
উখিয়া নিউজ ডেস্ক::
বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের মায়ানমারে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনার। জেনেভায় সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে দেয়া এক বিবৃতিতে এ কথা বলেছেন ইউএনএইচসিআর মুখপাত্র অ্যাড্রিয়ান এডওয়ার্ডস।
তিনি বলেন, ২৩ নভেম্বর মায়ানমার ও বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছাকৃত পুনর্বাসনের বিষয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির বিষয়ে ইউএনএইচসিআর ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রাথমিক আলোচনা এখনো হয় নি তবে, আমরা সেদিকে এগুচ্ছি। আমরা পূর্বেই বলেছি, সব শরণার্থীরই মায়ানমারে ফিরে যাওয়ার অধিকার রয়েছে। তবে এটা অবশ্যই স্বেচ্ছাকৃত হতে হবে।
এডওয়ার্ডস বলেন, ইউএনএইচসিআর বাংলাদেশ ও মায়ানমারের মধ্যকার চুক্তির সঙ্গে জড়িত ছিলোনা। তবে নথিপত্রে এর কথা উল্লেখিত রয়েছে। এইখানে প্রস্তুতি বলতে চুক্তি স্বাক্ষরের তিন সপ্তাহের মধ্যে (১৪ ডিসেম্বরের আগে) একটি জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ তৈরি করার দিকে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। আমরা এই দলের অংশ হয়ে সংশ্লিষ্ট দুই সরকারকে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণের বিষয়ে সাহায্য করতে প্রস্তুত- যে প্রস্তুতি গ্রহণের মাধ্যমে শরণার্থীরা সঠিকভাবে ফেরত যেতে পারবে- স্বাধীনভাবে, নিরাপদভাবে ও সম্মানের সঙ্গে। আমাদের মতে, এত একটি ত্রিদলীয় স্বেচ্ছাকৃত পুনর্বাসন চুক্তি থাকা উচিত।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বল প্রয়োগ নয়: জাতিসংঘ
বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের নিরাপদে নিজ দেশ মায়ানমারে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে কোনো ধরনের বল প্রয়োগ না করার বিষয়ে জোর দিয়েছে জাতিসংঘ। সংস্থাটি বলছে, রাখাইনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় ফেরত যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফানি ডুজারিক এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন।
রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নিজ দেশে তাদের (রোহিঙ্গা) ফেরত যাওয়া উচিত। যখনই ফেরত যাওয়াকে নিরাপদ মনে হয় তখনই রোহিঙ্গাদের কোনো ধরনের বল প্রয়োগ ছাড়াই নিজেদের বাড়িতে ফিরতে দেয়া উচিত।
স্টিফানি বলেন, ‘আমি মনে করি বাংলাদেশ ও মায়ানমার দুই দেশেই রোহিঙ্গাদের দুর্দশাপূর্ণ অবস্থা নিয়ে জাতিসংঘের মহাসচিব অত্যন্ত সরব ভূমিকা পালন করছেন।’
এর আগে ওইদিনই জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের একটি বিশেষ সেশন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সংস্থাটির প্রধান জেইদ রাদ আল হুসেনও ‘তাড়াহুড়া করে’ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
গত ২৫ আগস্ট রাখাইনে পুলিশ ও দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর তল্লাশি চৌকিতে হামলার ঘটনায় সেখানে ‘জাতিগত নিধন’ শুরু করা হয়।
জাতিসংঘ বলছে, নির্যাতনে রোহিঙ্গা নারী-শিশুকে হত্যা করা হয়েছে। নির্যাতন-নিপীড়ন ছাড়াও ধর্ষণ ও বাড়ি-ঘর পুড়িয়ে দেয়ার মতো ঘটনাও ঘটিয়েছে মায়ানমার সেনাবাহিনী। এ নিধনযজ্ঞে তাদের সহযোগিতা করছে স্থানীয় মগরা।
এরপর থেকেই বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ঢল নামে। নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে গত সাড়ে তিন মাসে এ পর্যন্ত ৬ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
এখনো প্রতিদিনই কোনো না কোনা রোহিঙ্গা নর-নারী নাফ নদী পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে বলে জানা গেছে।
পাঠকের মতামত