
উখিয়া নিউজ ডেস্ক::
সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের শত শত সশস্ত্র সেনা। এপারে সতর্ক অবস্থানে বিজিবি। দু’দেশের মধ্যে বয়ে যাওয়া তমব্রু সীমান্ত খালের ওপারে ছয় মাস ধরে অনাহারে-অর্ধাহারে ঝুপড়িতে দিন যাপন করছেন ছয় হাজার রোহিঙ্গা। নোবেল বিজয়ী দুই নারী মঙ্গলবার তাদের দেখতে এলে এখানে তৈরি হয় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের। দুই নোবেলজয়ী নারীর মমতাভরা আলিঙ্গনে বুকফাটা কান্নায় ভেঙে পড়েন রোহিঙ্গারা। বহু চেষ্টা করেও তাদের কান্না থামানো যাচ্ছিল না। নোবেলজয়ীরাও এ সময় কেঁদেছেন।
শান্তিতে নোবেলজয়ী ইয়েমেনের তাওয়াক্কল কারমান ও উত্তর আয়ারল্যান্ডের মেইরিড ম্যাগুয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের তৃতীয় ও শেষ দিনে মঙ্গলবার তমব্রু কোনারপাড়া শূন্যরেখা (নো ম্যানস ল্যান্ডে) পরিদর্শনে আসেন। এ সময় তারা রোহিঙ্গা নারী ও শিশুদের বুকে টেনে নিয়ে বলেন, ‘তোমাদের কোনো ভয় নেই। তোমাদের সহায়-সম্পত্তি, ভিটেমাটিসহ নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে। এ ব্যাপারে বুধবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের বৈঠক হবে।’
এ সময় নোবেল বিজয়ীরা বলেন, মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি শান্তিতে নোবেল পেলেও যে অমানবিক কাজ করেছেন, এ জন্য তাকে ও তার জেনারেলদের আন্তর্জাতিক আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। প্রয়োজনে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের সহায়তা নেওয়া হবে।
কারমান ও ম্যাগুয়ার পরে মিয়ানমার সেনার হাতে ধর্ষিত, এবং স্বামী-সন্তান ও স্বজনহারা সাত রোহিঙ্গা নারীর সঙ্গে একটি পলিথিনের তাঁবুতে আধা ঘণ্টা কথা বলেন। তারা তাঁবু থেকে বেরিয়ে গেলে এক নির্যাতিত নারী সাংবাদিককের জানান, নোবেল বিজয়ীরা জানতে চেয়েছেন মিয়ানমার সেনারা তাদের ওপর কী ধরনের নির্যাতন চালিয়েছে? নির্যাতনকালে সেনারা কী বলেছে? এ সময় নির্যাতনের বর্ণনা শুনে নোবেল বিজয়ীরা তাদের জড়িয়ে ধরে কেঁদেছেন। তারা বলেছেন, এ ঘটনায় সু চি ও মিয়ানমার সেনার বিরুদ্ধে তারা আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার চাইবেন। নোবেল বিজয়ীরা সেখানে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত না যাওয়া পর্যন্ত নিশ্চিন্তে থাকার পরামর্শ দেন।
শূন্যরেখার বস্তির নেতা দিল মোহাম্মদ ও মৌলভি আরফাত জানান, নোবেল বিজয়ীরা তাদের কাছে জানতে চান যে মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে তারা কতটুকু আশাবাদী। জবাবে বস্তির নেতারা বলেছেন, মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার আগে তাদের নিশ্চয়তা দিতে হবে যে ভবিষ্যতে তাদের ওপর আর এ ধরনের জুলুম-নির্যাতন, নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ ও বসতবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটবে না। এ ছাড়া তাদের মৌলিক অধিকার দিতে হবে, যাতে তার মিয়ানমারের যে কোনো জায়গায় ঘুরতে পারে। তাদের ছেলেমেয়েরা পড়ালেখা করতে পারে। এসব দাবি মেনে নেওয়া হলে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যেতে রাজি। রাখাইনে রোহিঙ্গাদের দেখাশোনা করার জন্য জাতিসংঘের প্রতিনিধি দলের উপস্থিতির দাবি করেছেন তারা।
নোবেলজয়ী তিন নারী এর আগে উখিয়ার কুতুপালং, বালুখালী ও থাইংখালীর তাজনিমারখোলা রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন।
পাঠকের মতামত