
রোহিঙ্গা পরিস্থিতিসহ দুই দেশের সম্পর্ক নিয়ে আলোচনার জন্য মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিশেষ দূত পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিউ তিন আজ মঙ্গলবার ঢাকায় আসছেন। রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর সশস্ত্র বাহিনীর চলমান অভিযানের প্রেক্ষাপটে তিনি মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অং সান সু চির বিশেষ বার্তা নিয়ে বাংলাদেশ সফরে আসছেন বলে জানিয়েছে ইয়াঙ্গুনের একটি কূটনৈতিক সূত্র।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা গতকাল সোমবার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, সু চির বিশেষ দূত কিউ তিন কাল বুধবার প্রথমে পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হক ও পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে আলোচনা করবেন। সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
গত ডিসেম্বরে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকের পরপরই মালয়েশিয়া একই বিষয় নিয়ে ওআইসির (ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা) পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বিশেষ বৈঠকের প্রস্তাব দেয়। অক্টোবরে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সশস্ত্র বাহিনীর দমন-পীড়ন শুরুর পর থেকে আসিয়ানের অন্যতম প্রভাবশালী সদস্যদেশ মালয়েশিয়া রোহিঙ্গাদের অধিকারের ব্যাপারে সোচ্চার হয়। তাঁদের বিষয়ে ১৯ জানুয়ারি কুয়ালালামপুরে প্রস্তাবিত ওআইসির পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে একটি প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার কথা। ওই প্রস্তাবে একটি অভিন্ন রাজনৈতিক অঙ্গীকার তুলে ধরবে ওআইসির সদস্যরা। এই প্রেক্ষাপটে কয়েক সপ্তাহ ধরে সু চি তাঁর বিশেষ দূতকে বাংলাদেশে পাঠানোর প্রস্তাব করেন।
সূত্র বলছে, কিউ তিন ঢাকা সফরের সময় মালয়েশিয়ায় ওআইসির বৈঠকে বাংলাদেশের অবস্থান কী হবে, বোঝার চেষ্টা করবেন। পাশাপাশি রাখাইন পরিস্থিতি নিয়ে নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করে বাংলাদেশের সহযোগিতা চাইতে পারেন। তবে বাংলাদেশের কর্মকর্তারা বলছেন, রোহিঙ্গা বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান স্পষ্ট। রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতির কারণে সেখানকার সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে। গত অক্টোবরে সশস্ত্র বাহিনীর অভিযান শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ৫০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢোকে, যা গ্রহণযোগ্য নয়। এই সমস্যার উৎস মিয়ানমারে, তাদেরই এ সমস্যার সমাধান করতে হবে।
মিয়ানমারে ২০১৫ সালে গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার পালাবদল প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে বাংলাদেশকে আশাবাদী করে তুলেছিল। বিশেষ করে আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি করে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে বাংলাদেশ সচেষ্ট রয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত জুনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বিশেষ দূত হিসেবে পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হককে অং সান সু চির কাছে পাঠান। সু চির কাছে পাঠানো বার্তায় সম্পর্ক জোরদারে অঙ্গীকারের কথা জানান শেখ হাসিনা।
সু চি যখন তাঁর বিশেষ দূতকে ঢাকায় পাঠাচ্ছেন তখন রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধানে মিয়ানমার সরকার ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে আসিয়ানের অন্যতম সদস্য সিঙ্গাপুর। দেশটির দ্য স্ট্রেইট টাইমস-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল পার্লামেন্টে প্রশ্নোত্তরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভিভিয়ান বালাকৃষ্ণান এ আহ্বান জানান। রাখাইনে সশস্ত্র বাহিনীর অভিযানের পর সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের দেশ ছাড়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মিয়ানমার সরকার এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়সহ সব পক্ষকে রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যার দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের জন্য একসঙ্গে কাজ করতে সিঙ্গাপুর উৎসাহিত করে।
এক সপ্তাহে ঢুকেছে ২২ হাজার রোহিঙ্গা
জাতিসংঘ জানিয়েছে, রাখাইন রাজ্য থেকে গত এক সপ্তাহে ২২ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকেছে। সর্বশেষ গত ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত অন্তত ৬৫ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢোকে বলে তারা হিসাব পেয়েছে।জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সমন্বয়বিষয়ক সংস্থা (ওসিএইচএ) গতকাল সোমবার এ তথ্য প্রকাশ করেছে।
পাঠকের মতামত