প্রকাশিত: ২৬/০৭/২০১৭ ৯:২৯ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ৪:১৩ পিএম
ফাইল ছবি

জসিম মাহমুদ :
ভাঙা বাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশ করার কারণে টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপের মাঝেরপাড়া, পশ্চিম পাড়ার গ্রামের গত কয়েএক মাসে দুটি মসজিদসহ প্রায় ২০০বসতবাড়ি সাগরে বিলীন হয়েছে।
গত পাঁচ বছরের শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিমপাড়া ও ঘোলাপাড়া, জালিয়াপাড়া, মাঝেরপাড়ার গ্রামের একাংশ বিলিন হয়ে প্রায় হাজারখানেক পরিবার বসতবাড়ি হারিয়ে অন্যত্রে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে।
জেলা পরিষদের সদস্য মো. শফিক মিয়া বলেন, একেরপর এক গ্রাম সাগরের জোয়ারের পানিতে বিলিন ৭০হাজার মানুষ এখন গৃহহীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। প্রতিবর্ষা মৌসুমের পাশাপাশি অমবস্যা, পূর্ণিমা ও ঘুর্ণিঝড়ে জোয়ারের পানিতে ভাঙছে বাড়িঘর। প্রায় দুই কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভেঙে শাহপরীর দ্বীপের সঙ্গে টেকনাফের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। এতে ৪০ হাজার মানুষকে নৌকাযোগে যাতায়াত করতে হচ্ছে। এতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সাবরাং ইউনিয়নের ১৮ গ্রামের মানুষকে।
শাহপরীর দ্বীপ রক্ষা কমিটির সভাপতি মাষ্টার জাহিদ হোসেন ও সাধারণ স¤পাদক এম এ হাশেম বলেন, শাহপরীর দ্বীপে প্রায় ৪০হাজার মানুষের বসবাস। এলাকার নামের সঙ্গে দ্বীপ শব্দটি থাকলেও এটি আসলে দ্বীপ নয়। তবে পাঁচ বছর ধরে এলাকার লোকজন বসবাস করছেন দ্বীপের বাসিন্দাদের মতোই। ভেঙে যাওয়া বাঁধ জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগের মাধ্যমে মেরামত করা না হলে শাহপরীর দ্বীপের ৪০হাজার এবং সাবরাংয়ের আরও ৩০হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, ২০১২ সালের ২২ জুলাই জোয়ারের তোড়ে শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিমপাড়া এলাকার বাঁধের আধা কিলোমিটার অংশ বিধ্বস্ত হয়। সে সময় টেকনাফ-শাহপরীর দ্বীপ সড়কের প্রায় পাঁচ কিলোমিটার অংশ বিলীন হয়ে যায়। এ কারণে পাঁচ বছর ধরে স্থানীয় বাসিন্দাদের উপজেলা সদরে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে নৌকা ও ¯িপডবোট। ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর আঘাতে শাহপরীর দ্বীপের ঘোলাপাড়া ও দক্ষিণপাড়ায় বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। এরপর গত ২৯ মে ঘুর্ণিঝড় মোরার আঘাতে নাফনদী ৬৮ নম্বর ফোল্ডারের ৩ নং ¯¬ইস গেইট সাবরাং ও বঙ্গোপসাগরের শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিমপাড়া ও দক্ষিণপাড়া খোলা দুটি ভাঙা অংশ দিয়ে সাগর ও নাফনদী জোয়ারের লোনা পানি ঢুকে ১৮ গ্রামের বসতবাড়ি প¬াবিত হচ্ছে। গ্রাম হলো-সাবরাং ইউনিয়নের মগপাড়া, পানছড়িপাড়া, মন্ডলপাড়া, লেজিরপাড়া, আছারবনিয়া, ডেগিল¬ার বিল, ঝিনাপাড়া, হারিয়াখালী, লাফারঘোনা, কাটাবনিয়া, কচুবনিয়া, শাহপরীর দ্বীপের মাঝেরপাড়া, দক্ষিণপাড়া, পশ্চিমপাড়া, ডাঙ্গরপাড়া, জালিয়াপাড়া, উত্তরপাড়া, ক্যা¤পপাড়ার গ্রাম প¬াবিত হয়ে অসংখ্য ঘরবাড়ি, সবজি খেত, সুপার বাগান ও চিংড়িঘের পানিতে তলিয়ে গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, বসতঘরে পানি জমে থাকায় ঘরে ঘরে শিশুরা সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপে¬ক্সের আবাসিক চিকিৎসক এনামূল হক বলেন, ‘প্লাবিত এলাকার শিশুরা সর্দি, কাশি, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। অনেক শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। হাসপাতালে আনার পথে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত কয়েকটি শিশুর মৃত্যুও হয়েছে।’
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরের শাহপরীর দ্বীপ গ্রামে সরেজমিনে দেখা যায়, অনেক বসতঘর কোমড় সমান জোয়ারের পানিতে ডুবে আছে। বেশির ভাগ চুলা ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। কোনো ঘরে কোমরসমান, কোনো ঘরে হাঁটুসমান পানি। এর মধ্যে মাচা বেঁধে কোনো রকমে বসবাস করছেন মানুষ।
জেলে নজির আহমদ ও অছিউর রহমান বলেন, পাঁচ বছরেও ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ সংস্কার করা হয়নি। বেড়িবাঁধ সংস্কারের জন্য আরও কত বছর অপেক্ষা করতে হবে, কে জানে ?
মাঝেরপাড়ার গৃহবধূ ফেরদৌস আরা বেগম বলেন, জোয়ারের পানি ডুকে নলকূপের পানি লবণাক্ত হয়ে গেছে। রান্নাবান্না করতে কষ্ট হচ্ছে। শত ভোগান্তি হলেও বাপ-দাদার বসতভিটা ফেলে অন্যত্রে চলে যেতে পারছেন না।
তাঁরা বলেন,‘পাঁচ বছর ধরে পানি নিয়ে যুদ্ধ করছি। এলাকার অনেক বসত বাড়ি সাগরের বিলিন হয়ে গেছে। এখন আমাদের বসতঘরে পানিতে প্লাবিত হচ্ছে। ভোগান্তি কি ? সেটা ভোক্তভোগি ছাড়া আর কেহ বুঝতে পারে না। মন্ত্রী-এমপিরা তো এসি রুমে ঘুমান। আমাদের মতো মানুষের খবর কি তাঁরা রাখেন। তাই বলি, ‘মাত্র একটি দিন আমাদের সঙ্গে কাটান, এরপর বুঝা যাবে কত চালে কত ধান ? ’
প্রভাবশালী ব্যক্তি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, গত জুন মাসের সরকারের প্রভাবশালী তিনজন মন্ত্রীসহ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা এসেছিলেন। সে সময় সেতু মন্ত্রী ওবায়েদুল কাদের, পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল হক মাহমুদ, ত্রাণ মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রহমানসহ অনেকে শাহপরীর ঘুরে গেছেন। তখন পানি সম্পদ মন্ত্রী বলেছিলেন ‘বর্ষার আগেই জোয়ারের পানি ঢুকা বন্ধ করা হবে।’ কিন্তু মন্ত্রীর কথার কোন ফল পাওয়া যায়নি বরং অদ্যবধি জোয়ারের পানিতে ডুবছে শাহপরীর দ্বীপের মানুষ। ’
সাবরাং ইউপির চেয়ারম্যান নূর হোসেন বলেন, ১৮টি গ্রামের প্রায় ৪০ হাজার মানুষ পাঁচটি বছর ধরে কষ্টে জীবন-যাপন করছে। বর্ষার সময় মানুষের কষ্ট অনেক বেড়ে যায়।
তিনি বলেন, গত এক মাসেই দুটি মসজিদসহ প্রায় ২০০বসতবাড়ি সাগরে বিলীন হয়েছে। এলাকার মানুষের কষ্টের কথা বিবেচনা করে দ্রুত বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হোক।
সাংসদ আবদুর রহমান বদি বলেন, এলাকাবাসীর কথা বিবেচনা করে সংশ্লিস্ট মন্ত্রণালয়ে দ্রুত বাধ নিমার্ন করার জন্য খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।
পাউবোর কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী সাবিবুর রহমান বলেন, শাহপরীর দ্বীপের ২ দশমিক ৬৪৫ কিলোমিটার বাঁধ সাগরে স¤পূর্ণ বিলীন হয়ে গেছে। ১০৬ কোটি ১৬ লাখ টাকা ব্যয়ে শাহপরীর দ্বীপের বেড়িবাঁধ নিমার্ণ প্রকল্প অনুমোদন করা হলেও শর্ত ছিল, ওই খোলা এলাকায় উপকূলে গাছ লাগাতে হবে। সে অনুযায়ী ছয় লাখের মতো গাছ লাগিয়েছে পাউবো। বাংলাদেশ নৌবাহিনী পরিচালিত নারায়ণগঞ্জের ডকইয়ার্ড অব ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেডের মাধ্যমে এ বেড়িবাঁধটির নিমার্ণ দ্রুত শুরু করা হবে।

পাঠকের মতামত

খেলাভিত্তিক শিক্ষায় ব্র্যাকের তথ্য বিনিময় অনুষ্ঠান

শিশুদের খেলাভিত্তিক শেখা, অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা ও মনোসামাজিক বিকাশ নিশ্চিতে ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হলো ...

১২ ফেব্রুয়ারি ভোট শেষ না হওয়া পর্যন্ত অনুমতি ছাড়া ওয়াজ মাহফিল নিষিদ্ধ

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ধর্মীয় প্রচার কার্যক্রমে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। ...

জামিন বাতিল, মহেশখালীর তোফায়েল হত্যা মামলায় ৭ জন কারাগারে

কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়ার মোহাম্মদ শাহ ঘোনা গ্রামের বাসিন্দা জুলাই অভ্যুথানে নিহত শহীদ তানভীর ছিদ্দিকীর ...

ফেসবুক পোস্ট দিয়ে ছাত্রশক্তি নেত্রীর পদত্যাগ‘জুলাইয়ে থানার বাইক চোরের কাছে অনেক সময় হেরে যাই’

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সহযোগী সংগঠন জাতীয় ছাত্রশক্তি কক্সবাজার জেলা শাখার সদ্য ঘোষিত নতুন কমিটি’র ...