ ভৌমিক, আমিন আজাদ, জিল্লুর রহমান, বিলু বড়ুয়া, জাহিদ শিকদার, নিপু, নজরুল ইসলাম, তারেক স্বপন, জামিল হোসেন, সজল, সাবরিনা নিসা, আনোয়ার শাহী, রেহান অবিদ, সাজ্জাদ সাজু, জাহিদ চৌধুরী, হাশিম মাসুদ, মনজুর আলম, ইমিলাসহ আরো অনেকে। পরিচালকের সহকারী হিসাবে ছিলেন যথারীতি রানা ও মামুন।

ইত্যাদির এই পর্বটি আগামী ২৯ জানুয়ারি রাত ৮টা ৪০ মিনিটে একযোগে বিটিভি ও বিটিভি ওয়ার্ল্ডে প্রচারিত হবে। অনুষ্ঠানটি পুনঃপ্রচার করা হবে আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি রাত ০৮টা ৪০ মিনিটে।

ইত্যাদির রচনা, পরিচালনা ও উপস্থাপনা করেছেন হানিফ সংকেত। নির্মাণ করেছে ফাগুন অডিও ভিশন। ইত্যাদি স্পন্সর করেছে যথারীতি কেয়া কসমেটিকস লিমিটেড।

পাঠকের মতামত