
রোহিঙ্গা পরিস্থিতি দেখতে এবার বাংলাদেশ সফরে আসছেন ইউএনএইচসিআর প্রধান ফিলিপ গান্ধী। জুলাইতে তার সফরটি হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনারের (ইউএনএইচসিআর) বাংলাদেশ সফর প্রস্তুতির বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। জানিয়েছে, সফরকালে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াও তাদের বসবাসের স্থান (ক্যাম্প) পরিদর্শনে কক্সবাজার যাবেন তিনি। ফিলিপ গান্ধী ইউএনএইচসিআর-এর ১১তম হাইকমিশনার হিসেবে ২০১৬ সালের ১লা জানুয়ারিতে নিয়োগ পান। তার আগে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ৫ বছরের জন্য তাকে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত করা হয়। ১৯৫৭ সালে ইতালীর মিলানে জন্ম নেয়া ফিলিপ গান্ধী বিশ্বের দেশে দেশে শরণার্থী এবং মানবিক সহায়তা নিয়ে ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে কাজ করছেন। আফ্রিকা থেকে এশিয়া, মধ্য এশিয়া থেকে জেনেভা- দূতিয়ালী মিশনে তিনি ঘুরে বেরিয়েছেন প্রায় সারা দুনিয়ায়।উখিয়া নিউজ ডটকম।হাইকমিশনারের দায়িত্বে আসার আগে ফিলিস্তিনের শরণার্থীদের জন্য গঠিত জাতিসংঘের রিলিফ অ্যান্ড ওয়ার্ক এজেন্সিতে কাজ করেছেন তিনি। সেখানে কমিশনার-জেনারেল হিসেবে সফলতার ছাপ ছিল তার। আরো আগে তিনি আফগানিস্তানে জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত হিসেবে দূতিয়ালি করেছেন। বিশ্বের বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায়ও কাজ করেছেন মডার্ন হিস্ট্রি এবং দর্শন শাস্ত্রে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনকারী ওই দূত। প্রায় ৩ দশক ধরে প্রতিবেশী মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে প্রাণে বাঁচতে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আসা ৩৩ হাজার নিবন্ধিত রোহিঙ্গা এবং প্রায় ৩ লাখ অনিবন্ধিত মিয়ানমার নাগরিককে আশ্রয়সহ মানবিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে জনবহুল বাংলাদেশ। রোহিঙ্গা সংকটের একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানে দ্বিপক্ষীয় বা বহুপক্ষীয় যে কোনো উদ্যোগে ঢাকা প্রস্তুত রয়েছে। এ নিয়ে মিয়ানমারের বর্তমান গণতান্ত্রিক নেতৃত্বের সঙ্গে ইতিবাচক আলোচনার ধারাবাহিক উদ্যোগের পাশাপাশি বিষয়টি বিশ্ব সমপ্রদায়ের নজরে রেখে মিয়ানমারের ওপর চাপ বাড়ানোর চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এ নিয়ে আলোচনায় গত মাসে চীনের বিশেষ দূত ঢাকা সফর করেছেন। দ্বিপক্ষীয়ভাবে বিষয়টি মিয়ারমারের সঙ্গে আলোচনায় নিষ্পত্তিতে উৎসাহী বেইজিং। মিয়ানমারকেও চীনের তরফে একই বার্তা দেয়া হয়েছে বলে জানিয়ে গেছেন বেইজিংয়ের ওই দূত। অবশ্য ঢাকার তরফে সংকটটির সমাধানে মিয়ানমারের আন্তরিকতা নিয়ে সন্দেহ এবং সংশয় থাকার পেছনে যেসব অকাট্য যুক্তি রয়েছে তা বেইজিংয়ের বিবেচনায় তুলে ধরা হয়েছে। রোহিঙ্গা পরিস্থিতি দেখতে চলতি বছরের শুরুতে জাতিসংঘ দলও বাংলাদেশ সফর করেছে। জানুয়ারিতে আসা ওই প্রতিনিধি দলটি কক্সবাজার ও এর আশপাশের এলাকায় থাকা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে তাদের মুখ থেকে রাখাইন পরিস্থিতি বিশেষত তাদের ওপর জাতিগতভাবে নির্মূলে অত্যাচারের রোমহর্ষক বর্ণনা শুনে গেছে। রাখাইনের উন্নয়নে মিয়ানমারের বর্তমান কার্যকর নেতা, স্টেট কাউন্সেলর অং সান সূচির উদ্যোগে গঠিত জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক কমিশনের সদস্যরাও বাংলাদেশ ঘুরে গেছেন। এ নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াও রোহিঙ্গা পরিস্থিতি সরজমিন দেখেছেন তারা। বিশ্ব সমপ্রদায়ের চাপে মিয়ানমারের একজন প্রতিনিধিও রোহিঙ্গা নিয়ে ঢাকার সঙ্গে ‘লোক দেখানো’ আলোচনা করে গেছেন। রোহিঙ্গাদের রক্ষা বিশেষত শরণার্থী হয়ে পড়ে রোহিঙ্গাদের নিজ ভূমে পুনর্বাসন এবং তাদের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেয়াসহ মর্যাদার সঙ্গে বসবাস নিশ্চিত করতে যে কূটনৈতিক তৎপরতা চলছে তাতে বিশ্ব সমপ্রদায়ের সমর্থন আদায়ে ঢাকা সচেষ্ট হয়েছে। উল্লেখ্য, গতকাল জাতিসংঘের অধীন বিভিন্ন সংস্থার আবাসিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেছেন পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক। সন্ধ্যার অল্প আগে শেষ হওয়া ওই বৈঠকে ইউএনএইচসিআর-এর প্রধানের ঢাকা সফরসহ উদ্বাস্তু, শরণার্থী এবং রোহিঙ্গা বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয় বলে জানা গেছে।
পাঠকের মতামত