
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সাবেক সচিব শফিউল আলমের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে নিয়ম বহির্ভূতভাবে কক্সবাজারে ১৫৫ দশমিক ৭০ একর বনভূমি বরাদ্দ নিয়ে শহীদ এ টি এম জাফর আলম মাল্টিডিসিপ্লিন একাডেমি নির্মাণের অভিযোগে এ অনুসন্ধান করা হচ্ছে।
জাফর আলম (প্রয়াত) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সাবেক সচিব শফিউল আলমের ভাই। ২০১৬ সালে নিয়ম বহির্ভূতভাবে এ বনভূমি দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্ত দিয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকার।
অনুসন্ধানের বিষয়টি নিশ্চিত করে দুদকের কক্সবাজার সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক মামুনুর রশিদ সমকালকে বলেন, অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সাবেক সচিব শফিউল আলমের বিষয়ে তথ্য চেয়ে ইতোমধ্যে সরকারি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম সমকালকে বলেন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সাবেক সচিব শফিউল আলম কর্তৃক বনভূমি দখলের বিষয়ে দুদকের পক্ষ থেকে একটি চিঠি পেয়েছি। তাদের চাহিদা অনুযায়ী তথ্যগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে সরবরাহ করা হবে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালে রামু উপজেলার খুনিয়াপালং মৌজায় ১৫৫ দশমিক ৭০ একর জমি শহীদ এ টি এম জাফর আলম ক্যাডেট কলেজের নামে দীর্ঘমেয়াদী বন্দোবস্ত দেওয়া হয়। এ জমি ৭৭ লাখ ৭ হাজার ১৫০ টাকা মূল্য নির্ধারণ করে ৭ লাখ ৭০ হাজার ৭১৫ টাকা মূল্যে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়। পরে শহীদ এ টি এম জাফর আলম ক্যাডেট কলেজের নাম পরিবর্তন করে শহীদ এ টি এম জাফর আলম মাল্টিডিসিপ্লিন একাডেমি নাম দেওয়া হয়।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দপত্রে দেশের অন্যতম জীববৈচিত্রসমৃদ্ধ বনভূমিকে অকৃষি খাসজমি হিসেবে দেখানো হয়েছে।
এতে বন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দিয়ে আপত্তি জানিয়েছিল বন বিভাগ। এ ছাড়া খুনিয়াপালং মৌজায় বন্দোবস্ত দেওয়া ১৫৫ দশমিক ৭০ একর এ জমি গেজেটভুক্ত রক্ষিত বনভূমি।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, শহীদ এ টি এম জাফর আলম মাল্টিডিসিপ্লিন একাডেমির নামে ১৫৫ দশমিক ৭০ একর বনভূমি নিয়মবহির্ভূতভাবে দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্ত দিয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকার। পরে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দ্বায়িত্ব নেওয়ার পর এ বন্দোবস্ত বাতিলের অনুরোধ জানিয়ে গত ২১ আগস্ট পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ভূমি মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়।
চিঠিতে বলা হয়, বনভূমি রক্ষার মাধ্যমে ওই অঞ্চলের প্রতিবেশ ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখতে এ বন্দোবস্ত বাতিল করা প্রয়োজন। পরে গত ১০ ডিসেম্বর ভূমি মন্ত্রণালয় শহীদ এ টি এম জাফর আলম ক্যাডেট কলেজের অনুকূলে দেওয়া ১৫৫ দশমিক ৭০ একর ভূমির বন্দোবস্ত বাতিল করে।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মাসুদ কামাল স্বাক্ষরিত এক চিঠির মাধ্যমে এ বন্দোবস্ত বাতিল করা হয়। চিঠিতে বলা হয়েছে, বন্দোবস্তকৃত জমিটি গেজেটভুক্ত বনভূমি হওয়ায় এ বন্দোবস্ত বাতিল করা হয়েছে।
বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ১৫৫ দশমিক ৭০ একর জমি ইজারা নিয়ে ওই জায়গাতে থাকা লাখ লাখ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সাবেক সচিব শফিউল আলমের পরিবারের সদস্যরা রাতারাতি কেটে বিক্রি করে দিয়েছে। সুত্র, সমকাল

পাঠকের মতামত